এটা মানুষের অনেকদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ : মামুনুর রশীদ

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
মামুনুর রশীদ
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে মামুনুর রশীদের নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। থিয়েটার থেকে শুরু করে টিভি, বেতার, চলচ্চিত্র- সর্বত্রই তার অভিনয় যেন বাস্তবজীবনেরই প্রতিচ্ছবি। জীবনঘনিষ্ঠ অভিনয়শিল্পের পরিচয় দিতে গেলে যে নামটি শুরুতেই এসে যাবে তিনি নাট্যকার মামুনুর রশীদ। একাধারে অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক এবং নাট্যকার। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃৎ। পাশাপাশি ভালো সংগঠক হিসেবেও পরিচিত তিনি। ছিলেন '৭১-এর রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি তার প্রথম রচিত নাটক 'পশ্চিমের সিঁড়ি' কলকাতার রবীন্দ্রসদনে মঞ্চায়নের চেষ্টা করেন; কিন্তু তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়ে গেলে নাটকটি আর সেখানে অভিনীত হয়নি। পরে নাটকটি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে অভিনীত হয়। সেই তৎকালীন সময়টাও তার নাট্যচর্চায় প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এ সময়েই ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তার 'আরণ্যক নাট্যদল'। সেই ৬ দফা, '৬৯-এর গণ-অভু্যত্থান পেরিয়ে '৭১-এ দেশের সব আন্দোলন, সংগ্রাম আর যুদ্ধের সঙ্গে থাকা মামুনুর রশীদ সব শুভ আন্দোলনের সঙ্গে সাড়া দেবেন না তা কী করে হয়। তিনিও চুপ থাকতে পারেননি এবারের ছাত্রদের আন্দোলনে। থেকেছেন সম্মুখসারিতে। মামুনুর রশীদ এমন একজন উচ্চমানসম্পন্ন অভিনেতা, যিনি অভিনয়শিল্পকে নিছকই বিনোদনের খোরাক হিসেবে গ্রহণ করেননি। আর এ কারণেই তার নাট্যকর্মে অত্যন্ত প্রখর সমাজসচেতনতা লক্ষ করা যায়। সেই সমাজসচেতন শিল্পী এবার তরুণ শিল্পীসমাজের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। যে ছাত্র আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদ ও নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে হয়ে গেল বিভিন্ন মহলের শিল্পীদের শান্তি সমাবেশ। 'গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ'-এর ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে শিল্পী সমাজের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় অবিচার, অনাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কর্তব্য বলে উলেস্নখ করা হয়। 'দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ'-এর মতো শিল্পীদের এই সমাবেশেও ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে মামুনুর রশীদ সাম্প্রতিক সময়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলেন। শিল্পীদের সামনে অনিশ্চয়তা আছে কি না জানতে চাইলে প্রবীণ এই নাট্যনির্দেশক, অভিনেতা বলেন, শিল্পীদের সামনে, আমার সামনে যে অনিশ্চয়তা, এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল। বিশেষ করে শিশু দুটির জন্য আমি রীতিমতো রাতে ঘুমাতে পারি না। এটা আমার বাস্তব ব্যক্তিগত অবস্থান। কিন্তু এর বাইরেও যেটা ঘটছে, এটাকে একটা কোটা সংস্কার আন্দোলন বলা যাবে না। এটা মূলত মানুষের অনেকদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, মানুষের বঞ্ছনা হচ্ছে, নানান ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে- এর বিরুদ্ধেই আসলে এই প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদে যে এত প্রাণ ঝরবে, এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। এই নাট্যব্যক্তিত্ব আরও বলেন, এখনো ধরপাকড়, নানান ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে; আমি মনে করি এসব অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান হওয়া উচিত। তরুণদের কথা শোনা ছাড়া এই মুহূর্তে কোনো সমাধান নেই বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এই ক্ষোভ নিরসন হবে না। মানুষের কথা শুনতে হবে। সংলাপ তৈরি করতে হবে। তরুণরা কী বলতে চাইছে সেটা শুনতে হবে। ব্যাখ্যা করতে হবে এবং তার মধ্য দিয়েই আমি মনে করি এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমস্যা সমাধানের পথ তৈরির আহ্বান জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, যারা আন্দোলনে আছে তারা কেউ রাজনৈতিক পরিচয়ে নামেনি। আমি বৃহস্পতিবার ফার্মগেটে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীদের সঙ্গেও গিয়েছি, আমি তো দেখেছি এখানে কেউ পলিটিক্যাল নয়। রাজনৈতিক পরিচয় কারোরই নেই। তাহলে রাজনৈতিক এমন ট্যাগ দেওয়ার বিষয়গুলো কেন আসছে? আমার মনে হয়, কারো রাজনৈতিক পরিচয় এই মুহূর্তে খোঁজে বের করার দরকার নেই। সমস্যার সমাধান করার জন্য সবারই চেষ্টা করা উচিত।