শিল্পীদের কনসার্ট

শুরুর আগেই শেষ

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
বলা হচ্ছিল চলমান বিপস্নব-আন্দোলনে সাংস্কৃতিককর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জমায়েতটি হবে শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ৩টায় রবীন্দ্র সরোবরে, দেশের প্রায় সর্বস্তরের সঙ্গীতশিল্পীর অংশগ্রহণে। চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সংস্কৃতিকর্মীরা আগেও নানা ভাগে রাজপথে দাঁড়িয়েছেন। যদিও সেটা আটকে ছিল অভিনয় অঙ্গনে। বিপস্নবের শিরোনাম হিসেবেও শিল্পীরা বেছে নিয়েছিলেন বিদগ্ধ বিপস্নবী কিংবদন্তি বব মার্লেকে। তার 'গেট আপ স্ট্যান্ড আপ' গানটি ধরে ডাক দেওয়া হয়েছে দেশের সঙ্গীতশিল্পীদের। তাতে কে সাড়া দেয়নি? সঙ্গীতশিল্পী মানেই যেন গান! সেই প্রবাদের সূত্র ধরে অনেকেই ধরে নিয়েছে সাত ব্যান্ডের জমায়েতে এদিন রবীন্দ্র সরোবরে হবে বড়সড় এক রক কনসার্ট। হতে পারে সেটা প্রতিবাদের গানে গানে। কিন্তু তেমন কিছুর সত্যতা মেলেনি। এই জমায়েতের সঙ্গে সংহতি জানানো সুরকার-গীতিকবি প্রিন্স মাহমুদ বলেন, 'আজ (শনিবার) কোনো কনসার্ট হবে না। এখন কনসার্টের সময় না। আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানাব।' কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া দেশজুড়ে সহিংসতার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে আর্টসেল, শিরোনামহীন, জলের গান, ওয়ারফেজ, মাইলস, চিরকুট ও অ্যাশেজ। তাদের এই ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত সব শাখার অসংখ্যজন। যেখানে রক ছাড়িয়ে ফোক হয়ে রবীন্দ্র-নজরুলেও পৌঁছেছে। তাদের প্রচারিত পোস্টারে লেখা আছে, 'শনিবার (৩ আগস্ট) বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আমরা সঙ্গীতশিল্পীরা সবাই মিলিত হবো রবীন্দ্রসরোবরে (ধানমন্ডি ৮/এ)। গানে গানে আমরা শিল্পীরা সংহতি প্রকাশ করব। যারা ঢাকার বাইরে আছেন তারা নিজ নিজ জেলার উপযুক্ত স্থানে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করবেন।' গানে গানে আমরা শিল্পীরা সংহতি প্রকাশ করব। পোস্টারে লেখা এই লাইন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে কোনো আন্দোলনেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে গান চলে আসে। দলবদ্ধ হয়ে বিপস্নবের গান কণ্ঠে উঠে আসে। যেহেতু আয়োজনটি সঙ্গীতশিল্পীদের, সেহেতু সেখানেও গান চলে আসতে পারে। তবে সেটি কোনো আনুষ্ঠানিক কনসার্টে রূপ নেবে না। তাই তো ব্যান্ড, একক, রবীন্দ্র, নজরুল- প্রায় সবাই সোশ্যাল হ্যান্ডেলে জানান দিয়েছেন, রবীন্দ্র সরোবরে মিলিত হওয়ার বিষয়ে। সময় ছিল বেলা ৩টা। জমায়েত শুরু হলো ২টা থেকেই। ৩টার আগেই সরোবরে হাজির মাকসুদুল হক, হামিন আহমেদ, পার্থ বড়ুয়া, প্রিন্স মাহমুদ, শওকত আলী ইমন, শেখ মনিরুল ইসলাম টিপু, লতিফুল ইসলাম শিবলী, রাহুল, জিয়াউর রহমান, আশফাকুল বারি রুমন, জুনায়েদ ইভান, সাকিবসহ আর্টসেল, শিরোনামহীন, জলের গান, ওয়ারফেজ, মাইলস, চিরকুট ও অ্যাশেজ ব্যান্ডের সদস্যদের অনেকে। সঙ্গে অসংখ্য শিক্ষার্থী, অনুসারী আর অভিভাবকরা। এরমধ্যে অনেকের হাতে শোভা পাচ্ছিলো দারুণ সব গানের বাণী। যেমন প্রিন্স মাহমুদের লেখা-সুরে জেমসের কণ্ঠে 'হতেই পারে আমাদের এই মিলনমেলাই এক ইতিহাস'! সঙ্গে চলছিল গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বক্তব্য। কথা বলছিলেন মাকসুদুল হক, প্রিন্স মাহমুদ, লতিফুল ইসলাম শিবলীরা। ঠিক ২টা ৫৮ মিনিট। তখনও চারপাশ থেকে মৌমাছির মতো রবীন্দ্র সরোবরে নামছিলেন সঙ্গীতাঙ্গনের সদস্য আর শিক্ষার্থী-স্বজনরা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ৩টা বাজার ঠিক দুই মিনিট আগে সরোবরের মাঝ থেকে শিবলী-প্রিন্স মাহমুদের নেতৃত্বে সেস্নাগান দিতে দিতে পুরো জমায়েত বেরিয়ে গেল ধানমন্ডি ৮ নম্বর ব্রিজ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের লক্ষ্যে! এ যেন শুরুর আগেই শেষ। সরোবরে উপস্থিত অনেকেই তাজ্জব বনে গেলেন এমন কান্ডে। এমনকি বেশিরভাগ মানুষ বুঝতেই পারলেন না, হচ্ছেটা কী! প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু নাকি শেষ- এই প্রশ্ন সবার মুখে। ৩টার পরে অসংখ্য সঙ্গীতমুখ আর শিক্ষার্থীরা এসে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছিলেন। এরমধ্যে জ্যেষ্ঠ ব্যান্ড তারকাদের বেশিরভাগই সরোবর থেকে বিষণ্ন মনে ফিরে গেছেন যার যার ঠিকানায়। মুখে কিছু না বললেও চোখে স্পষ্ট, অজানা একটা ভয়! তবে ৩টার পর এই আয়োজনের প্রাণভোমরা হয়ে উঠলেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। ব্যান্ড সদস্য শূন্য সরোবরে তাকে ঘিরেই যেন এদিন এক ঘণ্টার প্রতিবাদ সভা হলো। আসিফ আকবর শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে। যদিও পুরো আয়োজনটির নেতৃত্বে ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডগুলো। বিকাল ৪টার দিকেও বিভিন্ন ব্যান্ডের সদস্য ও অনুসারীদের আসতে দেখা গেছে সরোবরে। তাদের একজনই নাম না প্রকাশের শর্তে জানালেন, 'আমরা আজ এখানে এসে দিকভ্রান্ত হলাম!' আরেকজন জ্যেষ্ঠ ব্যান্ড তারকা জানালেন, সরোবরের এই আয়োজনে বহিরাগত ঢুকে অঘটন ঘটানোর আগাম খবর মিলেছে, তাই দ্রম্নত সবাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে ছুটেছেন হঠাৎ করেই। বলা দরকার, ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রায় দুই শতাধিক। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সঙ্গীতশিল্পীরা ছাড়াও তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে সমাজের নানা স্তরের মানুষ ও সংগঠন।