ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন মনির খান
প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খান। অর্থাৎ নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মনির খানের জীবনের গতিপথই বদলে যেতে শুরু করেছে। গানে মনোযোগী হচ্ছেন আবার নতুন করে। এখন থেকে তাকে আবার দেখা যাবে পেস্ন-ব্যাক, স্টেজ শো, টিভি আর অডিওতে। আর নিজের ইউটিউব তো আছেই। যে ইউটিউবেই গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে চলেছেন। এখন আবার দেখা যাবে রাজনীতির মঞ্চেও। এই রাজনীতির মঞ্চে হয়তো আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগকে পাবেন না। নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হয়তো তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোটা আন্দোলনের ছাত্রদেরই গড়া রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই দেখা যাবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেন। সেবার বলেছিলেন, মন ভেঙে গেছে। গতকাল এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, অভিমান করেছিলেন, মান ভেঙে ছয় বছর পর রাজনীতিতে ফিরছেন তিনি। শুধু দল নয়, মনোনয়ন না পাওয়ার কষ্টে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মনির খান। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও রাজনীতিতে আসছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এই শিল্পী। রাজনীতিতে ফেরা প্রসঙ্গে মনির খান বলেন, 'একটা অভিমান নিয়ে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অভিমানটা ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। সে সময় বিএনপি থেকে না দিয়ে আমাকে জামায়াত থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তখন যেমন অভিমান ছিল, পাশাপাশি তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চাপও ছিল, যেন নির্বাচনে অংশ না নিই। দলের প্রতি অভিমান ও সরকারের চাপ দুই মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর রাজনীতি করব না।' আবারও কেন রাজনীতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন? এ প্রশ্নে মনির খান বলেন, 'অভিমান কার সঙ্গে করা যায়? যার প্রতি বেশি ভালোবাসা থাকে, তার সঙ্গেই মান-অভিমান করা যায়। মায়ের সঙ্গে সন্তানের মান-অভিমান হয়। যেখানে ঘনিষ্ঠতা গভীর, সেখানেই মান-অভিমান হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিমান ভেঙেও যায়। মোটকথা, আমি রাজনীতিতে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমি আমার দলের সঙ্গে আছি।' তিনি আরও বলেন, আমি ঘরের ছেলে ঘরেই আছি। মাঝে দলের সঙ্গে অভিমান ছিল। আর অভিমান তো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও হয়। সেটা আবার মিটে যায়। আমার বেলায়ও সেটাই হয়েছে। তা ছাড়া আমি তো অভিমান করে অন্য দলে যোগ দেইনি। বর্তমানে দলের সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। দলের দুঃসময়ে কাজ করেছি আমি। আমৃতু্য জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গেই থাকতে চাই। সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন মনির খান। সেখানে নিজের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায় ও অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন এই সঙ্গীতশিল্পী। পোস্টের শুরুতে মনির লিখেছেন ১৫ বছর। হঁ্যা, ১৫ বছরই তো! বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট আর বোবা কণ্ঠ নিয়ে কেটে গেল এতগুলো বছর। আমি একজন সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু 'বিটিভি, বেতার কেন্দ্র, শিল্পকলা এবং সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি এই সময়ে। এমনকি অনেক বেসরকারি অনুষ্ঠানেও ডাকা হয়নি। গায়ক আরও লেখেন, আমার নামে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর, নাশকতার মতো মিথ্যা, হাস্যকর রাজনৈতিক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল। কী অপরাধ ছিল আমার? হয়তো ভিন্ন মতের মানুষ ছিলাম- এটাই ছিল আমার অপরাধ। কখনো বলিনি আমি। সব শেষে মনির লেখেন, ছাত্র ও তরুণসমাজের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে এখন বাকস্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়েছে, তাই বললাম। শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় কোনো বাধা বা দেয়াল থাকতে নেই। শিল্পীর কণ্ঠকে রোধ করতে নেই। আশা করি স্বাধীনতার এই নতুন সূর্যের আলোয় নতুন করে পাখা মেলবে শিল্প-সংস্কৃতির।