সঙ্গীতাঙ্গনে নতুন গানের সাড়াশব্দ নেই

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
মাত্র কদিন আগে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেন্সর বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড ও শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৩-র জুরি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (চলচ্চিত্র) সভাপতি করে মোট ১৩ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়েছে এই জুরি বোর্ড। এতে সভাপতি হিসেবে আছেন অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সদস্যসচিব হিসেবে আছেন সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। বরাবরের মতোই মোট ২৮টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও উলেস্নখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, সঙ্গীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ, অভিনেত্রী অপি করিম, অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, নির্মাতা জাহিদুর রহিম অঞ্জন, চিত্রগ্রাহক বরকত হোসেন, কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। গত দুই মাসে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবিগুলোও দ্রম্নত মুক্তির প্রক্রিয়ার কথাও জানান হয়েছে। ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে সিনেমার শুটিংও। অন্যদিকে নাটকের শুটিং বর্তমানে চলছে পুরোদমে। ওটিটিতেও মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে কনটেন্ট। তবে নাটক-সিনেমার কাজ শুরু হলেও সুখবর নেই সঙ্গীতাঙ্গনে। গানের জগৎ অনেকটাই থমকে আছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে গত দুই-আড়াই মাস ধরে স্টেজ শো প্রায় বন্ধ। নতুন গান রেকর্ডিং তেমন হয়নি। আর নতুন গান প্রকাশের সাহস পাচ্ছেন না প্রযোজকরা। কারণ এ সময় গান প্রকাশ করে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে শিল্পী-মিউজিশিয়ানদের আয়ের অন্যতম উৎস হলো স্টেজ প্রোগ্রাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্টেজ শো চালু হয়নি সেভাবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে স্টেজ শো আয়োজন হয় সব থেকে বেশি। কিন্তু নিরাপত্তা, উৎকণ্ঠা ও সাম্প্রতিক সময়ের বেশকিছু ঘটনার কারণে ঢাকার বাইরেই শো আয়োজন হচ্ছে না তেমন। গুটিকয়েক চ্যারিটি কনসার্ট বন্যার্তদের জন্য আয়োজন হচ্ছে ঢাকার মধ্যেই। সব মিলিয়ে শিল্পী-মিউজিশিয়ানদের অবস্থা শোবিজের মধ্যে বর্তমানে সব থেকে নাজুক। স্টেজের ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী ঝিলিক বলেন, স্টেজ খুব মিস করছি। কারণ এ সময়টায় স্টেজ শো প্রচুর আয়োজন হয়। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সেটা হচ্ছে না। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এ কারণে শিল্পী-মিউজিশিয়ানরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাছাড়া নতুন গান রেকর্ডিংও তেমন হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আরেক কণ্ঠশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল বলেন, শিল্পীদের আয়ের অন্যতম উৎস স্টেজ শো। এটি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বলতে গেলে বন্ধ। কমবেশি সব শিল্পী মিউজিশিয়ানই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা। এ অবস্থা না কাটলে আরও ভয়াবহ অবস্থায় পড়ব আমরা। কণ্ঠশিল্পী কাজী শুভ একই সুরে বলেন, ঢাকার বাইরে শিল্পীদের স্টেজ শো বেশি থাকে। কিন্তু সেখানে তেমন একটা শো আয়োজন হচ্ছে না বললেই চলে। নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিল্পী হিসেবে চাইব দ্রম্নতই এ পরিস্থিতি কেটে যাক। তবে গানে জগতে প্রচলিত ধারার শিল্পীরা পিছিয়ে থাকলেও অফ ট্র্যাকের গানের শিল্পীরা নতুন গান রচনা করে আলোচনায় ছিলেন। এবার ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গাওয়া গান নিয়ে আলোচনায় ছিলেন হায়দার হোসেন, সায়ান, মৌসুমী চৌধুরী প্রমুখ। গানে গানে দেশ, সমাজ, মানুষ ও নানা অসংগতির কথা তুলে ধরেন সঙ্গীতশিল্পী হায়দার হোসেন। অসুস্থতার কারণে এখন আর আগের মতো গান গাইতে পারেন না তিনি। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় চুপ থাকতে পারেননি এ জনপ্রিয় শিল্পী। অসুস্থতার মাঝেই তৈরি করেছিলেন নতুন গান। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সে সময় গানটি প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। অবশেষে প্রকাশ করেছেন 'আমি লিখতে চাইনি' শিরোনামের গানটি। গানটি তুমুল সাড়া ফেলে দেয়। এরপর প্রকাশ পেয়েছে হায়দার হোসেনের আরেকটি নতুন গান। 'বিজয় উলস্নাস' শিরোনামের গানটি লেখা ও সুর হায়দার হোসেনের। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ফোয়াদ নাসের বাবু। হায়দার হোসেনের সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাটি ব্যান্ডের ভোকাল মিরাজ খান। ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান গেয়েছেন নতুন গান 'বাংলা নাকি তাদের জন্য অন্য কারো জন্য নয়'। মৌসুমী চৌধুরীর ইথুন বাবুর কথায় 'দেশটা তোমার বাপের নাকি করছো ছলাকলা'। এ দেশের শিল্প-সংস্কৃতির পরিবেশে বরাবরই একটা রাজনৈতিক বাতাবরণ জড়িয়ে থাকে। এর উপরই ওঠানামা করে কোন কোন শিল্পী লাইম লাইটে থাকবেন আর কোন কোন শিল্পী আড়ালে চলে যাবেন। বিগত কয়েক বছরে যারা অডিও বাজার দখলে রেখেছিলেন তারা হচ্ছে ইমরান মাহমুদুল, দিলশাদ নাহার কণা, সোমনূর মনির কোনাল, হৃদয় খান প্রমুখ শিল্পীদের বাজার ভালোই যাচ্ছিল। সামনে হয়তো তাতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। একসময় কনকচাঁপা, নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি, রিজিয়া পারভীন, মনির খান, আসিফ আকবর প্রমুখ শিল্পীর গান অডিও বাজার শাসন করত বিগত এক যুগের উপর তারা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই চিত্রপট বদলে যাওয়ায় এখন গানের বাজারটিতেও পরিবর্তন আসবে সেটাই স্বাভাবিক। একসময় যেসব অডিও ইন্ডাস্ট্রি গোটা অডিও বাজার শাসন করত সেটা সামনে কেমন করে তা দেখার বিষয়। একটা সময়ে বিগত সরকার দলীয় আশীর্বাদপুষ্ট শিল্পীরাই চলচ্চিত্রের গানে সুযোগ পেতেন। সেখানে মনির খান, বাদশা বুলবুল, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন, ন্যান্সি, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরীরা সুযোগ পেতেন কম। এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। জাতীয় পুরস্কারের জন্য নতুন জুরি বোর্ড হয়েছে। সরকারি অনুদানেও পরিবর্তন এসেছে। কাজেই এখন পেস্ন-ব্যাকের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। গানের জগতে এখনো পেস্ন-ব্যাক অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই আছে। তবে বিগত সময়ে গানের এই সেক্টরটিতে সুন্দর মেলডি গানের শিল্পীদের অভাবে ধস নামছিল। এখন সামনে আবার সুস্থ ধারার পেস্ন-ব্যাকে ফিরে আসবে সঙ্গীতাঙ্গন এমনটিই আশা করা যায়।