বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে শুরু থেকেই সরব ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। এক্ষেত্রে পুরোটাই বিপক্ষে ছিল ছোট পর্দার শিল্পীদের সংগঠন 'অভিনয়শিল্পী সংঘ'।
সরকার পতনের পর ছাত্রদের আন্দোলনে যারা নীরব বা বিপক্ষে ছিল এমন বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই পদত্যাগ করলেও 'অভিনয়শিল্পী সংঘ'র ক্ষেত্রে তেমন দেখা যায়নি। যে কারণে এবার সংগঠনটির প্রতি ২১টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন অভিনেত্রী বাঁধন। গত রোববার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্নগুলো তুলে ধরে বাঁধন লিখেছেন-
১. চলমান এই সংস্কারের আলাপের বিষয়টা আপনারা যারা সংগঠনের সদস্য আছেন কমিটির পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে তারা শেয়ার করেননি কেন?
২. সংগঠনের পক্ষ থেকে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি রাষ্ট্রের ক্রাইসিস মুহূর্তে যে বিবৃতি প্রদান করেছে সেটার জন্য সাধারণ সদস্যদের অনুমতি নেওয়া হয়নি কেন?
৩. এখন যে তারা বলছেন, তারা তখন এত কিছু করেছেন সেটা সব সাধারণ অভিনয়শিল্পী জানেন না কেন?
৪. কেন তারা 'আলো আসবেই' হোয়াটস অ্যাপ গ্রম্নপে এমন আলোচনা হচ্ছে জেনেও গণহত্যাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন?
৫. তারা কেন প্রতিবাদ করেননি জোরালোভাবে?
৬. কেন একটা ন্যাশনাল ক্রাইসিসে তারা এমন আচরণ করবেন?
৭. আমরা তাদের আমাদের প্রতিনিধি মনে করি। আমরা তাদের দেশের সব অভিনয়শিল্পীর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করি। প্রতিনিধিরা এমন কেন হবে যে অন্যায়কে সমর্থন করে?
৮. কোন দল কী করছে সেটার দায় শিল্পী কেন নেবে?
৯. এটা তো গঠনতন্ত্রের বিরোধী। এটা তো একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তাহলে কীভাবে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির পাপেট হয়ে গেল এই সংগঠন?
১০. সাধারণ কিছু অভিনয়শিল্পী সংগঠনের সঙ্গে বসতে চাইলেন যখন তাদের মতামত প্রকাশের জন্য, তখন সেই বিষয়ে তারা কেন আপনাদের সঙ্গে আলাপ করলেন না?
১১. জানতে চান, সংগঠন কেন পেশাদার অভিনয়শিল্পী হিসেবে যে স্বার্থ, মর্যাদা, অধিকার রক্ষার দায়িত্ব গঠনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে নিলেন, সেই দায়িত্বে তারা ব্যর্থ হলেন কেন?
১২. একটা ক্লোজ ডোর বৈঠক করতে চাওয়া হয়েছিল, দুই পাশে দুটি ক্যামেরা। সবাই সবার প্রতি সম্মান রেখে কথা বলার আহ্বান জানানো হয়েছিল। তারা সেখানে কেন কে সদস্য আর কে সদস্য না সেটার প্রশ্ন তুললেন?
১৩. অভিনয়শিল্পীরা তো অভিনয়শিল্পী সংগঠনের সঙ্গেই কথা বলবে। অন্য কারো সঙ্গে না। সেটাকে তারা সম্মান দেখালেন না কেন?
১৪. এটা শুধু আমার, ওনাদের, তোমার, এমনটা হবে কেন?
১৫. আমরা একটা কেমন সংগঠন দেখতে চাই- সেই ভিশন শেয়ার করার সুযোগ কেন থাকবে না?
১৬. এটাতো সব দৃশ্যমাধ্যমের পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের একমাত্র সংগঠন হওয়ার কথা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। তাহলে সেটা এখনো কেন হলো না?
১৭. অধিকাংশ অভিনয়শিল্পী কেন জানেন না যে আসলে সংগঠন এর কাজ কী? কী হবে এটা করে? এটার সদস্য কেন হবেন? সেই আগ্রহ এ সময়ের অভিনয়শিল্পীদের তৈরি হচ্ছে না কেন?
১৮. কেন গেস্নাবালি এই সংগঠনটা ডেভেলপড হয়নি এতদিনেও?
১৯. কেন এতদিনেও স্বীকৃতি পায়নি যে অভিনয় একটি পেশা? কোথায় আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি?
২০. কেন এই সংগঠনের যা যা করার কথা ছিল, কেন তারা তা করতে পারেননি?
২১. 'কেন আমরা লজ্জিত হলাম, অপমানিত হলাম? এটা কি কার্যকরী কমিটির ব্যর্থতা নয়?'
প্রশ্ন শেষে বাঁধন লেখেন, 'আমাদের সম্মানহানির দায় সংগঠনের সব ডিসিশন মেকারের। তাই আমরা এসব জিজ্ঞাসায় পুরো কমিটিকে ক্লোজড ডোরে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিত সৃষ্টি না হয়। তারা কী করলেন, বিভেদ তৈরি করলেন। যেহেতু আপনারা বিভেদকারী এবং আপনাদের সব অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসার সদিচ্ছা নেই, আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি পিস্নজ দায়িত্ব ছেড়ে দেন।'
সবশেষ এই অভিনেত্রীর আহ্বান, 'চলেন সবাই মিলেমিশে সব দৃশ্যমাধ্যমের পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে একত্রিত করে সংগঠিত হয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের সব স্বার্থ, অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করি। আমাদের বর্তমান সংগঠনটিকে সুন্দর করে এমন একটা সংগঠন বানাই যেটা সব অভিনয়শিল্পীর ছায়া হবে। একসঙ্গে ভেদাভেদহীন, অভিনয়শিল্পী পরিচয়ে। শিল্পীদের সব অধিকার, স্বার্থ, মর্যাদা রক্ষা যদি সংগঠন নিশ্চিত করে তাহলেই না অভিনয়শিল্পী নিশ্চিন্তে শুধু অভিনয়টাই করতে পারবে। আসেন
সবাই মিলে জানতে
চাই। সংগঠনকে
প্রশ্ন করি