শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

কমিটির জন্য ফারুকীর কিছু প্রস্তাব

বিনোদন রিপোর্ট
  ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কমিটির জন্য ফারুকীর কিছু প্রস্তাব

বৈষম্য-বিপস্নব বিজয়ের পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গঠিত নানান কমিটি ও পদের জন্য সোশ্যাল হ্যান্ডেলে সবচেয়ে বেশিবার নাম উচ্চারিত হয়েছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর। সেটি যেমন শিল্পকলার মহাপরিচালক হিসেবে, তেমনি এফডিসি হয়ে সিনেমার নানাবিধ কমিটিতে। শেষের দিকে অনেকে তো অবাকই হয়েছে, প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ; কেন কোথাও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নাম মিলছে না!

অবশেষে নির্মাতা নিজেই জানান দিলেন তার কাছে প্রস্তাব আসা ও ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি। সঙ্গে জানালেন সদ্য গঠিত কমিটিগুলো নিয়ে তার হতাশা এবং কিছু যোগ্য মানুষকে দেখতে না পাওয়ার বেদনা।

৯ অক্টোবর সরকারের চলমান কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তর এক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। যার পুরোটাই ছিল সদ্য গঠিত চলচ্চিত্র-বিষয়ক নানাবিধ কমিটি প্রসঙ্গে। এর মধ্যে ২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত 'চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মোটামুটি পছন্দ হয়েছে ফারুকীর।

এ প্রসঙ্গে ফারুকী লিখেছেন, 'চলচ্চিত্র-বিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে তার মধ্যে 'পরামর্শক' কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকি কমিটিগুলোতে যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার যাতে সরকার বুঝতে পারে। না হলে আগের আমলের মতো 'কর্তা যা করেছেন মাইরি' সিচুয়েশন বানিয়ে ফেলবো আমরা।'

বিস্ময়কর নামগুলো বাদ দিয়ে আরও যারা এসব কমিটিতে থেকে আলো ছড়াতে পারতেন দেশের চলচ্চিত্রে, তেমন কিছু নামও উলেস্নখ করেছেন ফারুকী। লিখেছেন, 'আমার বিবেচনায় এখানে আরও কিছু অংশীজন থাকা উচিত ছিল। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, আব্দুলস্নাহ মোহাম্মদ সাদ, নুহাশ হুমায়ুন।'

এই বলে চট করে জানালেন নিজের কথাটিও। কারণ তার নাম কোথাও নেই বলে অনেক অনুরাগীর অস্বস্তি রয়েছে। ফারুকী তাদের স্বস্তি দিয়ে বলেন, 'স্বচ্ছতার জন্য বলে নেয়া ভালো, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উলেস্নখ করলাম তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছেন কিনা আমি জানি না।'

ফারুকীর প্রত্যাশা, পরামর্শক কমিটিতে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা শুধু সিনেমা সংশ্লিষ্টদের মতামত ও পরামর্শ বাস্তবায়ন ঘটাবেন, নীতি প্রণয়ন তাদের কাজ নয়। তার ভাষায়, 'এই পরামর্শক কমিটি থেকে পরামর্শ যা যাবে তা যেন অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারি কর্মকর্তারা কেবল এক্সিকিউশনের দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তারা হাত না দেয়াই ভালো হবে। কারণ তারা তো আমাদের সমস্যা এবং প্রয়োজনটা জানেন না।'

কমিটিতে না থেকেও পরামর্শ দিলেন 'শনিবার বিকেল' নির্মাতা। টানলেন শিল্পকলা একাডেমিকেও। লিখেছেন, 'এখানে আরেকটা কথা যোগ করতে চাই। শিল্পকলা একাডেমির জমি আছে মোটামুটি দেশজুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপেস্নক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম 'আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না', সেহেতু এসব মাল্টিপেস্নক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেনেন্স ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন আর সিনেমা-টিভি-ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।'

পরামর্শক কমিটির প্রতি ফারুকীর আরও পরামর্শ হলো, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড এবং সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরণ আছে। আমি মনে করি, পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথাতে আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মাঝে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবেটরে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে।'

কথা বলেছেন সরকারি অনুদান প্রসঙ্গেও। তিনি বলেছেন, 'আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দিবো? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট এবং ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটেলিং? নাকি কলকাতা আর্টহাউজের দুর্বল ফটোকপি? আমার বিবেচনা হচ্ছে আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো এসব মিলিয়ে আমাদের আশপাশে নিজস্ব গল্প এবং চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশি নিউ ওয়েভ হতে পারবো।'

'একই সাথে পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান কমিটি পুনর্গঠন করা। নতুন পলিসির আলোকে যারা এটা এক্সিকিউট করতে পারবে তাদের রাখা উচিত। দেখেন ব্যক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে অনুদান কমিটি করা হয়েছে সেখানে এক দুইজন যোগ্য লোক থাকলেও এটা অনেকটাই আওয়ামী লীগ আমলের মতোই ব্যাকডেটেড কমিটি। আর এই কমিটির কে কীভাবে ফ্যাসিবাদের কালচারাল উইংয়ের ফুটসোলজার ছিল সেই আলাপে গেলাম না। আমি মনে করি এই কমিটিতে থাকা উচিত ছিল তাদের, যাদের সারা দুনিয়ায় এই কাজগুলো কীভাবে হচ্ছে সেটার ফার্স্টহ্যান্ড অভিজ্ঞতা আছে। বিদ্যমান কমিটির যোগ্য দুয়েকজনের পাশাপাশি আব্দুলস্নাহ মোহাম্মদ সাদ, নুহাশ হুমায়ুন, আরিফুর রহমান, তানভীর হোসেন, সালেহ সোবহান অনীম, আদনান আল রাজীব, কামার আহমেদ সায়মন, হোমায়রা বিলকিস এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ থাকলে আমরা একটা ফরওয়ার্ড লুকিং ভিশন পেতাম'- যোগ করলেন 'ডুব' নির্মাতা।

অনেকে ভাবতে পারেন ফারুকী কেন কমিটি গঠনে ঘুরে-ফিরে ব্যক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন! তার জবাবও দিয়েছেন। লিখেছেন, 'ব্যক্তির কারণেই আকাশ পাতাল পার্থক্য রচিত হয়। কারণ, সৈয়দ জামিল আহমেদ আর লিয়াকত আলি লাকী এক জিনিস না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে