অভিনয়শিল্পী সংঘের কমিটির পদত্যাগ দাবি
'স্বৈরাচারের পতনেও বিভিন্ন জায়গায় তাদের দোসর রয়ে গেছে'
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
টিভি, ওটিটি ও ইফটিউবকেন্দ্রিক অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ক্ষোভের দানা ক্রমশ বাড়ছে। তাদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কার তথা বর্তমান কমিটির সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে গত ক'দিন ধরে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন অর্ধশতাধিক শিল্পী। তারই আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশ ঘটল গত মঙ্গলবার রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে।
এই আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠ আজমেরী হক বাঁধন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, '৫ আগস্ট একটা স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে বটে, কিন্তু তাদের দোসর রয়ে গেছেন বিভিন্ন জায়গায়। যাদের আমরা আসলে অনুসরণ করতে পারি না। আমরা এই মিডিয়াটাকে যেভাবে দেখতে চাই, সেটা দেখাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। খুবই সম্মানের সঙ্গে বলছি, আপনারা (কমিটির বর্তমান সদস্য) জায়গাটা (পদ) ছেড়ে দেখেন। আপনারা খুব একটা দুঃখ পাবেন না, মন খারাপ করার মতো কিছু ঘটবে না। বিশ্বাস করেন।'
'দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পী সমাজ'-এর ব্যানারে এদিন বিকাল তিনটায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের স্স্নোগান 'কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই'। এতে অভিনয়শিল্পীরা সংগঠন সংস্কার নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরেন।
আজমেরী হক বাঁধন ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামল মাওলা, খায়রুল বাসার, মনোজ প্রামাণিক, সাবেরী আলম, সোহেল মন্ডল, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, ইমতিয়াজ বর্ষণ, সমাপ্তি মাসুক, এলিনা শাম্মি প্রমুখ।
শ্যামল মাওলা বলেন, 'কয়েকদিন হলো শিল্পীদের একটি রাজনীতি পক্ষ প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু এটা তো আমরা চাই না। আমরা একই পরিবার, এক ছাতার নিচে সবাই থাকতে চাই। আমাদের কোনো পক্ষ থাকতে পারে না। কারণ শিল্পীদের কোনো পক্ষ নেই। শিল্পীদের সব বিষয় নিয়ে আমরা শিল্পী সংঘের নেতাদের সঙ্গে আলাপে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বসছেন না। আমরা কি তাহলে শিল্পী না?'
নাজিয়া হক অর্ষা বলেন, '৫ আগস্টের পর নতুনভাবে আমাদের দেশের পথচলা শুরু হয়েছে। আমাদের সিনিয়র শিল্পীরা গত দুই মাসে যে সব কুকর্ম করেছেন, তার কটুকথা আমাদেরও হজম করতে হয়েছে। এখন দেশের সবখানে সংস্কার চলছে। আমরা মনে করি, আমাদের শিল্পীদের জন্য সেটা আগে জরুরি। শিল্পী হিসেবে আমি তো কোনো দলভিত্তিক কাজে ছিলাম না। আমি তো ন্যায়কে ন্যায় বলব অন্যায়কে অন্যায়। যদি সেটা না করতে পারি তাহলে আমি কিসের শিল্পী। কিন্তু আমাদের সংগঠনের কিছু শিল্পী-নেতাদের কারণে আজ আমরা জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়েছি। সেজন্য আমরা শিল্পী সংঘের কিছু বিষয় নিয়ে নেতাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বসতে নারাজ। শেষে আমি বলতে চাই, আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে না বসেন, তবে
এতদিন আপনারা যা করেছেন সেগুলোর উত্তর
আপনাদের দিতেই হবে।'
বক্তব্যে খায়রুল বাসার বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা নজিরবিহীন। জুলাই-আগস্ট মাসে ৬ শতাধিক প্রাণ ঝরেছে। এই আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে আমাদের শিল্পীদের সংগঠন 'অভিনয়শিল্পী সংঘ'র কিছু নেতা ও সদস্য 'আলো আসবেই' গ্রম্নপ খুলেছিলেন। এখন আমরা রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে বন্ধুরা 'আলো আসবেই' বলে আমাদের অপমান করে। সরকার পতনের পর পুরো দেশে যখন সংস্কার চলছে তখন আমরা আমাদের শিল্পীদের সংগঠন 'অভিনয়শিল্পী সংঘ'র সংস্কার চেয়েছি। আমরা তাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। কিন্তু শিল্পী-অশিল্পী দোহাই দিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা শিল্পীসুলভ বলে আমরা মনে করি না। তাই তাদের সসম্মানে
\হবিদায় নেওয়া উচিত।'
এর আগে এই ব্যানারে ৭ সেপ্টেম্বর ৪৬ জন শিল্পী একটি জরুরি বৈঠকে বসেন অভিনয়শিল্পী সংঘ সংস্কার করার লক্ষ্যে। তাতে সাড়া দেয়নি সংঘের কর্তারা। ফলে সেই বৈঠক থেকে, ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটির সদস্যদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
এদিকে বেহাতের পথে অভিনয়শিল্পী সংঘের অফিসের জন্য বরাদ্দ সরকারি পস্নট। চলতি বছরের ৩ মে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজধানীর আফতাব নগরে একটি পস্নট বুঝে পেয়েছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতারা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সেই পস্নট এখন বেহাতের পথে! এরমধ্যে জানা গেল, অভিনয়শিল্পীদের সেই পস্নটের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে সাইনবোর্ড। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম। তিনি বলেন, 'পটপরিবর্তনের পরই সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে ওই জায়গার। কে বা কারা কাজটি করেছে জানি না।'
কিন্তু প্রাচীর ভাঙলেও পস্নটের মালিকানা নিশ্চয়ই বেহাত হচ্ছে না। এমন আশাবাদের বিপরীতে এই শিল্পী-নেতার কণ্ঠে হতাশা। বললেন, 'এখন তো অনেক কিছুই ঘটছে। তাই আগাম কিছু বলতে পারছি না।' গত ৩ মে সংঘের বেশ কয়েকজন সদস্য পস্নটটি দেখতে যান। ওইদিন সীমানাপ্রাচীর তুলে দেন নেতারা। ঝুলিয়ে দেন সংঘের সাইনবোর্ড। নেতারা জানিয়েছিলেন, শিল্পীদের প্রশিক্ষণ, মিটিং, একসঙ্গে সময় কাটানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হবে এটি। সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। সেদিন ফেসবুক পোস্টে সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম জানান, 'আজ শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন ঢাকা'র কাছ থেকে তাদের জায়গা বুঝে নিয়েছে।
একই দিন (৩ মে) সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান একটি বিবৃতিতে বলেন, 'জায়গাটি হোল্ডিং নং: ৩২, রোড: ২, বস্নক: সি, জহুরুল ইসলাম সিটি, আফতাব নগর। গতকাল শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন ঢাকার কাছ থেকে তাদের জায়গা বুঝে নিয়েছে। বলা দরকার, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অনেকটাই রোষানলে আছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের কর্তারা। এর মধ্যে শিল্পীদের বড় একটি অংশ বর্তমান কমিটিকে নানাবিধ আলটিমেটাম দিয়েছে পদত্যাগের বিষয়ে।