বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ৩১ বছরে শাবনূর
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
বেশ কিছু 'শ' আদ্যাক্ষরের নাম দেওয়া ঢাকাই চলচ্চিত্র মোগল এহ্তেশামের হাত ধরে আসা বাংলা চলচ্চিত্রের নব্বই দশকের দাপুটে নায়িকা শাবনূর। এহ্তেশামের সিনেমায় নাম লেখানো মানেই তার নায়িকার সোনার চামচে মধু খাওয়া পরিবার প্রদত্ত নামও বদলে ফেলা। শবনম, শাবানারা তার প্রকৃষ্ট উপহার। শাবনূরও তাই। পরিবার প্রদত্ত নাম ছিল কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। কাকতালীয় হলেও শাবনূরের পারিবারিক নামটির আদ্যাক্ষরও 'শ' শারমিন দিয়ে শুরু হলেও এহ্তেশাম এ নামটি রাখেননি। 'শ' দিয়ে শুরু হলেও 'শ' দিয়ে তার একটি নতুন নাম চাই-ই চাই।
সে-ই শাবনূর, যার ক্যারিয়ারে বেশির ভাগ সিনেমাই ব্যবসাসফল। তার চলচ্চিত্রগুলো আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে। দেখতে দেখতে গত মঙ্গলবার 'প্রেমের তাজমহল'খ্যাত এই নায়িকা ক্যারিয়ারে ৩১ বছরে পদার্পণ করেছেন। চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হলেও শাবনূরকে নিয়ে তার ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহ মোটেও কমেনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রবাসজীবন যাপন করছেন। থাকছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সম্প্রতি দেশে ফিরে আরাফাত হোসাইনের 'রঙ্গনা' ও চয়নিকা চৌধুরীর 'মাতাল হাওয়া' নামের দুটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। বিরতি ভাঙার এই খবরে ভক্তরাও ভীষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
শাবনূর তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। লেখার শুরুতে তিনি বলেন, 'নামজাদা চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত এহতেশাম দাদুর 'চাঁদনী রাতে' সিনেমার মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর আমার চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয়েছিল। সবার ভালোবাসায় আজ ৩১ বছর পূর্ণ হলো, আলহামদুলিলস্নাহ।'
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাবনূর বলেন, 'আলস্নাহর রহমত ও সবার দোয়ায় চলচ্চিত্রে এখনো যথেষ্ট সম্মান নিয়েই বেঁচে আছি। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পথচলায় এই অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত সব প্রযোজক, পরিচালক, সহশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, ক্যামেরাম্যান, কলাকুশলীসহ সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও ঋণী।'
দর্শকদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শাবনূর বলেন, 'বিশেষ করে আমার সিনেমার দর্শক ও অগণিত ভক্তদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি আজকের শাবনূর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে সর্বক্ষণ উপলব্ধি করছি, আমাকে নিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা আজও বদলায়নি, বরং বেড়েই চলেছে। আমার প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভবিষ্যতেও আশা করি অব্যাহত থাকবে।'
সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শাবনূর বলেন, 'আমি সাংবাদিক ভাই-বোনদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতি আপনারা প্রায় সবাই যেভাবে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আমাকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, সবার প্রতি অনেক শুভকামনা।'
১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর নির্মাতা এহতেশাম পরিচালিত 'চাঁদনী রাতে' সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে শাবনূরের। সিনেমাটি তেমন ব্যাবসাসফল না হলেও আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই নায়িকাকে। ধারাবাহিকভাবে উপহার দিয়েছেন দর্শকপ্রিয় সব সিনেমা।
প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন শাবনূর। 'তুমি আমার', 'সুজন সখী', 'স্বপ্নের ঠিকানা', 'স্বপ্নের পৃথিবী', 'তোমাকে চাই', 'আনন্দ অশ্রম্ন'র মতো জনপ্রিয় সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তারা। মোট ১৪টি সিনেমায় দেখা গেছে এই তারকা জুটিকে।
এদিকে ইউটিউবেও রেকর্ড করেছেন এ নায়িকা। শাবনূরের ঠোঁটে ১০০টিরও বেশি গান ইউটিউবে পেয়েছে কোটির ওপরে ভিউ। ২০টি গানই রয়েছে পাঁচ কোটি ভিউয়ের ঘরে। এফ আই মানিকের 'হৃদয়ের বন্ধন' ছবির 'বধূ বেশে কন্যা যখন এলোরে' শাবনূর অভিনীত সর্বোচ্চ ভিউ পাওয়া গান- ১৮ কোটি ৮৭ লাখের বেশি।
দ্বিতীয় স্থানে আছে 'ফুল নেব না অশ্রম্ন নেব' ছবির 'বিধি তুমি বলে দাও আমি কার' ৯ কোটি ৬৫ লাখের বেশি ভিউ। এন্ড্রম্ন কিশোর, কনকচাঁপা ও বিপস্নবের গাওয়া গানটিও অনুপম ইউটিউবে আপলোড করেছিল ২০১৮ সালে। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের 'আনন্দ অশ্রম্ন' ছবির গান 'তুমি আমার এমনই একজন' দেখা হয়েছে আট কোটি ৪৯ লাখের বেশিবার। এই জুটির 'তোমাকে চাই' ছবির টাইটেল গান দেখা হয়েছে ছয় কোটি ৯৭ লাখের বেশিবার।
শাকিব খানের সঙ্গে শাবনূরের 'গোলাম' ছবির 'দুটি মন লেগে গেছে জোড়া' দেখা হয়েছে ছয় কোটি ৪১ লাখেরও বেশিবার। মাত্র তিন বছর আগে গানটি ইউটিউবে আপলোড করেছিল অনুপম। ওমর সানীর সঙ্গে জুটি বেঁধে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। তার মধ্যে 'কে অপরাধী' ছবির 'কত ভালোবাসী কী যে ভালোবাসি' দেখা হয়েছে ছয় কোটিরও বেশিবার, একই ছবির আরেক গান 'কী ছিলে আমার' ১১ কোটি ৬০ লাখের ঘর পেরিয়েছে। ফেরদৌসের সঙ্গে শাবনূরের সুপারহিট ছবি 'প্রেমের জ্বালা'। এই ছবির 'সাগরের মতোই গভীর' অনুপমের চ্যানেলে দেখা হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখেরও বেশিবার।
এ ছাড়া 'হৃদয় শুধু তোমার জন্য' ছবির 'ভালোবাসা ছাড়া জানি বাঁচে না হৃদয়', 'তুমি বড় ভাগ্যবতী' ছবির 'পাখিরে ও পাখিরে', 'নাচনেওয়ালী' ছবির 'ছুঁইয়ো না ছুঁইয়ো না' গানগুলোর প্রতিটিই পাঁচ কোটির বেশিবার দেখেছেন দর্শক। 'খেয়া ঘাটের মাঝি' ছবির 'কোন কাননের ফুল গো তুমি' ও 'স্বপ্নের বাসর' ছবির 'কিছু কিছু মানুষের জীবনে' গান দুটিও পাঁচ কোটি ভিউয়ের দ্বারপ্রান্তে। প্রথমটি দেখা হয়েছে চার কোটি ৯০ লাখ, দ্বিতীয়টি চার কোটি ৭৩ লাখ।