শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

মুখ খুললেন পর্দার হাসিনা

বিনোদন রিপোর্ট
  ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
নুসরাত ফারিয়া

ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। অভিনয় দক্ষতায় নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে জায়গা তৈরি করেছেন পশ্চিমবঙ্গেও। শুধু অভিনয় নয়, গানেও বেশ পারদর্শী তিনি। গেল বছর মুক্তি পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক 'মুজিব : একটি জাতির রূপকার'। বায়োপিক মানেই ব্যক্তির জীবনীচিত্র। যাতে জীবনের ভালো-মন্দ সব দেখানো হয়। এতে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারিয়া। সিনেমাটি মুক্তি পেলে মাসের মাস প্রেক্ষাগৃহে চালানো হয়। উপরের নির্দেশ, তাই প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের গচ্চা দিয়েই ছবিটি চালাতে হয়। মনে-প্রাণে শেখ হাসিনাকে ধারণ করা অভিনেত্রী ফারিয়া এই ছবিটিতে অভিনয় করে বিরাট উচ্চতায় উঠে গেলেন। কেননা, শেখ হাসিনা তখন ক্ষমতায়।

ওই সময় সিনেমাটি নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে ফারিয়া বলেছিলেন, আমাদের প্রত্যেকটা বাঙালি মেয়ের মধ্যে একজন করে হাসিনা রয়েছে। শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয়ের পর জীবনে আর কোনো অভিনয় না করলেও তাতে কোনো আফসোস থাকবে না তার।

এমন কথা বায়োপিকটিতে আরও যারা অভিনয় করেছেন তাদের অনেকেই বলেছেন। বলেছেন, কেন্দ্রীয় চরিত্র আরিফিন শুভও। কিন্তু বায়োপিকটিতে এমন কয়েকটি চরিত্র আছে, বিশেষ করে মুজিব পরিবারের তাদের অনেকেরই মুদ্রার এক পিঠই দেখানো হয়েছে কিন্তু অপর পিঠটি একবারেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। সেই মুদ্রার অপর পিঠ সম্পর্কে এই বায়োপিকটি থেকে কখনোই কিছু জানা যাবে না। তেমনি একটি চরিত্র শেখ হাসিনা। যে চরিত্রটি সেনাবাহিনীর প্রধানকে বাস্তবে বলে, 'কি করেন, পাঁচ/দশ হাজার (ছাত্র-জনতা) ফেলে (লাশ) দিতে পারেন না?' এরকম নির্দেশ তো কোনো দেশপ্রেমিক দিতে পারেন না। কোনো মানবপ্রেমিক দিতে পারেন না। তার মানে এই শেখ হাসিনার অন্তরের চরিত্রটি দেশপ্রেমিক নয়। 'পাঁচ/দশ হাজার' কেন প্রয়োজনে তিনি পঞ্চাশ হাজার কি পঞ্চাশ লাখ মেরে ফেলার নির্দেশ দিতে পারেন।

এরকমই অন্তরের ভয়াল নির্দয় হিংস্র রূপটি অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে সেই শেখ হাসিনার যৌবনের সময়কালের। মূল চরিত্র শেখ মুজিবের চরিত্রটিও তাই। কিন্তু বাস্তবে একটি চরিত্র তো চরিত্রই। তার ওপর যখন বায়োপিকের চরিত্র। বায়োপিক মানে জীবনীচিত্র। এই জীবনীচিত্র তো যেমন ইচ্ছা খন্ডিতভাবে দেখানো হয় না! তার যেটা ভালো সেই অংশটি দেখানো হবে, যেটা খারাপ সেই অংশটি দেখানো হবে না- লুকিয়ে রাখা হবে- তা তো হয় না। তেমনি একটি চরিত্র রাজনীতি ও ব্যক্তিজীবনের শেখ হাসিনা। বানিয়ে বানিয়ে তাকে গেস্নারিফাই করানো চরিত্র নুসরাত ফারিয়াই এই শেখ হাসিনা। কিন্তু নুসরাত তো পেশাদার অভিনেত্রী। তাকে দিয়ে যা করানো হবে তিনি তা-ই করবেন। সেখানে তার কি-ই বা দোষ! কিন্তু এই হিংস্র, ফেরোসাস চরিত্রটিতে অভিনয় করেই কী এক আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন নুসরাত আরও বলছেন, 'জীবনে আর কোনো অভিনয় না করলেও তাতে কোনো আফসোস থাকবে না তার!'

