অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কার চাইলেন শিল্পীরা
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
অভিনয়শিল্পী সংঘ। এটা অ্যাক্টর্স ইকু্যইটি নামেও পরিচিত। বলা যায় এটা দেশের প্রধানতম অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী বিপস্নবের প্রেক্ষাপটে চরম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এই সংগঠনটি। অভিযোগ রয়েছে কিংবা প্রমাণও আছে, সাম্প্রতিক বিপস্নবে বিগত স্বৈরাচার সরকারের হয়ে অত্যন্ত নগ্নভাবে কাজ করেছে এর কর্তারা। শুধু তাই নয়, সংঘের অনেক সদস্য 'আলো আসবেই' নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রম্নপ খুলে তৈরি করেছেন সেই স্বৈরাচার সরকারবিরোধীদের তালিকাও! যার রেশ ধরে জাকিয়া বারী মমসহ অনেক সদস্য অব্যাহতিও নিয়েছেন
এই সংগঠন থেকে।
নতুন বাংলাদেশে এবার আর পদত্যাগেই সমাধান দেখছেন না সংঘের অনেক সদস্য এবং বাইরে থাকা শিল্পীরা। সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর নাগাদ সংগঠনটিকে সংস্কার করার লক্ষ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। বৈঠকের আগেও চিঠি চালাচালি মারফত তাদের বক্তব্য বা দাবি তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে বলে জানান বিপস্নবী কিংবা বিজয়ী পক্ষের শিল্পীদের তরফে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি বলে শনিবারের বৈঠক থেকে কড়া আলিমেটাম ছুড়ে দেওয়া হয়েছে সংগঠন কর্তাদের প্রতি।
এদিন শহরের 'গ্রাউন্ড জিরো'তে বসেছিলেন ৪৭ জন অভিনয়শিল্পী। বিস্তর আলাপ শেষে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কিছু আলটিমেটাম দেওয়া হয়। যেগুলো বৈঠক শেষে সংগঠন কর্তাসহ সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'পারস্পরিক আলোচনা এবং সেখানে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আমরা চাই সংঘের সদস্যসহ দেশের মানুষ সেই সিদ্ধান্তগুলো জানুক এবং নিজেদের মতামত জ্ঞাপন করুক।'
উক্ত বৈঠকে অভিনয়শিল্পী সংঘ সংস্কারের লক্ষ্যে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো উপস্থিত শিল্পীদের বয়ানে যথাক্রমে তুলে দরা হলো-
১. অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকবার আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি। আলোচনার কথা তোলার পর তাদের নিয়ম অনুযায়ী চিঠি পাঠাই। চিঠি পাঠানোর পর ওনারা জানান যে, শুধু সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বসবেন, যারা নন তাদের সাথে বসবেন না। কিন্তু আমরা সকল সাধারণ পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা একসাথে আলোচনা করে সংস্কার করতে চেয়েছি। তাই আজ (৭ তারিখ) ওনাদের গ্রাউন্ড জিরোতে আমরা চায়ের দাওয়াত দিই। কিন্তু ওনারা ফিরতি চিঠিতে জানান যে, সংগঠনের সদস্য যারা নন তাদের সাথে আলোচনা করবেন কিনা সেটা সাধারণ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানাবেন। সংস্কারকামী শিল্পীদের সংগঠনভুক্ত 'সদস্য' কিংবা 'অ-সদস্য' এই সকল শব্দ ব্যবহার করে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। সেই আচরণের প্রেক্ষিতে তাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ মূলক বক্তব্য আশা করছি। আমরা তাদের বলতে চাই বাংলাদেশের সকল অভিনয়শিল্পীকে 'সদস্য' ও 'অ-সদস্য' এই ধরনের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিতে না দেখে 'অভিনয়শিল্পী' হিসেবে দেখুন। আপনাদের সাথে কথা বলার অধিকার যেন সবাই পায়, সে ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং যে ঘটনা আপনারা আমাদের সঙ্গে ঘটিয়েছেন তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেবেন।
২. পরিবর্তনশীল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনমুখর বাংলাদেশে, অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের বর্তমান কমিটি, উপদেষ্টামন্ডলী, কার্যকরী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মধ্যে যারা একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান নিয়ে এবং সমস্ত মানবিক প্রসঙ্গগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন, তাদের সবাইকে পুরো জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। এবং ১০ সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে আমাদের সাথে ওনাদের বসতে হবে।
৩. উলিস্নখিত এক এবং দুই নম্বর প্রস্তাবে যদি ওনারা অনীহা প্রকাশ করেন, তাহলে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে (পারলে আজ বা কালকের মধ্যে) বর্তমান কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং সবাইকে পদত্যাগ
করতে হবে।
৪. পদত্যাগ পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন রিফর্মেশন কমিটি গঠন হবে এবং সেই কমিটির আওতায় আগামী ৬ মাস সময়ের মধ্যে আমাদের সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই সংগঠনটিকে কিভাবে আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সকল পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরা যায় তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করবে। এবং পরবর্তী নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং পরিবেশ তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫.আমরা সংস্কারকামী সমন্বিত সাধারণ অভিনয়শিল্পীবৃন্দের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃশ্যমাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আহ্বান জানাচ্ছি যে- আসুন আমরা একযোগে আমাদের সকল অভিনয়শিল্পীর স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করব যে সংগঠন সেই ধরনের একটি সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করি। আমরা সবার উদ্দেশ্যে বলছি, আসুন বাংলাদেশের সকল দৃশ্যমাধ্যমের পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা মিলে কথা বলা শুরু করি এবং নতুন করে বৈষম্যহীন একটি সংগঠন নির্মাণে একসঙ্গে এগিয়ে যাই।
মোটা দাগে ১০ সেপ্টেম্বর (আজ) পর্যন্ত অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতাদের সময় বেঁধে দিয়েছে সংস্কারকামী সমন্বিত সাধারণ অভিনয়শিল্পীরা। আন্দোলনে যাদের পস্ন্যাটফর্মের নাম ছিলো 'দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ'।
এই জরুরি বৈঠকে ছিলেন মাহাফুজ মুন্না, কামরুজ্জামান তাপু, আরেফিন জিলানী, শ্যামল মাওলা, ফারহানা হামিদ আত্মি, এফ এস নাঈম, মাঈন হাসান, সুষমা সরকার, সাক্ষ্য শাহীদ, তামান্না হক বর্না, কেয়া আল জান্নাহ, উম্মে তাসনিম নাঈমা, শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব, উজ্জ্বল কবির হিমু, এহসানুর রহমান, কাজী নওশাবা আহমেদ, ক্রিস্টিয়ানো তন্ময়, আব্দুলস্নাহ আল সেন্টু, খায়রুল বাসার, অরণ্য বিজয়, জাহিদ চৌধুরী, শাহীন স্মৃতি, মনোজ প্রামাণিক, আহমেদ সাব্বির, হোসাইন জীবন, নাদিয়া আহমেদ, শরীফ সিরাজ, নীলা ইস্রাফিল, মৌসুমি হামিদ, ইন্তেখাব দিনার, জোজোন মাহমুদ, মেহমুদ সিদ্দিকী লেলিন, কাজী ফয়সাল, মোঃ আক্তার হোসেন, সামি দোহা, সাহানা রহমান সুমী, রিয়াজ মহসিন আকাশ, সোহেল মন্ডল, হাসানাত রিপন, সিয়াম নাসির, পাভেল জামান, ইমরান হাসো, মীর নওফেল আশরাফি জীসান, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ও আজমেরী হক বাঁধন।