পৃথিবীর সেরা বিজয় উৎসব দেখেছে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
গণঅভু্যত্থানের মুখে গতকাল দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পলায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। এ খবর শোনামাত্র দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাজধানীতে চলছে সেরা ঐতিহাসিক আনন্দ মিছিল। এই উত্তাল সময়ের হাওয়া বইছে পুরো দেশজুড়ে। গতকালই যায়যায়দিন হেডলাইন করে 'অগ্নিগর্ভে গোটা দেশ', যেটা মুক্তিযুদ্ধকালীন 'অগ্নিঝরা' বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনীয়। কিন্তু সেই অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ যে এত দ্রম্নততম সময়ের ভেতরেই তার অগ্নিগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসবে, এ কথা কে কবে চিন্তা করেছিল? মিসরে আরব বসন্ত বলে এই আন্দোলন দেখেছে সারা পৃথিবী। কিন্তু সেই আন্দোলনও অনেক দিন ধরে চলেছিল। আর সেটা রাজনৈতিক ও জনতার সম্মিলনে। কিন্তু বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে আন্দোলন জমিয়ে তুলল, সেই পৃথিবীর ইতিহাসেই অভূতপূর্ব। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দফায় শুরু তিন দিনের মাথাতেই সব শেষ। দুপুরের মধ্যেই বাতাসে গুঞ্জন বেড়ায় দীর্ঘ ষোল বছরের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সেনা প্রহরায় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপর থেকেই যারা ঘরের ভেতর ছিলেন, তারাও বাইরে বেরিয়ে পড়েন উলস্নাস করে। এমন বিজয় এরশাদের স্বৈরশাসন পতনে হয়নি। এই বিজয়কে একমাত্র একাত্তরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একাত্তর তবু গোটাদেশ যুক্ত ছিল। কিন্তু এই বিজয়ে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। প্রথম শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। এরপর সারাদেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা যোগ দেয়। এরপরই এই আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেয় সারাদেশের নিখাদ দেশজ জনতা। পৃথিবীর ইতিহাসেই এমন নজির ঘটেনি। শুধু ছাত্র-জনতা মিলেই দীর্ঘদিনের জগদ্দল পাথরের মতো কঠিন সরকারের পতন ঘটানো সারা পৃথিবীতেই এই প্রথম বিরল। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সময়ের সঙ্গে ৯ দফা হয়ে এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের কেউ কেউ একাত্মতা ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর অন্য সাধারণ মানুষের মতো তারকারাও নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জোরাল অবস্থানে দেখা গেছে গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে '৪২০'খ্যাত এ নির্মাতা লেখেন, 'বিজয়ের আনন্দ অবশ্যই করব! কিন্তু এখন সময় সংযমেরও, চোখ-কান খোলা রাখারও। আমরা ২০ বছর প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখেছি। প্রতিহিংসার উত্তর দিব আমরা কাইন্ডনেস এবং সিমপ্যাথি দিয়ে। পাশাপাশি আমরা চোখ খোলা রাখব আগামী দুই-তিন দিন। নিশ্চয়ই আমরা একটা মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাব। লাস্টলি, স্যালুট টু বাংলাদেশি ইয়ুথ অ্যান্ড পিপল ফ্রম অল ওয়াকস।' চিত্রনায়িকা পরীমণিও এই আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন। গতকাল বিকালে এই নায়িকা তার ফেসবুকে লেখেন, 'তিন বছর আগে এই ৫ আগস্ট যেভাবে আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, প্রকৃতি হিসাব রাখে না।' এই আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের পক্ষে জোরাল অবস্থান নেন 'মহানগর'খ্যাত পরিচালক আশফাক নিপুণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে নির্মাতা আশফাক নিপুণ লেখেন, 'স্বৈরাচারী ও খুনি শেখ হাসিনা থেকে মুক্ত বাংলাদেশ। এটা সম্ভব করার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আমার দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা মাত্র শুরু। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে সংস্কার করব।' স্বামী-সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন 'একজীবনে এত প্রেম পাব কোথায়' গানের জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মাহমুদা আমিন শায়না। দূর দেশে থেকেও এই আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, 'সবাইকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা। আমাদের শহীদ ভাই-বোনদের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা। তোরা আমাদের মনে জীবিত থাকবি আজীবন।' আরেক পোস্টে শায়না লেখেন, 'আন্দোলন চলাকালীন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অতি শিগগির ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী আর সাধারণ জনতার বিনাশর্তে মুক্তি দাবি করছি।' টিভি অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লেখেন, 'মুগ্ধদের বাংলাদেশে যাদের কলিজায় পানি নাই, তাদের পানি খাওয়ান। তাদের আঘাত না করে ঠিক মুগ্ধর মতোই বলেন 'পানি লাগবে পানি'।' ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঈশিকা খানও যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। দূর দেশ থেকে তারও অবস্থান আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিল। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, 'ভিতরে যে এত দেশ প্রেম ছিল, তা আগে বুঝি নাই। ছাত্র-জনতা বুঝিয়ে দিল।' আরেক পোস্টে ঈশিকা খান লেখেন, 'এই আবেগ, এই কান্না! আহা! আজ চিৎকার করে এই খুশির কান্না কানতে চাই।'