শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পূজায় নায়ক-নায়িকারা

শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য পূজা মানেই বিশেষ কিছু। এ উৎসবকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা করেন তারা। শোবিজ তারকারাও পূজার ছুটি কাটান নিজের মতো করে। কেউ ঘুরতে যান, কেউ সময় কাটান পরিবারের সঙ্গে। কেউ ব্যস্ত থাকেন নাটক-সিনেমা নিয়ে। পূজার এই দিনগুলোতে দুই বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী তারকারা কে কীভাবে উদযাপন করছেন তা নিয়েই আজকের আয়োজন...
  ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
পূজায় নায়ক-নায়িকারা

শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে ওঠার পরিক্রমায় অসংখ্য দর্শকের মন কেড়েছেন চিত্রনায়িকা পুজা চেরী। সৌন্দর্যের মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই দু্যতি ছড়িয়েছেন। বলা চলে, ঢালিউডের এ সময়ের প্রতিভাধর অভিনেত্রীর তালিকায় শীর্ষেই তার অবস্থান। সে কারণে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিলেন। বড় বাজেট আর ভালো গল্প পেলেই পর্দায় হাজির হবেন তিনি। দর্শকের মনে বেঁচে থাকতে গেলে এর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে পুজা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ওয়েব সিরিজে। 'বস্ন্যাক মানি' শিরোনামের ওয়েব সিরিজটি পরিচালনা করবেন রায়হান রাফী। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, 'বড় কোনো প্রজেক্ট ছাড়া কাজ করব না। দরকার হলে বাসায় বসে থাকব।'

তবে আসন্ন শারদীয় দুর্গা উৎসব ঘিরে কোনো পরিকল্পনা নেই পুজা চেরীর। কয়েক মাস আগে সব সময়ের সঙ্গী মাকে হারিয়েছেন। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখনো প্রতি মুহূর্তে মাকে মনে পড়ে। তাই তো পূজার পরিকল্পনা জানতে প্রশ্ন করা হলে চোখ ভিজে ওঠে তার। পুজা বলেন, 'সবাই জানেন, মা আমার সঙ্গে নেই। তিনি মারা গেছেন ছয় মাস হতে চলেছে। গতবারও মা আমার সঙ্গে ছিলেন। বিভিন্ন পূজামন্ডপে মা আমার হাত ধরে গেছেন। বিষয়টা এমন, আমি তার মা। তিনি আমার সন্তান। ওই ব্যাপারটা আসলে রিকল হচ্ছে। এবার আসলে সেভাবে কোনো পরিকল্পনা নেই। নিজের জন্য একটা সুতাও কিনিনি। কিনবও না। কাজে ব্যস্ত থাকব।' চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সব সময়ই মাকে পাশে পেয়েছেন পুজা। মেয়ের সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন মা ঝর্ণা রায়। মায়ের সহযোগিতার কথা কখনো ভুলতে পারেন না তিনি। যেকোনো সাক্ষাৎকারে মায়ের সমর্থনের কথা বলেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়েও মত জানান অভিনেত্রী। তবে যাননি গভীরে। শান্তির বার্তা দিয়ে পুজা বলেন, 'আমি একজন হিন্দু। আমাদের উচিত সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করা। আমিও মুসলিম, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।'

বেশ কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন 'কাজল রেখা' সিনেমার নায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী। সেখানে গিয়ে তিনি আলাদা দুটি সংগঠন থেকে 'কাজল রেখা' সিনেমায় নাম-ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন। তবে এরই মধ্যে দেশে ফেরার কথা থাকলেও আরও কিছুদিন সেখানে ঘুরে বেড়ানোর পর তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানালেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও কলকাতার হিন্দু কমিউনিটির আয়োজনে ৫ ও ৬ অক্টোবর পূজার আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে বিভিন্ন স্টেটে এই পূজার আয়োজন করা হলেও এবারই প্রথম জ্যাকসন হাইটসে পূজার আয়োজন করা হয়। আবার মন্দিরাও এবারই প্রথম দেশের বাইরে দুর্গাপূজায় অংশ নিচ্ছেন। গতকাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে মন্দিরা চক্রবর্তী বলেন, 'এবারই প্রথম পরিবার ছেড়ে একা দুর্গাপূজায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। মনটা আসলে ভীষণ খারাপ। কিন্তু তারপরও সময়টা উপভোগ করার চেষ্টা করছি। তবে প্রতিমুহূর্তে মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিশেষত পূজার এ সময়টায়। সবাইকে খুব মিস করছি। আর যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে এবারই প্রথম বাংলাদেশ ও কলকাতার হিন্দু কমিউনিটির আয়োজনে দুই দিনব্যাপী পূজার আয়োজন করা হয়। এতে আমি সম্মানিত অতিথি হিসেবেও উপস্থিত ছিলাম। আমাকে যারা নিমন্ত্রণ করেছিলেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইল। দুদিন বেশ আনন্দ করেছি আমরা। পূজার শুভেচ্ছা রইল সবার প্রতি। আমার জন্য সবাই প্রার্থনা করবেন, আমি যেন এখানে পূজাটা উদযাপন করতে পারি।' এ উৎসব শেষে দেশে ফিরবেন এ নায়িকা।

পূজার এই কটা দিন নিজের মতো করেই সাজতে ভালোবাসেন বিদ্যা সিনহা মিম। হালকা প্রসাধনী ব্যবহার করেন। পোশাকের ক্ষেত্রে বেছে নেন কোমল সব রং। ষষ্ঠী থেকে

