আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়ার ছয় বছর আজ

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পারিবারিক আবহে সংগীতটা না থাকার পরও ছোটবেলাতেই গিটারের প্রেমে পড়েন। যদিও বাবার অমত ছিল। কিন্তু ছেলের প্রচন্ড আগ্রহ দেখে ১১তম জন্মদিনে বাবাই তাকে একটি গিটার কিনে দেন। সেই গিটারেই শুরু। দেহ-মননে তিনি যেমন বেড়ে উঠেছেন, তার সঙ্গে বড় হয়েছে সংগীত সত্তাও।

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
২০১৮ সালের আজকের দিনে মিউজিক অঙ্গনে শোক নেমে এসেছিল। শোকের কারণ ছিল শ্রোতাপ্রিয় ব্যান্ড তারকা গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর হঠাৎ না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। তার মৃতু্যর সংবাদে মিউজিকপাড়াসহ ভক্তদের শোক কান্নায় পরিণত হয়েছিল সেদিন। তার শেষ যাত্রায় লাখ লাখ ভক্ত আর মিউজিক অঙ্গনের লোকেরা অংশ নিয়েছিল। সেই কিংবদন্তির মৃতু্যর আজ ছয় বছর পূর্ণ হলো। সবই আছে, নেই কেবল রুপালি গিটারের সেই বাহক। ভক্তকুল এখন তাকে খুঁজে ফেরে গানে গানে। এই বুঝি মঞ্চে উঠে গিটারে ছন্দ তুলে দরাজ গলায় গাইতে শুরু করবেন আইয়ুব বাচ্চু (এবি)। কয়েক প্রজন্মকে গানের মোহে আবদ্ধ রাখা আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি ব্যান্ড ঘরানাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার অনেক গান এখনো সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পারিবারিক আবহে সঙ্গীতটা না থাকার পরও ছোটবেলাতেই গিটারের প্রেমে পড়েন। যদিও বাবার অমত ছিল। কিন্তু ছেলের প্রচন্ড আগ্রহ দেখে ১১তম জন্মদিনে সেই বাবাই তাকে একটি গিটার কিনে দেন। সেই গিটারেই শুরু। দেহ-মননে তিনি যেমন বেড়ে উঠেছেন, তার সঙ্গে বড় হয়েছে সঙ্গীত সত্তাও। কলেজজীবনে ওঠার পরই বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথমে এর নাম ছিল 'গোল্ডেন বয়েজ'। পরে নাম বদলে 'আগলি বয়েজ' রাখেন। এই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। আর গিটারিস্ট ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তারা স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। ১৯৭৭ সালে 'ফিলিংস' ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবি। সেখানে ছিলেন জেমসও। তবে আইয়ুব বাচ্চুর উত্থানের সূচনা মূলত ১৯৮০ সালে 'সোলস'-এ যোগদানের পর। এই ব্যান্ডের হয়ে ১৯ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এরপর নিজে কিছু করার কথা ভাবলেন, সেই ভাবনা থেকে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন 'লিটল রিভার ব্যান্ড', যা পরে 'লাভ রানস বস্নাইন্ড' বা 'এলআরবি' নামে বিপুল খ্যাতি লাভ করে। ব্যান্ডের হয়ে আইয়ুব বাচ্চু উপহার দিয়েছেন এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮) এবং যুদ্ধ (২০১২) অ্যালবামগুলো। এ ছাড়া একক শিল্পী হিসেবে তার অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এর বাইরে তার গাওয়া গানের অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে। আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে কালজয়ী কিছু গান হলো- 'সেই তুমি', 'কষ্ট পেতে ভালোবাসি', 'এখন অনেক রাত', 'মেয়ে', 'কেউ সুখী নয়', 'হাসতে দেখো গাইতে দেখো', 'এক আকাশের তারা', 'ঘুমন্ত শহরে', 'রুপালি গিটার', 'উড়াল দেব আকাশে', 'একচালা টিনের ঘর', 'তারাভরা রাতে', 'বাংলাদেশ', 'বেলা শেষে ফিরে এসে', 'আমি তো প্রেমে পড়িনি', 'আম্মাজান', 'ফেরারি মন' ইত্যাদি। আইয়ুব বাচ্চু মূলত রকস্টার। কিন্তু ব্যান্ড কিংবা রক তারকা হলেও অন্যান্য ঘরানার গানেও তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে আধুনিক এবং লোকগানে তিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখে গেছেন। নিজের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অন্যান্য শিল্পীর জন্য আধুনিক, লোক এবং ক্লাসিক্যাল ঘরানার গানও তৈরি করেছেন তিনি। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর তার গানের আদর্শ ছিলেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছেন। সুখের চেয়ে বেদনার চিত্রই গিটার জাদুকরের গানে বেশি ফুটে উঠেছে। যেন গানের গল্পেই লুকানো তার জীবন। জীবনের এপাশ-ওপাশ। হয়তো এ কারণে তার হতাশার গানগুলো চোখ বুজেই লুফে নিয়েছে শ্রোতারা। আইয়ুব বাচ্চু বেশ কিছু চলচ্চিত্রে পেস্নব্যাক করেছেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান 'লুটতরাজ' ছবির 'অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে'। এছাড়া 'আম্মাজান' ছবির শিরোনাম গানও জনপ্রিয়। চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণে রাখতে দারুণ এক আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরশন। আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে বসানো হয়েছে রুপালি গিটার আদলের ভাস্কর্য। প্রবর্তক মোড়ের নামকরণ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চু চত্বর। সংসারজীবনে তিনি স্ত্রী, ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব নামে এক কন্যা ও আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব নামে এক পুত্রসন্তান রেখে গেছেন।