চরিত্রের অনন্য শিল্পী দোয়েল
প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
জনপ্রিয়তার মোহে কখনো তারকা দৌড়ে অংশ নেননি। তার কাজের সংখ্যা সমসাময়িকদের চেয়ে কম নাকি বেশি, সেই প্রশ্নও কখনো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। বরং যে গল্প ও অভিনীত চরিত্র দর্শকের সামনে তুলে ধরছেন, সেটি তাদের মনে ছাপ ফেলবে কি না সেই প্রশ্নই নিজেকে বারবার করে থাকেন। তাই নির্দেশকের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন সব সময়।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর পর নিজেকে ভুলে মিশে গেছেন চরিত্রের সঙ্গে। এভাবেই বারবার নিজেকে ভেঙে ভিন্নরূপে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন। জানা ছিল, তুমুল জনপ্রিয় আয়োজনের অংশ না হতে পারলে পথচলা সহজ হবে না; হোঁচট খেতে হবে যখন-তখন। তবুও মনোবল ভাঙেনি। বিশ্বাস রেখেছেন নিজের ওপর। কিন্তু যে ধরনের সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা মুক্তি পেতেও বিলম্ব হয়েছে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। তবু ভেঙে পড়েননি। অভিনয়জগতের সেই অপরাজিতার নাম দোয়েল।
শুরুতে যার পরিচয় উঠে এসেছিল দিলরুবা হোসেন দোয়েল ম্যাশ নামে। নিজের নামের সঙ্গে ছেলে মাশরিকের নামের সংক্ষিপ্ত অংশ জুড়েই এই 'দোয়েল ম্যাশ' নামকরণ। কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে যখন দর্শক মনোযোগ কাড়লেন, এলেন আলোচনায়, তখনো প্রকৃত নাম দিলরুবা দোয়েলেই ফিরে যেতে হয়েছে। তবে নাম ওলট-পালট হলেও অভিনয়ের চিন্তাধারা খুব একটা বদলে যায়নি ছোট ও বড় পর্দার এ অভিনেত্রীর। পেছনের সময়টা ফিরে দেখলে তারই প্রমাণ মিলে।
২০১৬ সালে 'কবি স্বামীর মৃতু্যর পর আমার জবানবন্দি' স্বল্পদৈর্র্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছিলেন দোয়েল। এরপর দর্শক মনোযোগ কেড়েছিলেন 'কাবিল কোহকাফি' নামের শিশুতোষ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে। তবে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি কতটা সম্ভাবনাময়ী, তা জানান দিয়েছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত 'আলফা' সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। একইভাবে এন রাশেদ চৌধুরীর 'চন্দ্রাবতী কথা', নুরুল আলম আতিকের 'লাল মোরগের ঝুটি', বন্ধন বিশ্বাসের 'লাল শাড়ি', আহমেদ হুমায়ুনের 'পটু' এবং শবনম ফেরদৌসীর 'আজব কারখানা' সিনেমায় অভিনয় করে দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
খেয়াল করলে দেখা যায়, ঠিক আট বছর আগে যে ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে অভিনয়জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখনো সে ধরনের কাজই প্রাধান্য দিচ্ছেন। দোয়েলের কাছে তাই জানতে চাওয়া হয়েছিল, অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে তার সত্যিকারের ভাবনাটা কী?
জবাবে দোয়েল বলেন, 'আমি সব সময় চাই, এমন কিছু কাজ তুলে ধরতে, যা দর্শক মনে ছাপ ফেলবে। তাই চরিত্রের ব্যাপ্তি কম হলেও গল্পে তা গুরুত্বপূর্ণ কি না সেটিই থাকে ভাবনায়। আমি যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি, সেখান থেকে অভিনেত্রী হয়ে ওঠার সুযোগ ও সম্ভাবনা একেবারেই ছিল না। আশপাশে এমন কেউ ছিল না; যার কাছে অভিনয় সম্পর্কে জানা বা ধারণা নিতে পারি। তাই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে, তখন পরিচালকের নির্দেশনা মেনেই কাজ করে গেছি। বলতে পারেন, সেই নির্মাতারাই আমার শিক্ষক। তারাই আমাকে শিখিয়েছেন নিজেকে ভেঙে কীভাবে ভিন্ন সব চরিত্রে পর্দায় তুলে ধরা যায়। এভাবেই একটু একটু করে পরিণত অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে এটাও সত্যি নিজেকে আরও ভাঙতে চাই, অভিনয়ের মাধ্যম যেটাই হোক। শীর্ষে যাওয়ার প্রতিযোগিতা নয় বরং অভিনীত গল্প ও চরিত্র দর্শকের কাজে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে চাই। যাতে করে দর্শক মনে অনেকদিন বেঁচে থাকা যায়।'
বিনোদনজগতে যত কুসংস্কার প্রচলিত আছে সেগুলোর অন্যতম বিয়ের পর নারীদের ক্যারিয়ার থাকে না। আর যদি বাচ্চা হয়েছে, তো ক্যারিয়ারের কফিনে শেষ পেরেকটিও পোঁতা হয়ে গেল। কিন্তু চন্দ্রাবতী কথা সিনেমার অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল নামের আগে ডিভোর্সি ও সিঙ্গেল মাদারের ট্যাগ লাগিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন বিনোদন অঙ্গনে। পেশাজীবনে এগিয়ে চলেছেন নিজের মেধা দিয়ে।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। সংসার সুখের হয়নি। যৌথ পরিবারে থাকতেন। সেই বিয়ে সুখের হলো না। বিচ্ছেদই স্বাধীন চলার পথ হলো।
ঢাকায় দোয়েল চাকরি করেন, এর ফাঁকে ফাঁকে চলে অভিনয়। বিজ্ঞাপন, ফটোশুটসহ নানা কাজের ভেতর ব্যস্ত থাকেন। আবার বিয়ে করবেন কি না, এমন প্রশ্ন শুনেই বললেন, 'আবার! পাগল নাকি? যে অভিজ্ঞতা হয়েছে... আমি এখন কেবল প্রতিদিন আরও শক্তিশালী হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এখন আমি নিজের গল্প নিজেই লিখব। যে গল্পে পরাজয়ের কোনো জায়গা নেই।'