বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তারকাদের
প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিলস্না, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কে ভাঙন ও পানি উঠায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ এবং প্রাণী বিপদগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও।
দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেশবাসীকে বন্যার্তদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে ফারুকী লেখেন, মনে করেন আমরা যুদ্ধে আছি। তাহলে কি করতাম? সবাই মিলে ঝাঁপাইয়া পড়তাম। তাহলে চলেন এখনো তাই করি। নৌ-সেনা-বিমানবাহিনীর ভাই-বোনেরা, লেটস স্টেপ আপ। রেসকিউ বোট-কার্গো বিমান যা কিছু আছে তা নিয়ে দ্রম্নত উদ্ধারের গতি বাড়াই চলেন। কথা বলে যা জানলাম, মানুষের এই মুহূর্তে প্রয়োজন রেসকিউ বোট। লাখো মানুষ উদ্ধার করা একটা হারকুলিয়ান টাস্ক। বাট লেটস ডু ইট। দুর্গত এলাকার কাছে-দূরে যেখানে যত স্পিডবোট- ইঞ্জিন নৌকা আছে, সেগুলা নিয়ে ঝাঁপাইয়া পড়ি চলেন। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট না নিয়ে কেউ যাবেন না দয়া করে। বিপদ আমাদের কেবল একতাবদ্ধই করবে। নো ওয়ান ক্যান ব্রেক আস।
সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর লেখেন, বন্যা অ্যালার্ট। উজানের পানি স্বাগতম, পলি মাটি আমাদের। হাতে হাত রেখে ষড়যন্ত্রের বন্যা মোকাবিলা করবা- ইনশাআলস্নাহ।
ফেসবুকে বন্যার কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেন চিত্রনায়িকা বুবলী। ছবিগুলোয় দেখা যায় প্রবল গতিতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে, কেউ জীবন রক্ষায় গামলায় ভাসিয়েছেন শিশু। আবার কাউকে দেখা যায় গৃহপালিত প্রাণীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সব মিলে দুর্বিষহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বুবলী লিখেছেন, 'নোয়াখালী, ফেনী, কুমিলস্না, লক্ষ্ণীপুর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। লাখো মানুষ এবং অবলা প্রাণীরা বিপদগ্রস্ত। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আলস্নাহ সবাইকে হেফাজত করুন।'
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সূত্রহীন পানিতে নিমজ্জিত একটি শিশুর ছবি। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে চারদিকে অথৈ জলরাশি, তার মাঝে আটকে আছে একটি শিশু। বড় বড় দুটি চোখে অবাক বিস্ময়! মধ্যরাতে ছড়িয়ে পড়া নিষ্পাপ শিশুটির ছবি ঘুম কেড়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে শোবিজ অঙ্গনের তারকাদেরও। সামাজিকমাধ্যমে নিজেদের কষ্টের অনুভূতি শেয়ার করেছেন তারকারা। ছবিটি প্রকাশ করে ফেসবুকে পরীমনি লিখেছেন, 'আলস্নাহ! কী করব আমি! বুকের ভেতর দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। এই চোখের দিকে তাকিয়ে কি করে ঘুমবো!' বন্যাকবলিতদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে নায়িকা লিখেছেন, 'আলস্নাহ তুমি সহায় হও। কেউ নাই আর এখন। আমি যাব। আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে যা করার করব ইনশাআলস্নাহ।'
অস্ট্রেলিয়ায় বসে স্থির নেই শাবনূর। একই ছবি প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, 'আলস্নাহ, দেশের মানুষগুলোকে রক্ষা করো!' পুজা চেরী সরাসরি স্রষ্টার উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, 'এই অবুঝ চাহনি। হে ঈশ্বর তুমি কি দেখছ না?'
চিত্রনায়ক জায়েদ খানের ভেতরও হু হু করে উঠেছে নিষ্পাপ শিশুটির মুখ দেখে। তিনি লিখেছেন, 'কোনোভাবেই সহ্য করার মতো না। এটা দেখার পর মানুষ কীভাবে থাকে। বুকের ভেতরটা কাঁদছে যতবার দেখছি। আলস্নাহ আপনি এই মাসুম বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে সব বন্যাবাসী মানুষকে হেফাজত করেন।'
অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ কিছু লিখতে পারেননি অসহায় বিপদগ্রস্ত শিশুমুখটির দিকে তাকিয়ে। শুধুই লিখেছেন, 'আহারে আহারে।'
এমন পরিস্থিতিতে দেশকে বন্যা থেকে রক্ষার আকুতি জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসও। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বন্যা আক্রান্ত একটি ডামি ছবি শেয়ার করে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা করেন তিনি। ক্যাপশনে অভিনেত্রী লিখেছেন, 'সর্বশক্তিমান আলস্নাহ, আমাদের দেশকে বন্যা থেকে রক্ষা করো।' অপু বিশ্বাসের সেই পোস্টে নিজেদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন ভক্তরাও। একই সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করেন সবাই। পাশাপাশি একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার অনুরোধও জানান।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসানও তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গত শুক্রবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন 'গেরিলা'খ্যাত এই অভিনেত্রী।
