আন্তর্জাতিক অভিযাত্রায় মেহজাবীন
প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
ছোট পর্দায় টানা কয়েক বছর কাজ করে নাটকের শীর্ষ অভিনেত্রীর তকমা অর্জন করেছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী। ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে নানা চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এরপর অবশ্য গতানুগতিক গল্প এবং নতুনদের সুযোগ দেওয়ার জন্য নাটকে কাজ প্রায় বন্ধই করে দেন। মনের মতো হলে সিনেমা কিংবা ওয়েবের কাজ করবেন বলেও জানান। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কাজ করছেন। এদিকে নতুন খবর হলো, মেহজাবীন এরই মধ্যে তার অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করে ফেলেছেন। শুধু তা-ই নয়, 'সাবা' নামের এ সিনেমাটি টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অফিসিয়ালি নির্বাচিত হয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শিত হবে ছবিটি। ছবিটির পরিচালক মাকসুদ হোসাইন। মেহজাবীন জানালেন, পরশু রাতে টিকিট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বন্ধুদের জন্য তিনটি টিকিট কাটার চেষ্টা করেও পাননি। টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকের জন্য সাবা সিনেমার তিনটি প্রদর্শনী রয়েছে। বাকি দুটি শো ৮ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। আরেকটি শো শুধু আমন্ত্রিত সাংবাদিক, নির্মাতা ও শিল্পীদের জন্য।
প্রিমিয়ারে ছবিটি টরন্টোর বন্ধুদের সঙ্গে বসে দেখতে পারছেন না বলে আফসোসে পুড়ছেন মেহজাবীন। তবে ৮ সেপ্টেম্বরের প্রদর্শনীতে তিনি থাকবেন, ইতোমধ্যে তিনটি টিকিটও কেটে ফেলেছেন। বিষয়টি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। মেহজাবীন বলেন, আমার প্রথম সিনেমায় আমি চেয়েছিলাম এমন একটা চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে, যা অডিয়েন্সকে অন্তত অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও ভাবায়। এবং অবশ্যই যে চরিত্র দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দুই পরিসরের দর্শকের সঙ্গেই মেলবন্ধন তৈরি করে। আমি সৌভাগ্যবান যে, আমার সেই চেষ্টা, সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। কানাডায় অবস্থানরত আমার সব ভক্ত এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাতে চাই, আমার টিমের সঙ্গে 'সাবা' এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার দেখার সুযোগ আপনারাই সর্বপ্রথম পেতে যাচ্ছেন। আশা করছি নিজের দেশের সিনেমা আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে দেখার অনুভূতি আপনাদের উপস্থিতির কারণে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
এই সিনেমায় মূল চরিত্রে দেখা যাবে মেহজাবীনকে। তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর অসুস্থ মাকে নিয়ে সাবার জীবনসংগ্রামকে পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা মাকসুদ হোসেন। ছবির গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তফা মনওয়ার। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মেহজাবীন ও মোস্তফা মনওয়ারের যাওয়ার কথা রয়েছে। ফিউশন পিকচারসের ব্যানারে নির্মিত ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন মাকসুদ ও ত্রিলোরা খান। চিত্রগ্রহণ করেছেন বরকত হোসেন পলাশ।
টরন্টো উৎসবে নিজের সিনেমা মনোনীত হওয়ার অনুভূতি জানিয়ে মাকসুদ নির্মাতা বলেন, '২১ বছর ধরে প্রচুর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানিয়েছি, বিজ্ঞাপনচিত্র পরিচালনা করেছি। স্বপ্ন ছিল, একদিন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাব। গত বছর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি। নিজের প্রথম ছবি এত বড় উৎসবে প্রদর্শনীর সুযোগ পাবে, খবরটি আমাকে আপস্নুত করেছে।'
এখনো দেশে মুক্তি পায়নি 'সাবা'। ছবিটি দেশের দর্শকের সামনে কবে আসবে, জানতে চাইলে নির্মাতা মাকসুদ গণমাধ্যমকে জানান, আগামী বছরের শুরুর দিকে ছবিটি দেশে মুক্তি পাবে। এর আগে ছবিটি নিয়ে আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করছেন মাকসুদ হোসেন। নির্মাণের পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার হিসেবেও তিনি পরিচিতি। বর্তমানে বেবিমুন নামে পরবর্তী সিনেমার চিত্রনাট্য করছেন তিনি।
'সাবা' চলচ্চিত্রটি নিয়ে মেহজাবীনের নিজের আলাদা একটা অনুভূতিও কাজ করে। নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওই স্ট্যাটাসে মেহজাবীন লিখেছেন, '২০২৩ সালের শুরুতেই আমরা এই চলচিত্রের কাজ সম্পন্ন করি। 'সাবা' অর্থ যেমন সকাল, সকালের মৃদু বাতাস; আশা করছি আমার চলচ্চিত্র জীবনের সকালটিকেও সবাই অকৃত্রিম ভালোবাসায় আচ্ছন্ন করে রাখবেন। গল্প, চরিত্র, পরিচালকের নির্মাণ, গুণী অভিনয়শিল্পী ও নেপথ্যের মেধাবী কলাকুশলীদের সঙ্গে আমার অভিনয়ের সুযোগ- সব মিলিয়ে 'সাবা' আমার জীবনে সব সময়ই বিশেষ একটি নাম হয়ে থাকবে।'
'লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৯' প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেহজাবীন অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত 'তুমি থাকো সিন্ধুপারে'। এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর তিনি একে একে কাজ করেন 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই', 'কল সেন্টার', 'মেয়েটি শুধু তোমার জন্য', 'আজও ভালোবাসি মনে মনে', 'হাসো আন লিমিটেডসহ' বেশকিছু নাটকে। হয়ে ওঠেন ছোট পর্দার অলিখিত রানী।
২০১৩ সালে শিখর শাহনিয়াত পরিচালিত নাটক 'অপেক্ষার ফটোগ্রাফি' ছিল মেহজাবীনের জন্য বড় একটি টার্নিং পয়েন্ট। ২০১৭ সালের ঈদুল আজহায় মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় বড় ছেলে'তে অভিনয় করে আবারও শীর্ষে চলে আসেন এই অভিনেত্রী। দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয় মেহজাবীন ও জিয়াউল ফারুক অপূর্ব অভিনীত এই নাটকটি। ২০২০ সালে এই অভিনেত্রী নাম লিখিয়েছেন গল্পকার হিসেবে। 'থার্ড আই' তার লেখা প্রথম নাটকের গল্প।
তবে এতদিন মেহজাবীনের পরিচয় ছিল ছোট পর্দার আঙিনায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়। এতদিন তার কোনো চলচ্চিত্রে অভিযাত্রা হয়নি। আর কী অবাক কান্ড ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় পা রাখার প্রথম অভিযাত্রাতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পা রাখলেন! বাকি থাকবে এই প্রথম সিনেমাতেই কোনো পুরস্কার হাতে ওঠে কি না মেহজাবীনের। সে জন্য দর্শকের জন্য অপেক্ষাতেই রাখলেন উচ্ছ্বসিত মেহজাবীন।