দশমী পূজার একেক দিনে একেক রকম পোশাক পরবেন বলে জানালেন মিম। সম্প্রতি মিমকে দেখা গেছে দুর্গাপূজার ফটোশুটে অংশ নিতে। সে ছবিগুলো পোস্ট করেছেন সামাজি যোগাযোগমাধ্যমে তাতে বেশ সাড়াও মিলেছে। মিম বলেন, নিজের আনন্দ থেকেই এমন ফটোশুট করা। আর এবার পূজায় ঢাকায় থাকব। বাইরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ঢাকাতেই বিভিন্ন পূজামন্ডপে ঘুরে বেড়াব। ইচ্ছে আছে সব মন্দির দর্শন করার।

২০১২ সালে 'ভালোবাসার রঙ' সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে আত্মপ্রকাশ করেন বাপ্পী চৌধুরী। এরপর দারুণ ব্যস্ততায় পার করছিলেন সময়। অভিনয় করেছেন তিন ডজনের বেশি সিনেমায়। বাণিজ্যিক নায়ক হিসেবে পেয়েছেন সাফল্যও। বর্তমানে এ নায়কের হাতে কোনো সিনেমা নেই বললেই চলে। তবে পূজা এলেই এ নায়কের মনে অন্যরকম আনন্দ কাজ করে বলে জানান। চারদিকে ঢাকের বোল। তবে আগের মতো মন্ডপে মন্ডপে অন্য আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়াতে পারেন না। তার কারণও জানিয়ে এ অভিনেতা বলেন, পূজার মন্ডপে যাওয়া মানেই আমাকে ঘিরে বাড়তি জটিলতা তৈরি হয়। পূজা উদযাপনের চিত্রটা এখন অনেকটাই লুকিয়ে করা হয়। অথচ ছোটবেলার পূজা অনেক মজার ছিল। কমপক্ষে এক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতাম।

এবার পূজায় 'শাস্ত্রী' হয়ে ফিরেছেন মিঠুন। ছবির গল্প অনুযায়ী খুবই জ্যোতিষ বিশ্বাসী মিঠুনের চরিত্রটি। একসময় নানা ঘটনার পর ছাপোষা মধ্যবিত্ত থেকে শাস্ত্রী হয়ে ওঠেন তিনি। ছবিতে মিঠুন দেবশ্রী ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন সোহম চক্রবর্তী। পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন সুরিন্দর ফিল্মস এবং সোহমস এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ সলিউশনস।

পূজায় ওপার বাংলার অন্যতম প্রতীক্ষিত ছবি হলো 'টেক্কা'। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চারস প্রযোজিত ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে রয়েছেন দেব, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ও রুক্মিণী মৈত্র। বেশ অনেকদিন পর আবারও একটি থ্রিলার অ্যাকশন ছবিতে দেখা যাবে দেবকে। নিজের চাকরি ফেরত পেতে এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে ইকলাখ ওরফে দেব। ট্রেলারেই উত্তেজনা বাড়িয়েছে 'টেক্কা', মুক্তির পর থেকেই দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা পাচ্ছে সিনেমাটি। আর কিছুদিন পরে বোঝা যাবে বক্স অফিসে অন্য সিনেমাগুলোকে টেক্কা দিতে পেরেছে কি না সিনেমাটি।

গত বছর থেকে পূজায় ছবি মুক্তি দিচ্ছে প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ প্রোডাকশন। গত বছরের আলোচিত 'রক্তবীজ'-এর পর এবার তাদের পরিবেশনা 'বহুরূপী'। দীর্ঘদিন পর পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই সিনেমাটিতে রয়েছেন কৌশানী মুখোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতাভরী চক্রবর্তী। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হবে ছবিতে। এ ছবিটিও মুক্তির পর প্রশংসিত হচ্ছে।

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীর উদযাপন নিয়ে রয়েছে নানান পরিকল্পনা। এবার পূজা নিজ শহর কলকাতায় কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে মুখ খুলেছেন সম্প্রতি। মূলত পূজার সময়টা নিজ বাড়িতেই কাটান মিমি। সময়টা কীভাবে কাটাচ্ছেন তা নিয়েও আলোচনা করলেন মিমি। মিমি বললেন, 'প্রতিবছরের মতো এই বছরও কসবার বাড়িতেই থাকব। এই পূজা আমরাই প্রথম শুরু করেছিলাম। লাল-হলুদ রঙের মন্ডপ তৈরি হয়েছে। মা-পাপাও এই পূজার সঙ্গে যুক্ত। উদ্বোধনী সঙ্গীত থেকে শুরু করে তারা পূজার বিভিন্ন বিষয়ে যুক্ত থাকেন প্রতিবছর। প্রাথমিকভাবে পূজায় বাইরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করলাম।' তবে এবার পূজায় বিশেষ কেউ থাকছেন না মিমির সঙ্গে। কারণ সিঙ্গেল লাইফ খুব বেশি উপভোগ করতে পারেন মিমি। তাকে সঙ্গ দেয় প্রাণপ্রিয় পোষ্যরাও। কাজেই তাকে কোনোরকম একাকিত্ব গ্রাস করে না, শুধু ঘুমিয়েই আনন্দে কাটাতে চান মিমি- এমনটিই জানালেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে