অনিশ্চয়তা কাটেনি নাটক-সিনেমার শুটিংয়ে
প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ওঠা গোটা দেশ বেশ কিছুদিন টালমাটাল হয়ে পড়েছিল। সার্বিক পরিস্থিতিই নাজুক হয়ে পড়ে ছিল। কাজকর্ম সব স্থবির হয়ে পড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় বেশকিছু নাটকের শুটিং। কিছু সিনেমার কাজ থাকলেও তাও বন্ধ হয়ে যায়। এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি নাটক, সিনেমার শুটিংয়ে। ফলে লোকসানের কবলে পড়েন অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক-পরিচালক, নাটকের কলাকুশলীসহ শুটিং হাউস ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি নাটকপাড়ায়। আগের সিডিউল থাকায় কেউ কেউ শুটিং শুরু করলেও বেশির ভাগই ঝুঁকির মুখেও রয়েছেন। শুটিং না থাকায় হাউসগুলোতে চলছে মন্দাভাব। শুটিং নেই হাউসের বাইরেও!
শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, কোটা আন্দোলন ঘিরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোকসানে পড়েছে হাউসগুলো। অ্যাসোসিয়েশনের মতে, রাজধানীতে হাউসের সংখ্যা ২৫টি। এর মধ্যে সচল রয়েছে ১৫টির মতো। প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি ফ্লোরে কাজ চলে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে দুই শতাধিক শুটিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান শুটিং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলিম। তিনি বলেন, 'শুটিং শুরু হলেও কাজ চলছে দশ শতাংশের নিচে। এই আন্দোলন ঘিরে প্রায় অর্ধকোটি লোকসানের মুখে পড়েছে শুটিং হাউসগুলো। আমার দুটি হাউস স্বপ্নিল ও অপরাজিতা ফাঁকা যাচ্ছে। আন্দোলনকে ঘিরে একাধিক শুটিং বাতিল হয়েছে। স্বপ্নিলে সোমবার আরাফাত সোহানের একটি নাটকের শুটিং হয়েছে। এটি আগে বুকিং দেওয়া ছিল। আসলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো মানুষের মনে আতঙ্ক কাটেনি। এই ভয় নিয়ে নতুন করে কেউই শুটিং করতে চাইছেন না। আশা করি শিগগির সবকিছু আগের গতিতে ফিরে আসবে।'
'আপন ঘর'-এর কয়েকটি শুটিং হাউস রয়েছে। আন্দোলনের কারণে বাতিল হয়ে যায় কয়েকটি নাটকের শুটিং। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও নতুন করে বুকিং পায়নি হাউসটি। আপন ঘর শুটিং বাড়ির ম্যানেজার মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, 'শুটিং হাউসগুলোর অবস্থা একদম ভালো যাচ্ছে না। গত ২৭-২৮ জুলাই মুসাফির রনির একটি সিরিয়ালের শুটিং হয়েছে আপন ঘরে। এ ছাড়া আর কোনো শুটিং নেই। আমার হাউসে নাটকের পাশাপাশি ইউটিউব, ফেসবুক কনটেন্টের অনেক কাজের শুটিং হয়। কিন্তু এখন ফাঁকা যাচ্ছে। আপাতত কোনো বুকিং নেই। এমন পরিস্থিতিতে খুব লোকসানের মধ্যে পড়ে গেলাম।'
বুধবার একটি বিজ্ঞাপনের শুটিং হয়েছে মিন্টু হাউসে। এ ছাড়া আর কোনো বুকিং নেই বলে জানিয়েছেন এর কর্ণধার মোহাম্মদ মিন্টু। একই অবস্থা 'আনন্দ বাড়ী' হাউসেরও।
'বুক পকেটের মায়া' নাটকের শুটিং পিছিয়েছেন সকাল আহমেদ। ২৫ ও ২৬ জুলাই নিলয় আলমগীর ও সামিরা খান মাহিকে নিয়ে এই নাটকের শুটিং করার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই নাটকের শুটিং হবে আগামী ১৩ ও ১৪ আগস্ট। তবে মঙ্গল ও বুধবার এই নির্মাতা আরশ খান ও তৃণাকে নিয়ে 'তোমাকে পাওয়ার জন্য' নাটকের শুটিং করেছেন। সকাল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার থেকে শুটিং করছি, তবে আতংক কাজ করছে। পরিস্থিতি ভালো থাকলে খন্ড নাটকের পাশাপাশি ধারাবাহিক নাটকের কাজ নিয়ে আগস্ট মাসজুড়ে ব্যস্ত থাকব।'
সম্প্রতি মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচার চলতি 'ক্যাম্পাস' ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করেছেন পরিচালক তুহিন হোসেন। এই ধারাবাহিকের প্রচারের জটিলতা এড়াতে রাজশাহীর কিছু অংশের শুটিং উত্তরায় করেছেন তিনি। শুটিংয়ে অংশ নেন সুষমা সরকার, নাজিয়া হক অর্ষা, পাভেলসহ অনেকে।
অভিনেতা ও নির্মাতা শামীম জামান একাধিক নাটকের শুটিং বন্ধ রেখেছেন। ২৬ জুলাই থেকে তিন দিনের জন্য 'সরকারি পরিবার' নাটকের শুটিং করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় শুটিং স্থগিত করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬ ও ৭ আগস্ট পূবাইলে শুটিং হবে নাটকটির। একইভাবে 'আমার একটা এক্স ছিল' নাটকের শুটিং হওয়ার কথা ছিল জুলাই মাসে। শামীম জামান বলেন, 'দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আমার ২-৩টি নাটকের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। আশা করছি, আগস্টে কাজগুলো শেষ করতে পারব।'
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বেগেই আছে নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডস। নাট্যাঙ্গনে স্থবিরতা নিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর বলেন, 'স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি নাটকের টিম কাজ করে। এসব কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেকের সংসার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নাটকের কাজ থমকে আছে। এখন প্রতিদিন মাত্র ৫-৬টি নাটকের শুটিং হচ্ছে। স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে আরও সময় লাগবে। সবার মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে। মানসিক অস্বস্তির পাশাপাশি আর্থিক লোকসানও গুনতে হচ্ছে নাটকের লোকদের।'
মাতিয়া বানু শুকুর চিত্রনাট্যে দীপ্ত টিভির জন্য যুবরাজ খান নির্মাণ করছেন ধারাবাহিক নাটক 'ফুল বাহার'। বাধাগ্রস্ত হয়েছে এ নাকটিও। শুকু বলেন, 'কঠিন একটি সময় পার করেছি গত কয়েকদিন আগে। এমন পরিস্থিতি কখনো ভাবনাতেও ছিল না। যার প্রভাব পড়েছে সব ক্ষেত্রে। 'ফুল বাহার' নাটকের কাজ করতে গিয়ে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। শুটিং বন্ধ রাখতে হয়েছে। অবশ্য কয়েকদিন আগে ইনডোরে এর শুটিং হয়েছে। কিন্তু বাইরে শুটিং করা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও ভালো না হলে শুটিং করা মনে হয় সম্ভব হবে না।'
নিলয়-হিমি জুটি নিয়ে ২৭ ও ২৮ জুলাই 'মোরগ পোলাও' নাটকের শুটিং করেছেন নির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল। তবে মনের মতো কাজ করতে পারেননি তিনি। দোদুল বলেন, 'পরিস্থিতি যা-ই হোক মানুষের কর্মযজ্ঞ থেমে থাকে না। সেই ধারাবাহিকতায় নির্দিষ্ট তারিখেই শুটিং করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পরিস্থিতির কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী একটু কাজের বেঘাত ঘটেছে।'
অর্ক মোস্তফার চিত্রনাট্যে নতুন একটি নাটকের কাজে হাত দিয়েছিলেন নির্মাতা রাফাত রিংকু মজুমদার। নাম ঠিক না হওয়া এই নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল তৌসিফ মাহবুবের। শুটিংয়ের জন্য ২১, ২২ ও ২৩ জুলাই দিন তারিখ ঠিক করলেও তা সম্ভব হয়নি কোটা আন্দোলনের কারণে। রিংকু বলেন, 'এখনো ভাবিনি কবে নাটকটির শুটিং শুরু করব। দেশের পরিস্থিতি আরও ভালো না হওয়ার আগে শুটিং করা যাবে না। আগে মানসিক স্বস্তি, তারপর শুটিং।'
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বেশ কিছু সিনেমার মুক্তি পিছিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে 'হৈমন্তির কথা', 'জিম্মি', 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন' ও 'নন্দিনী'। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ধীরে ধীরে ছবিগুলো মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন সিনেমাসংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জিয়াউল রোশান ও শবনম বুবলী অভিনীত চলচ্চিত্র 'তুমি যেখানে আমি সেখানে' সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে। আগামী ১০ আগস্ট থেকে সিনেমার শুটিং করবেন বলে জানিয়েছেন নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস। এদিকে কিশোরগঞ্জে শুটিং চলছিল 'হাওড় কন্যা' সিনেমা। এই ছবির বেশির ভাগ অভিনেতাই নতুন। ছবির নির্মাতা এম কে জামান বলেন, 'এখানে নতুনদের নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। আমরা শুটিং করতে পারব।'