জয়া আহসান লেখেন, 'কোনো পূর্বাভাস না দিয়ে প্রলয়ের মতো কী এক বন্যা এসে দেশের পুবদিক একেবারে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মানুষের অসহায়তার ছবি দেখে মনটা ভারী হয়ে আছে। মানুষই এর উপশম দিতে পারে। মানুষ এক হলে কেমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটাতে পারে, সেটা আমরা ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে বিস্মিত হয়ে দেখেছি। একটা ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি।' আত্মবিশ্বাসী জয়া দেশের সব মানুষকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জয়া আহসান লেখেন, 'এখন তো আমাদের দেশটা গড়ার নতুন সময়, এখন তো হাতে হাত রেখে কাজ করার জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত হচ্ছিলাম, রিবিল্ড, রিফর্ম বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের, সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশের স্বপ্ন। আবার এক হলে এই বিপদ থেকেও মানুষকে উদ্ধার করতে পারব।' ঢাকা থেকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত জয়া আহসান। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী লেখেন, 'ঢাকা থেকে যেকোনো সাহায্যের জন্য আমি প্রস্তুত। আপনাদের কাছে আমার প্রার্থনা, যতটা পারি আমরা সবাই এগিয়ে আসলে অনেকগুলো জান বেঁচে যাবে। প্রত্যেকটি প্রাণীর নিরাপত্তা আমাদের সবার নিশ্চিত করতেই হবে। আমাদের ডোনেশন যাতে বিশ্বাসযোগ্য সংস্থাগুলোর কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জয়া আহসান লেখেন, 'এই পোস্টের থ্রেডে কিছু সংস্থার লিংক শেয়ার করা হলো, যারা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য দিন-রাত কাজ করছে। আসুন সবাই যার যার অবস্থান থেকে সাহায্যের চেষ্টা করি।'
এদিকে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজের ব্যানারে একদল শিল্পী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সংগঠনটি ফান্ড সংগ্রহের জন্যও মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি জানান, দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অর্থ সংগ্রহ করছে। সেই অর্থ নিয়ে পস্নাবিত এলাকায় ছুটে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সবাই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াবেন।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা লিখেছেন, বন্যার এই বিপদে আমাদের একে অন্যের পাশেই থাকতে হবে। আমরা বাংলাদেশিরা অনেক শক্তিশালী, এটি অলরেডি আমরা প্রম্নভ করেছি। সো লেটস প্রম্নভ ইট অ্যাগেইন। ফেনী, কুমিলস্না, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালীবাসীর জন্য এগিয়ে আসুন।
অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ বলেছেন, দক্ষ কোনো রেসকিউ টিম আছে, যারা হেলিকপ্টার করে বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারবে? হেলিকপ্টার ভাড়া হতে শুরু করে যাবতীয় সাপোর্ট দিতে চাই। হেলিকপ্টার ব্যবহার করে এমন আবহাওয়াতে উদ্ধারে যাওয়া সহজ কাজ নয়। এজন্য দক্ষ টিম প্রয়োজন।
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি লিখেছেন, বন্যার্ত মানুষের চোখ, সে চোখের নীরব আর্তনাদ মানসিকভাবে অসুস্থ করে ফেলল। খরা-বন্যা আসে যায়, কিন্তু কিছু কিছু দিন- ছবি, কিছু কিছু সময়কাল স্বাভাবিকতা ব্যাহত করে সব সময়! অসহায় লাগছে! যারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন তাদের প্রাণান্ত শুভ কামনা।
ফেনী, নোয়াখালীসহ বন্যাদুর্গত অন্য অঞ্চলের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। তিনি লেখেন, আসুন সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।
নির্মাতা অমিতাভ রেজা লিখেছেন, নির্লজ্জের মতো এখনই সব দাবি নিয়ে না দাঁড়াই, আগে দেশ বাঁচাই, এরকম বন্যা দেখেনি বাংলাদেশ। অন্যকে দাঁড়াতে না বলে নিজে দাঁড়ান। প্যানিক করবেন না, বর্তমান সরকারকে সাহায্য করেন।
অভিনেতা আরশ খান লিখেছেন, 'যে যার সাধ্যমতো বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াই। সবাই মিলে এক হলে এমন বিপদ মোকাবিলা করা সহজ হবে। আলস্নাহ সহায় হোন। সামর্থ্য যদি ১০০ টাকা থাকে, ওটা নিয়েই এগোই লজ্জার কিছু নেই।'
চিত্রনায়িকা তমা মির্জা ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সেখানে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেছেন।
অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ লিখেছেন, 'ফেনী ভেসে যাচ্ছে। নোয়াখালী ও কুমিলস্না ভয়ংকর বিপদে! আপাতত প্রধান কাজ হচ্ছে সারাদেশ মিলে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো। বেশকিছু স্পিডবোট পরশুরামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আপনাদের যাদের সহযোগিতা লাগবে দ্রম্নত যোগাযোগ করুন।'
চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার লিখেছেন, 'ফেনী, নোয়াখালী, কুমিলস্না অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার অনুরোধ রইল।'
বন্যার্তদের সাহায্য করতে উদ্ধার সামগ্রী নিয়ে ফেনী যাচ্ছেন ইনফ্লুয়েনসার ও সঙ্গীতশিল্পী তাসরিফ খান ও ইউটিউবার কেটো ভাই। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ খবর জানান তাসরিফ। তাসরিফ খান লিখেছেন- লক্ষ্ণীপুর থেকে ট্রাকে করে ২টি স্পিডবোট নিয়ে ফেনীতে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে রেসকিউ করতে যাচ্ছি। আলস্নাহ চাইলে খুব দ্রম্নত পৌঁছে আমরা দুপুর থেকে রাত অবধি কয়েক শিফটে কাজ কারার চেষ্টা করব। কেটো ভাই আর তার টিমও সঙ্গে আছে। সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করব। কার্যক্রম শুরু করে নেটওয়ার্ক পেলে আপনাদের যোগাযোগের নম্বর দেব এবং আপডেট জানাব। বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ জানিয়ে তাসরিফ লেখেন, সিলেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দুঃখের হলেও সত্য যে একটা বড় অংশের মানুষ কিন্তু ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। পরবর্তী সময়ে তারাই সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাদের সম্ভব হলে খুঁজে বের করে সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরাও তা-ই করার চেষ্টা করব।