'আমার মুখ বান্ধিবি পরাণ বান্ধিবি কেমনে'

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে হেরে যান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে মমতাজ নিজ এলাকায় তেমন আসতেন না। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তেমন সরব ছিলেন না।

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
লোক সঙ্গীতের ভিন্ন আঙ্গিকের কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের পরিমন্ডলে তিনি নিজস্ব ধারার প্রবর্তক। এজন্য অনেকে তাকে ফোক সম্রাজ্ঞীও বলে থাকেন। সচরাচর লোকসঙ্গীতে আত্মার গভীরের শেকড়ের টান থাকে। বাউল গানের এই ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সঙ্গে মমতাজ তার গানে বাংলার লোকায়তিক দেহকামেরও নিরবচ্ছিন্ন টানও যুক্ত করেছেন। মূলত তার গানের এই বৈশিষ্ট্য দিয়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এভাবেই তিনি লোকধারার গানে একটা আলাদা সুর ও ব্যঞ্জনা নিয়ে আসেন। এখন শুধু গ্রামগঞ্জ কিংবা শহর নয়, তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে গেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। সংগীত জীবনে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার। এ শিল্পী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয়। মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে হয়েছিলেন সংসদ সদস্য। ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর ক্ষমতাচু্যত দলটির শীর্ষ নেতাসহ মন্ত্রী, এমপিরা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমান। কেউ কেউ দেশের মধ্যেই আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থাকা এমপিদের একজন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। সরকার পতনের পর মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্যের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি কি দেশেই আছেন, নাকি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন- সেই খবরও মিলছে না। তবে এর মধ্যেই গত রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি গানের ভিডিও নিয়ে হাজির হয়েছেন সাবেক এই এমপি। ভিডিওটি মমতাজ কোথায় ধারণ করেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। তবে কোনো একটি রুমের বিছানায় বসেই 'আমার হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি মন বান্ধিবি কেমনে? আমার চোখ বান্ধিবি, মুখ বান্ধিবি পরাণ বান্ধিবি কেমনে?' গানটি পরিবেশন করতে দেখা গেছে তাকে। তার এই গানটির ভাষার মধ্যেদিয়েও তিনি জানান দিয়ে রাখেন তিনি এখনও আওয়ামী লীগেই আছেন। তার মন আওয়ামী লীগের জন্যই, তার পরাণ আওয়ামী লীগের জন্যই। তাই গানের মধ্যদিয়ে তিনি বলেন, আমার হাত-পা বাঁধিলেও আমার মন বান্ধিতে পারিবি না, চোখ-মুখ বান্ধিলেও পরাণ বান্ধিতে পারিবি না। এভাবে তাকে যতোই আটকাক, তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষেই কথা বলবেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর মমতাজকে ফেসবুকে আবিষ্কার করে ভক্তরাও একের পর এক মন্তব্য করেছেন। কেউ জানতে চেয়েছেন, কোথায় আছেন আপনি? দেশেই আত্মগোপনে আছেন নাকি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন? কেউ আবার আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্ক তুলে ধরে মন্তব্য করেছেন। যদিও কিছু ভক্ত রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে কণ্ঠশিল্পী মমতাজকে আবারও গানের জগতে ফিরে পেতে চেয়েছেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে সদস্য মনোনীত হন মমতাজ। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে হেরে যান। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে মমতাজ নিজ এলাকায় তেমন আসতেন না। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তেমন সরব ছিলেন না। হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার মাস কয়েকদিন আগে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল মমতাজ 'এইডস' রোগে আক্রান্ত। বিষয়টি শিল্পীর কানেও পৌঁছেছিল। তখন এটি নিয়ে ভীষণ বিব্রত প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয় নিয়ে সেই সময় মুখ খুলেছিলেন মমতাজ। তিনি বলেন, 'শুনলাম, আমার নাকি এইডস হয়েছে! বিষয়টি বিব্রতকর। আলস্নাহর রহমতে আমি সুস্থ ও খুব ভালো আছি। আর সে কারণেই স্টেজ শো নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারছি। ঈদের পরও দেশের বাইরে যাচ্ছি। যারা এসব মিথ্যা কিংবা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের সুবুদ্ধির উদয় হোক। যারা এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বলব, এগুলো ভালো না, ভালো পথে থাকেন। আর আমার ভক্তদের বলব, এসব গুজবে কান দেবেন না। সবার দোয়ায় আপনাদের মমতাজ অনেক অনেক ভালো আছে।' ১৯৭৪ সালের ৫ মে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরে জন্মগ্রহণ করেন এই তারকা। তার বাবা মধু বয়াতিও গান করতেন। তার কাছ থেকেই গানে হাতেখড়ি। পরে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান এবং শেষে আবদুর রশীদ সরকারের কাছে গান শেখেন। সেই থেকে আজ অবধি গান গেয়ে যাচ্ছেন তিনি।