চুপ থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চঞ্চলের জনপ্রিয়তায়
প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
দুই বাংলার দর্শকনন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত অসংখ্য নাটক-সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন এই অভিনেতা। বাংলাদেশে যে কয়জন অভিনেতাকে ভার্সেটাইল বলা হয়, এর মধ্যে অন্যতম চঞ্চল চৌধুরী। দেশে তো বটেই, ভারতেও তার নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রিয়তা তাকে অনেক আগেই পেয়েছিল। তবে 'হাওয়া' চলচ্চিত্রে তার দাপুটে অভিনয় সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গিয়েছিল। হুড়মুড় করে কলকাতায় তার জনপ্রিয়তা পৌঁছাল। তারই তোরে তার সেই ডাক পৌঁছে গেছে বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা 'বিগ বি'খ্যাত কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনের কানেও। কাজের পাশাপাশি সরব ছিলেন নেটমাধ্যমেও।
কিন্তু এত কিছুর পরও হঠাৎ যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি। তবে কি ভাটা পড়ছে চঞ্চলের জনপ্রিয়তায়। এটা অত্যন্ত নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে চুপ থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে চঞ্চলের জনপ্রিয়তায়। অথচ অন্তত ১৬ জুলাই পর্যন্ত তার ভূমিকা সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে যায়নি। তখন ছয় ছাত্রের ওপর পুলিশের গুলি নিয়ে কথা বলেছিলেন। যদিও স্পষ্ট নয় কথাটি তিনি কী অর্থে বলেছিলেন। 'গুলি কেন করল' এমন প্রশ্নবোধক বাক্যটি সরকারের বিপক্ষে যেমন যায় না, আবার ছাত্রদের বিপক্ষেও যায় না- এ রকম একটি 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'-মার্কা বাক্যে তখন চঞ্চল তাতে কতকটা পার পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই বরবার ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে একেবারে চুপ মেরে যান চঞ্চল চৌধুরী। হাজারের অধিক ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা এবং আরও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত করার বিষয়টি একেবারেই স্পর্শ করতে পারেনি চঞ্চলের সংবেদনশীলতাকে। ফলে ব্যাপারটি এ দেশের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী আর দেশের মহজনতা ভালো চোখে নেয়নি।
যার ফলে বর্তমান সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না তার, এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই শামুকের মতো গুটিয়ে গেছেন চঞ্চল।
আওয়ামী লীগ সরকারের মাত্রাতিরিক্ত তোষামোদি ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নীরব ভূমিকার কারণে রীতিমতো তাকে ছুঁড়ে ফেলেছেন ভক্তরা। এ দেশের মহাজনতা এমন যে, জনপ্রিয়তায় আকাশের চূড়ায় উঠে যাওয়া শেখ মুজিবের মতো রাজনৈতিক নেতাকেও মুহূর্তে মাটিতে নামিয়ে আনতে জানে। সেটা যেমন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখা গেছে, আবার এই সেদিনও দেখা গেছে স্বৈরাচারী গণশত্রম্ন শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে।
আর চঞ্চল তো রাজনৈতিক নেতাও নন। অভিনেতা মাত্র। তাইতো জুলাই-আগস্টের পর থেকে তেমন কোনো কাজেও দেখা যাচ্ছে না চঞ্চলকে। এমনকি গেল মাসে তার বহুল আলোচিত সিনেমা 'পদাতিক' মুক্তি পেলেও সুপার ফ্লপ তকমা পেয়েছে এটি। সিনেমাটির প্রচারেও অংশও নেননি চঞ্চল।
শুধু তাই নয়, 'পদাতিক'র মুক্তি উপলক্ষে ভারতে যাওয়ার কথা থাকলেও তোপের মুখে সেখানে যাওয়া থেকেও বিরত ছিলেন এই অভিনেতা। তার এমন খারাপ পরিস্থিতিতে সিনেমাটির ফলাফল যেন আরও একধাপ পিছিয়ে দিল চঞ্চলকে।
'পদাতিক' নির্মাণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের গুণী নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি। শুরু থেকেই ব্যাপক আলোচনায় ছিল সিনেমাটি। বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন নিজেও শেয়ার করেছিলেন সিনেমাটির ফার্স্টলুক। 'পদাতিক'র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল।
অন্যদিকে ভারতের খ্যাতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের বায়োপিক খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি বক্স অফিসে। এমনিতে বাংলাদেশ ও কলকাতায় জনপ্রিয়তার কোনো কমতি নেই চঞ্চলের।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার তোষামোদি করায় তার পতনের পর চঞ্চলের জনপ্রিয়তায়ও যে এখন ভাটা পড়েছে, তা সহজেই অনুমান করতে পারছেন তার ভক্তরা।