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এমন পতনের পর বেশ তোপের মুখে পড়েন ফারিয়া। এতদিন বিষয়টি নিয়ে ছিলেন নিশ্চুপ। ছিলেন দেশের বাইরে। কানাডায় দেড় মাসের সফর শেষে গেল ১৭ আগস্ট দেশে ফিরেছেন ফারিয়া। আর এবার সমালোচনার জবাব দিলেন তিনি।

আপনাকে নিয়ে ট্রল হয়েছে অনেক, দেখেছেন নিশ্চয়ই? এমন প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, 'চোখে তো পড়েছে, খারাপও লেগেছে। তবে কাকে কী বলব! আমার ক্যারিয়ার ১২ বছরের। ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় দেখেছি। তারা যখন যে ধরনের কাজে ডেকেছে, সাড়া দিয়েছি। আসলে আমি তো এখানে টাইম পাসের জন্য আসিনি। এটা রুটি-রুজির জায়গা। কাজের প্রস্তাব এলে করব, এটাই তো নিয়ম। এখন কেউ যদি আমাকে আওয়ামী সমর্থক ভেবে দূরে ঠেলে দেন, কী করতে পারি?'

যোগ করে ফারিয়া আরও বলেন, 'আমরা শিল্পী, আমাদের কাজ মানুষকে বিনোদন দেওয়া। সেটাই করে গেছি। কখনো কারও অন্ধ সমর্থক ছিলাম না। যদি সেটা করতাম, মনে সামান্যতম সংকীর্ণতা থাকত, দেশেই আসতাম না। এখন যদি নতুন সরকার তাদের কাজে আমাকে ডাকে, অবশ্যই সাড়া দেব। ওই যে বললাম, শিল্পীদের কাজ দলাদলি করা নয়, নিজের অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শক মনে জায়গা করে নেওয়া।'

এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি রাজনীতির মানুষ নই। বিচক্ষণতার সঙ্গে তাই বলতেও পারব না। দেশের ছাত্র-জনতা চেয়েছিল বলেই তো পরিবর্তনটা এসেছে। একজন নাগরিক হিসেবে চাইব, যেটা হয়েছে সেটা যেন মঙ্গলের জন্য হয়। আমার বিশ্বাস, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর পাশাপাশি বিনোদনও যেন হারানো গৌরব ফিরে পায়, সেদিকে খেয়াল রাখবে বর্তমান সরকার।'

টিভি পর্দায় ফারিয়াকে প্রথম দেখা যায় স্কুলশিক্ষার্থী হিসেবে। স্কুল বিতর্কের প্রতিযোগী হিসেবে হাজির হয়েছিলেন বিটিভিতে। পরে রেডিও ও টিভিতে সঞ্চালক হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। পাশাপাশি মঞ্চেও ছিল সরব উপস্থিতি। আর বর্তমানে নায়িকা হিসেবে ঢাকা-কলকাতায় তার বিশেষ অবস্থান রয়েছে। ২০১৫ সালে যৌথ প্রযোজনার 'আশিকী' সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় নিজেকে মেলে ধরেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর নায়ক হিসেবে একে একে পেয়েছেন জিৎ, আরিফিন শুভ ও শাকিব খানকে। তালিকায় আরও আছেন অঙ্কুশ, বাপ্পী ও সিয়াম আহমেদ।

তিনি একজন গায়িকাও। 'পাটাকা' শিরোনামের গানে গায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় নুসরাত ফারিয়ার। বহুমাত্রিক গুণী এই অভিনেত্রী অল্প সময়ের পথ চলাতে কাজ করেছেন বেশ কিছু বড় বাজেটের সিনেমাতে; পেয়েছেন সাফল্যও। তাইতো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মিলেছে টেলি সিনে অ্যাওয়ার্ড এবং মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।

উলেস্নখ্য, নতুন কাজ নিয়ে পরিকল্পনা করছেন নুসরাত ফারিয়া। পাশাপাশি তার গানের ধারাবাহিকতাও বজায় রাখতে চান। খুব শিগগিরই কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন নুসরাত ফারিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে