ঢাকাই সিনেমার নন্দিত নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি 'নিরাপদ সড়ক চাই'র প্রতিষ্ঠাতাও। নিরাপদ সড়কের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সড়কের বিভিন্ন সমস্যা ও পরিবহণ মালিকদের অরাজকতা নিয়েও কথা বলেছেন বহুবার। এ কারণে বিগত সরকারের আমলে নানা ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে ইলিয়াস কাঞ্চনকে। বিশেষ করে সাবেক নৌপরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে একাধিকবার বিবাদে জড়িয়েছিলেন তিনি। এই শাজাহান খান এতটাই হিংস্র ও বীভৎস যে, একবার এক টক শো'তে বিএনপির ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। আর ইলিয়াস কাঞ্চন শাজাহান খানের সঙ্গে বিবাদের জেরে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছিলেন। মঙ্গলবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় কথা বলেছেন এই নায়ক। যেখানে কাঞ্চন সরাসরি দাবি করেছেন, তিনি কখনোই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিরাপদ আন্দোলনে সরব। সড়কের বিভিন্ন সমস্যা ও পরিবহণ মালিকদের বিভিন্ন অরাজকতা নিয়ে কথা বলে একাধিকবার সদ্য পতিত সরকারদলীয় লোকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে কখনো পা বাড়াননি এই নায়ক। তবে ইদানীং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়েছে। দেশবাসীর কাছে এ অপপ্রচারের বিচার চেয়েছেন তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চনের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে নেওয়া তার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ সরকারিভাবে 'জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস' পালিত হচ্ছে। কিন্তু একটি মহল বিষয়টি অস্বীকার করছে। তিনি বলেন, '২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন, তারও আগে থেকে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, তাদের দাবির ভিত্তিতেই নাকি জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। এর আগে নাকি নিরাপদ সড়কের জন্য মানুষের কোনো আকাঙ্ক্ষা ছিল না।' ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করতে গিয়ে আমাকে শাজাহান খান গংদের মতো মাফিয়াচক্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমার ছবি টাঙিয়ে তারা জুতা নিক্ষেপ করেছেন। আমার ছবিতে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছেন।' মঙ্গলবার বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় এর বিচার চান তিনি। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একদল মানুষ বলছে আমি নাকি আওয়ামী লীগের লোক। এটা সমন্বয়কদের কাছে তারা বলেছে। এমনটাও বলেছে, আমি নাকি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। তারা বলে আমি আওয়ামী লীগের লোক, এই দলের লোক, ওমুক পার্টির লোক। দেশবাসী জানে আমি কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হইনি। অভিনেতা বলেন, এবার যেভাবে তারা আমাকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই আমি আওয়ামী লীগের কেউ হয়ে থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করুন। আপনাদের ক্ষমতা দেখান। তবুও অপপ্রচার চালাবেন না। আমি দেশবাসীর কাছে এই অপপ্রচারের বিচার চাই। শুধু আওয়ামী লীগকে জড়িয়েই এই অপপ্রচার নয়, তাকে নিয়ে জামায়াত-শিবিরের কালচারাল নেটওয়ার্কের ফাঁদে জড়িয়েছেন বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। কিন্তু পরে সবই বানোয়াট বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে নিয়ে যেসব কথাবার্তা শুরু হয়েছে, সেটা ভয়াবহ। আমরা যারা অনেক রিস্ক নিয়ে, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম, এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, এই আন্দোলন যদি ব্যর্থ হয়, তারা যদি আবার ফেরত আসে, তাহলে আমাদের অবস্থা কী হবে? আমাদের কী পরিণতি হবে, এটা কিন্তু আমরা কেউ ভেবে দেখছি না। এগুলো সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই লাইভে এসে কথাগুলো বলছি আমি। উলেস্নখ্য, এবার কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে রাজপথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। নিজের নিসচা'র লোক নিয়ে আলাদাভাবে বিক্ষোভ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখা গেছে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে। ইলিয়াস কাঞ্চন বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির দু'বছর মেয়াদে নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনিহা দেখান।