বৈষম্যের নিপীড়নে চাপা পড়েছিলেন ন্যান্সিও
প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
বিগত ভয়াল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়ে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের শিল্পীদের মধ্যে যারাই সরকারের নেক নজরে আসতে পারেননি তারাই শোবিজে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েছিলেন। শিল্প-সংস্কৃতির কোথাও তাদের ডাকা হতো না। মাঝামাঝি লেভেলের তো বটেই, এমনকি একেবারে টপ লেভেলের শিল্পীরাও মাইনাস হয়ে গেছেন। তাদের অন্যতম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। অথচ একটা সময়ে তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয় তারকা শিল্পীদের অন্যতম। এমন কোনো শ্রোতা ছিল না যারা ন্যানসির গান
শোনা থেকে বিরত থাকতেন।
তার সুরেলা কণ্ঠ আর মন ছুঁয়ে যাওয়া গানের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখতেন ভক্তদের। কিন্তু বিগত ভয়াল স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময়ে তার সেই কণ্ঠও রোধ করে রাখা হয়েছিল, যাতে সাধারণ মানুষ তার গান না শুনতে পারে। কোথাও তাকে গান গাইতে ডাকা হতো না। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও তাতে ডাকা হতো না। রেডিওতে ডাকা হতো না। পেস্ন-ব্যাকে ডাকা হতো না। এভাবে বিগত সরকারের গোটা সময়টা তার কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল। সুন্দর সুরেলা কণ্ঠের পরিবর্তে
শ্রোতাদেও গেলাতে বাধ্য করা হতো যত সব
আজেবাজে শিল্পীদের গান।
এমনকি কোনো সিনেমায় পেস্ন-ব্যাকের জন্য চুক্তি করলেও তাকে আর ডাকা হতো না। নেওয়া হয়েছে হয়তো কোনো আজেবাজে শিল্পীই। এরকমও নাজেহাল হতে হয়েছে ন্যানসিকে। জাতির সৌভাগ্য ইউটিউব ছিল বলে। এখানেই মাঝেমধ্যে নিজের গান আপলোড করে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছিলেন নিজেকে নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। বলতে গেলে একপ্রকার হতাশার মধ্য দিয়েই দিনগুলো কাটিয়ে দিতে হয়েছে বিগত ভয়াল স্বৈরাচারের সময়টা।
এই রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেভাবে তেমন একটা গান গাওয়া কিংবা কোনো কনসার্টে অংশ নিতে পারেননি এই গায়িকা। অন্যদিকে তারই অনেক সহকর্মী বিগত সরকারের আমলে পেয়েছেন নানা সুযোগ-সুবিধা। হয়েছেন এমপি-মন্ত্রীও। তবে এবার সরকার পতনের পর ফের সরব হয়েছেন ন্যান্সি। কথা বলছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এবার শিল্পীদের এমপি-মন্ত্রী হওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন তিনি।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ন্যানসি বিগত সরকারের আমলে শিল্পীদের নমিনেশন কেনা প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন, আমাদের পূর্বের কিছু মানুষ এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য নির্লজ্জের মতো ছোটাছুটি করেছে। যোগ্যতা না থাকার পরেও তারা নির্বাচন এলে নমিনেশন কিনতে দৌড় দিত। এমনকি তাদের রাজনৈতিক জ্ঞান-প্রজ্ঞাও ঠিকমতো নেই। তাদের বাসনা একটাই, এমপি-মন্ত্রী হতেই হবে! তিনি বলেন, শিল্পীদের এত এমপি-মন্ত্রী হওয়ার শখ
কেন? কী আছে সেখানে? কত টাকা বেতন পায় এমপিরা? গান অথবা অভিনয় করে কি যথেষ্ট সম্মানী আসে না, যেটা এমপি হওয়ার জন্য লোভ করতে
হবে? যারা এগুলো করে এদের ধরা উচিত।
আমার মধ্যে এসব চিন্তা একেবারেই নেই।
জনপ্রিয় এই গায়িকা বলেন, আমি এখনই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই না। তবে যে দল আমার ভালো লাগে, আমি তো চাইবই তারা ক্ষমতায় আসুক। তবে সবকিছুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দেশের জনগণ। জনগণের কাছে আমার চাওয়া এতদিন যারা কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করে গুম, দুর্নীতি এবং কিছু বললেই চরিত্র নিয়ে কথা বলত, তাদের ক্ষমতায় আনবে কি না মাথায় রাখতে। আর কোনো তারকা দেখলেই নমিনেশন দেবেন না। যদি সেই
তারকা রাজনীতির লম্বা পথ পাড়ি দিতে পারে তাহলে তাকে সেই টাইমে দেওয়া উচিত। তারপর তাকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন।
ন্যান্সি আরও বলেন, যারা মানুষের মৃতু্যতে কাঁদেনি কিন্তু স্থাপনা নিয়ে হা-হুতাশ করেছে আশা করব তাদের এবার বোধোদয় হবে। আমি চাইব, আমার ওপর যে অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়ন করা হয়েছে, তাদের যেন সেসব অত্যাচার সইতে না হয়।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হওয়ায় আমার বাবার চাকরি শেষে পেনশনের এককালীন টাকা পর্যন্ত আটকে দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবা সারাজীবন সততা নিয়ে চাকরি করেছেন, কোনো অভিযোগ ছিল না তার ওপর। তাকেও চাকরি শেষে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল। নিজের রাজনৈতিক দর্শন জানিয়ে ন্যান্সি বলেন, আমার রাজনীতি করার জন্য যতটুকু জ্ঞান থাকা দরকার আমি মনে করি কোনো রাজনৈতিক টক শোতে গিয়ে কথা বলার মতো যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারেনি। তবে অবশ্যই আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ রয়েছে। যদি কেউ বলে তার মধ্যে রাজনীতির ভাবনা নেই এটা মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক ভাবনা না থাকলে সে নির্বাচনে পছন্দের দলকে ভোট দেয় কীভাবে?