অবশেষে স্বস্তি ফিরে এলো দেশে : মনির খান

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
দেশের পেস্ন-ব্যাক ও অডিও গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী। 'তোমার কোনো দোষ নেই' নামক একক অ্যালবাম দিয়ে যাত্রা করেন। এ পর্যন্ত ৪২টি একক এবং ৩০০টিরও বেশি দ্বৈত বা মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার। বিএনপির রাজনীতি করার জন্যও অত্যন্ত পরিচিত মুখ সঙ্গীতশিল্পী মনির খান। দলটির কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি। যদিও ২০১৮ সালে ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসন থেকে মনোনয়ন না পেয়ে অভিমান থেকে পদত্যাগ করেন এই গায়ক। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাকে। গানেও নিয়মিত নন মনির খান। তবে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকার পতনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এই গায়ক। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ডক্টর ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনির খান এই আন্দোলন সম্পর্কে নিজের অনভূতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, 'এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই। বন্দি খাঁচা থেকে আজ মুক্ত হলাম। এত বছর সারা বাংলাদেশের মানুষ খাঁচায় বন্দি ছিল। স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন ও মুক্ত। বাংলাদেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব, দেশের মান এবং মানচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রে আগামী দিনে নতুন সূর্য উঠবে। সেই সূর্য দেখার অপেক্ষায়।' এই সংগীতশিল্পী আরও বলেন, 'আমাদের দেশের অহংকার ডক্টর ইউনূস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালাহউদ্দিন আহমেদসহ আগামীর সরকার হিসেবে অনেকের নামই আলোচনায়। প্রতিটি মানুষ যাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস রাখতে পারে এমন মানুষের হাতেই দেশ দিতে হবে। সবাই যাতে ভালো থাকে তেমন মানুষই চাই।' দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পায় বহু প্রত্যাশিত বিজয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গের আপামর জনতা পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম দেয় বাংলাদেশ নামে নতুন এক রাষ্ট্রের। তবে ৫২ পর সাম্প্রতিক সময়ের এমন বাংলাদেশ কেউ কখনো আর দেখেনি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অন্য সবার মতো উৎকণ্ঠায় রাত-দিন পার করেছেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরাও। জনজীবনে ছিল না স্বস্তি। যেসব তারকা মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তারা নির্যাতনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ছিলেন কোণঠাসা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে নতুন দিনের সূচনা। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন। গোটা দেশ এখন বিজয়ের উলস্নাসে মেতেছে। বিজয় মিছিল থেকে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন বাংলা গানের কালজয়ী সংগীতশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর, মনির খান ও তৌসিফ আহমেদ। এদের সবাইর গায়ে লেগে আছে বিএনটির স্টীকার। মনির খান এক সময় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বিএনপির সহ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলটির সব ধরনের কার্যক্রম থেকে সরে আসেন তিনি। সে সময় জানা যায়, ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর- কোটচাঁদপুর) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। প্রাথমিকভাবে দলের চিঠি পেয়ে মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছিলেন। পরে দলটি থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত না করায় নানামুখী চাপের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য সরে আসেন এ গায়ক। শুধু তাই নয়, গানের সব জায়গা থেকেই ছিটকে পড়েন তিনি। এক নিজস্ব ইউটিউবের গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েন। এমনকি যে স্টেজ শোতে তিনি ছিলেন এক কথায় শাহেন শাহ'র মতো সে স্টেজ শোতেও তার ডাক আসছিল না। ফলে কমে গিয়েছিল তার স্টেজ শোও। হতাশায় দিন কাটতে থাকে তার। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে গানের অঙ্গনের মতো দূষিত আর কোনো সরকারের সময়েই হয়নি। এই সময়ে বেশ কয়জন উচ্চমার্গীয় শিল্পী পেস্ন-ব্যাক থেকে ছিটকে পড়েন। কনকচাঁপা তাদের আরেকজন। তাদের বদলে কতগুলো বস্তাপঁচা গায়ক-গায়িকা সুযোগ পেতে থাকেন। যার ফলে বাংলা পেস্ন-ব্যাক সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় পড়ে গত স্বৈরাচারী আমলটিতে। আর মনির খানেরও সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় তার পেস্ন-ব্যাক থেকে ছিটকে পড়ায়। কোনো পেস্ন-ব্যাকেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। অথচ তিনি একটা সময়ে পেস্ন-ব্যাকে একচেটিয়া সাফল্য পেয়ে আসছিলেন। গানের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। দীর্ঘদিন তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে পেস্ন-ব্যাক করতে পারছেন না। নয়তো এতদিনে আরও অনেক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারতেন অবলীলায়। কারণ, তার গলা যে পেস্ন-ব্যাকের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে! তিনি যে পেস্ন-ব্যাক করতে পারেননি তাতে বাংলা সিনেমারই ক্ষতি হয়েছে। মনির খানের কিছুই হয়নি। কারণ, পেস্ন-ব্যাকে না হোক, তিনি এখন গান গেয়ে চলেছেন। তবে এতদিন পর যেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয়ের সুবাদে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। জনগণের কাঁধে একদলীয় শাসনের জগদ্দল পাথর সরে যেতেই আবার নতুন করে তার এই স্বস্তির নিঃশ্বাস।