আসছে বুলবুল আহমেদের বায়োপিক
প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
১৯৬৮ সালে 'পূর্বাভাস' নাটক দিয়ে অভিনয়জীবন শুরু করেন প্রয়াত গুণী অভিনেতা বুলবুল আহমেদ। নিজের অভিনয় দক্ষতায় বহুমাত্রিক চরিত্রে একের পর এক নাটক-সিনেমায় কাজ করে জায়গা করে নিয়েছেন দর্শকদের মনে। তিনটি সিনেমা আবার সর্বকালের সর্বসেরা ১০ ছবির তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে, যা আজও দাগ কেটে আছে ভক্তদের মনে। পৃথিবীতে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে সবার মাঝে এখনো বেঁচে আছেন তিনি। তার সময়ে যারা সব সময় সুস্থধারার সিনেমায় অভিনয় করতেন তার মধ্যে বুলবুল আহমেদ একজন। সুস্থধারার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বুলবুল আহমেদ ছিলেন একমাত্র ট্রেড মার্ক অভিনেতা। নিজে ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, তাই ছবি করার ব্যাপারেও নিজের শিক্ষার গুণের প্রতি সব সময় সশ্রদ্ধ ছিলেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল বুলবুল আহমেদের ৮৫তম জন্মদিন। পারিবারিকভাবেই উদযাপন করা হয় তার প্রতিটি জন্মদিন। এদিনও বাড়িতে ছিল মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন। এতিমখানার ছাত্রদের বাসায় দাওয়াত করে বুলবুল আহমেদের প্রিয় খাবার খাওয়ানো হয়েছে বলে জানান অভিনেতার মেয়ে ঐন্দ্রিলা আহমেদ।
পাশাপাশি অভিনেতার ভক্তদের সুখবরও দিলেন তিনি। জানালেন, বুলবুল আহমেদের বায়োপিক নির্মাণ করবেন ঐন্দ্রিলা। এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে অভিনেত্রী বলেন, আমি আব্বুর জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। আমি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আশা করছি আমি সুন্দর কিছু করতে পারব। এরই মধ্যে আব্বুকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করেছি, প্রশংসা পেয়েছি।
বুলবুল আহমেদের সিনেমায় নায়ক কে হবেন? জানতে চাইলে ঐন্দ্রিলা বলেন, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না বাবার চরিত্রে কাকে নিয়ে কাজ করব। সিনেমার কাজ শুরু করলে তখন এ নিয়ে ভাবব। ওই সময়ে যাকে আব্বুর চরিত্রে উপযুক্ত মনে হবে, তাকেই প্রস্তাব দেব।
তিনি আরও বলেন, আব্বুর বিভিন্ন সময়ের বয়সের চরিত্রে অভিনেতা প্রয়োজন হবে। একেক বয়সের চরিত্রে ভিন্ন ভিন্ন অভিনেতার প্রয়োজন। আব্বুর চলচ্চিত্রজীবন বিশাল
ও বর্ণাঢ্য। তার জীবনে অনেক মজার মজার ঘটনাও রয়েছে। আমি বাবার বায়োপিকে তাকে পরিপূর্ণভাবে
তুলে ধরার চেষ্টা করব।
২০১০ সালের ১৫ জুলাই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক বুলবুল আহমেদ। তিনি ঢাকার আগামাসি লেনে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস নিয়ে মাস্টার্স করা বুলবুল আহমেদের মেধাবী ছাত্র হিসেবে বেশ সুনাম ছিল। মামাতো ভাই গায়ক প্রবীণ নাট্য ও চলচ্চিত্রশিল্পী নাজমুল হুদার হাত ধরে ১৯৫৮ সালে মঞ্চনাটক দিয়ে অভিনয়জগতে পা রাখেন। ১৯৬৮ সালে টেলিভিশনে এবং দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে 'ইয়ে করে বিয়ে' সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডের ছবিতে কাজ
শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। তবে চাষী নজরুল
ইসলামের 'দেবদাস'-এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পান তিনি। এটি তখনকার সময়ে ভালো ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল। এই সিনেমার পরই বুলবুল আহমেদকে 'দেবদাস'
নামে ডাকা হতো।
বুলবুল আহমেদ পেশাগত জীবনে জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রকৃত নাম তোবাররুক আহমেদ।
বুলবুল আহমেদের ক্যারিয়ারের উলেস্নখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- 'বৌরানী', 'ঘর সংসার', 'বধূ বিদায়', 'দেবদাস', 'ছোট মা', 'আরাধনা', 'সঙ্গিনী', 'সময় কথা বলে', 'স্মৃতি তুমি বেদনা', 'শেষ উত্তর', 'সীমানা পেরিয়ে', 'রুপালী সৈকতে', 'ধীরে বহে মেঘনা', 'মোহনা', 'মহানায়ক', 'পুরস্কার' ও 'সোহাগ'।
১৯৭৬ সালে আলমগীর কবির নির্মিত 'সূর্যকন্যা' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে 'জহির রায়হান পুরস্কার' পান বুলবুল আহমেদ। সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন বুলবুল আহমেদ।
বুলবুল আহমেদ মূলত পরিচালক আলমগীর কবিরের সিনেমায় অভিনয় করেই বিখ্যাত হন। আলমগীর কবিরের প্রায় ছবিই তিনি করেন। বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বসেরা যে ১০ সিনেমা আছে তার তিনটিই আলমগীর কবিরের। আর চমকপ্রদ যে, এই তিনটি সিনেমার নায়কই ছিলেন বুলবুল আহমেদ। ছবিগুলো হলো 'রুপালী সৈকতে', 'সীমানা পেরিয়ে', 'ধীরে বহে মেঘনা'। বাংলাদেশের ক্লাসিক সিনেমার নায়ক বুলবুল আহমেদ। এই তিনটি সিনেমার দুটিতে তার বিপরীতে ছিলেন জয়শ্রী কবির।
বুলবুল আহমেদের মেয়ে বলে নয়, অভিনয়গুণেই মিষ্টি মেয়ে ঐন্দ্রিলা ছিলেন দর্শকদের বিশেষ পছন্দের। কিংবদন্তি বাবা চলে গেছেন, মা অভিনেত্রী ডেইজি আহমেদ আছেন। নাচ, গান, অভিনয় কমিয়ে ঐন্দ্রিলা এখন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। দেড় বছর বয়স থেকে ঐন্দ্রিলা ক্যামেরার সামনে। অভিনয় করেছেন বহু নাটকে। 'রূপনগর', 'মোহর আলী', 'জীবন কাহিনী', 'শেষ থেকে শুরু', 'অভিমানে অনুভবে'সহ বহু নাটক। গানও গেয়েছেন ঐন্দ্রিলা। বাবার নাটকের টাইটেল গান, নিজের একক গান, নাটক ও সিনেমার জন্য গান করলেও অ্যালবাম
\হকরা হয়নি তার।