জন্মদিনে স্মরণ

চিরসবুজ জাফর ইকবাল

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
ঢাকাই চলচ্চিত্রজগতে তাকে বলা হয় চিরসবুজ নায়ক। সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন তিনি। তার ফ্যাশন ধারণা অবাক করে দিয়েছিল আশির দশকের তরুণ-তরুণীদের। সিনেমার নায়কদের জন্য তিনি দেখিয়েছেন নতুন পথ। যেমন সালমান শাহ। যার ফলে তাকে বলা হয় দেশের সিনেমার প্রথম স্টাইল আইকন। তিনি জাফর ইকবাল। রোমান্টিক কিংবা কোনো টগবগে রাগী তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করা এই অভিনেতার জন্মদিন আজ। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পৈতৃক নিবাস সিরাজগঞ্জে। বিশেষ এই দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। জাফর ইকবালের বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিবারে। তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন দেশের খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক। এছাড়া তার ছোট বোন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুলস্নাহ। ভাই-বোনের মতো জাফর ইকবালও গান দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। গায়ক হিসেবে তিনি অসাধারণ প্রতিভাবান ছিলেন। ১৯৬৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন জাফর ইকবাল। সে ব্যান্ডের নাম ছিল 'রোলিং স্টোন'। এরপর ভাই আনোয়ার পারভেজের হাত ধরে পেস্নব্যাক গায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন জাফর ইকবাল। তার গাওয়া প্রথম পেস্নব্যাক ছিল 'হয় যদি বদনাম হোক আরও'। সেই সময় গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যার সুবাদে বহু সিনেমায় গান করেছিলেন জাফর ইকবাল। কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অসংখ্য সিনেমায় গান করিয়েছিলেন। জাফর ইকবালের গাওয়া কালজয়ী তিনটি গান হচ্ছে- 'সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী', 'তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন', 'এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে' এবং 'হয় যদি বদনাম হোক আরও'। এছাড়া তিনি 'কেন তুমি কাঁদালে' শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। জাফর ইকবাল নায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৬৯ সালে। সিনেমার নাম 'আপন পর'। এতে জাফর ইকবালের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন কবরী। তবে জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার জুটি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল। তারা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলেছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। অনেকেই বলেন, 'সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরণী' গানটি জাফর ইকবাল ববিতার জন্যই গেয়েছিলেন। যদিও প্রেমের বিষয়ে ববিতা বা জাফর ইকবাল কেউই কখনো মুখ খুলেননি। জাফর ইকবাল ক্যারিয়ার শুরু করার এক বছর পরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই দুঃসময়ে তিনি বসে থাকেননি। তিনি অংশ নিয়েছিলেন যুদ্ধে। বীর যোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন করেছেন দেশ। স্বাধীনতার পর জাফর ইকবাল পুনরায় সিনেমায় নিয়মিত হন। তবে তার ক্যারিয়ারে উলেস্নখযোগ্য প্রথম সাফল্য আসে ১৯৭৫ সালে 'মাস্তান' সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমা তাকে প্রথম সারির জনপ্রিয় নায়কে পরিণত করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের রাগী, রোমান্টিক, জীবন-যন্ত্রণায় পীড়িত কিংবা হতাশা থেকে বিপথগামী তরুণের চরিত্রে তিনি ছিলেন পরিচালকদের অন্যতম পছন্দ। ধীরে ধীরে সামাজিক প্রেমকাহিনি 'মাস্তানে'র নায়ক জাফর ইকবাল রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। 'নয়নের আলো' চলচ্চিত্রে এক গ্রামীণ তরুণের চরিত্রেও দর্শক তাকে গ্রহণ করে দারুণভাবে। ক্যারিয়ারে জাফর ইকবাল প্রায় ১৫০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশির ভাগই ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি 'অবুঝ হৃদয়' দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতা- দুই বোনের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে জাফর ইকবালের উলেস্নখ্যযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- 'বাঁদি থেকে বেগম', 'সুর্য সংগ্রাম', 'দিনের পর দিন', 'অংশীদার', 'মেঘ বিজলী বাদল', 'আশীর্বাদ', 'মর্যাদা', 'নয়নের আলো', 'মিস লংকা', 'প্রেমিক', 'অপেক্ষা', 'যোগাযোগ', 'অবুঝ হৃদয়', 'বদনাম', 'গর্জন', 'শঙ্খনীল কারাগার' ও 'অবদান' ইত্যাদি। পারিবারিক জীবনে নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামের একজনকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে। পারিবারিক অশান্তির কারণে একটা সময় জাফর ইকবাল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরবর্তীকালে মদ্যপানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ৮ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। মৃতু্যর এত বছর পরও তিনি অগণিত ভক্তকুলের হৃদয়ে চিরসবুজ হয়েই অক্ষত আছেন। তার কর্মোজ্জ্বল স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।