এটা সেই সময়, কেউ জানে না; কে কখন কীভাবে ভাইরাল হবেন। সম্প্রতি 'টু দ্য পয়েন্ট' নামের টিভি টকশোর মাধ্যমে যেমনটা হলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরী।
এর মধ্যে ভয়ংকর সমালোচিত হন মানিক আর প্রশংসায় ভাসছেন দীপ্তি। কারণ দেখা গেছে যেখানে অন-ক্যামেরা বিচারপতি মানিক চিৎকার করে অপমান করছিলেন সঞ্চালক দীপ্তিকে। বিপরীতে নিচু কণ্ঠে সম্মানের সঙ্গে বারবার তার অতিথিকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন।
এই অনুষ্ঠানে প্রচন্ড ধৈর্যশক্তি পরীক্ষা এবং পরিচ্ছন্ন বাচনভঙ্গির কারণে দেশজুড়ে সামাজিকমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন দীপ্তি চৌধুরী। প্রায় ৫০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই টকশোতে শুরু থেকেই বেশ বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা চলছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে। অতিথির আসনে আরও ছিলেন রাজনৈতিক নেতা গোলাম মাওলা রনি। এর মধ্যে দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠানের একাংশে তুমুল চিৎকার করেন সাবেক বিচারপতি। বারবার তিনি মুখের ভাষায় আক্রমণ করতে থাকেন সঞ্চালক দীপ্তিকে। সেখানে বারবারই সঞ্চালক হাসিমুখে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। বিচারক অতিথি আরও চিৎকার করেন। এভাবেই ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শো-টাইম পার করেন সঞ্চালক।
অনুষ্ঠানের এসব ছোট ছোট ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেটি দেখে বেশির ভাগ মানুষ সাবেক বিচারপতি মানিকের আচরণে বিস্মিত হন। বিপরীতে দীপ্তির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে থাকেন সোশ্যাল হ্যান্ডেলজুড়ে। অনেকেরই আগ্রহ জন্মে দীপ্তির প্রতি, কে এই অসাধারণ সঞ্চালিকা!
দীপ্তি চৌধুরী সদ্য আলোচনায় এলেও সঞ্চালনায় তিনি যুক্ত রয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। অষ্টম শ্রেণি থেকেই তার উপস্থাপনায় হাতেখড়ি। এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক করছেন তিনি। ২০১৬ সালে 'স্বর্ণ-কিশোরী' প্রতিযোগিতায় সেরা হন দীপ্তি। তারপর সেই অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুযোগ পান তিনি।
দীপ্তি গণমাধ্যমকে জানান সেদিনের টকশোতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। তার ভাষায়, 'সেদিন আমি আলাদা কিছু করিনি। যখন আমি সঞ্চালকের চেয়ারে বসি, তখন অতিথিকে সম্মান করে জনগণ ও দর্শক যে প্রশ্নটি করতে চায় সেই কাজটিই করার চেষ্টা করি। সেদিনও তা-ই করেছি। এটাই হয়তো মানুষ ভালোভাবে নিয়েছে। সবাই প্রশংসা করছে। তবে আমি খুব মহান কিছু করিনি।'
তবু যারা তার এই পর্বটি বা যেকোনো পর্ব দেখে প্রশংসা করেছেন তাদের প্রতি ভালোবাসা জানিয়েছেন দীপ্তি। এদিকে সেদিন সাবেক বিচারপতির সঙ্গে যে বাহাস হলো সেটি প্রসঙ্গে দীপ্তি বলেন, 'আমার বাসায় কিংবা অনুষ্ঠানে যে মানুষটি অতিথি হয়ে আসেন, তিনি আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে আমি সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে তার আচরণ আমাকে কখনো প্রভাবিত করে না, করেনি। সব সময় চেষ্টা করি আমি যেন নিজের জায়গাতে ঠিক থাকতে পারি। সেদিনও চেষ্টা করেছি। পেরেছি কি না জানি না।'
অবশ্যই যথোপযুক্তভাবেই পেরেছেন দীপ্তি। এক্ষেত্রে মেধা তালিকায় একশতে একশ নাম্বার পাবেন দীপ্তি। আর মানিক পাবেন একশতে ডাবল জিরো। নিজেকে ধৈর্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সাবেক বিচারপতির চিৎকারের বিপরীতে। মুখের হাসিটুকুও ম্স্নান হয়নি এতটুকু। সেটির জন্যও আপত্তিকর মন্তব্য শুনতে হয়েছে সাবেক বিচারপতির কাছ থেকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি ভদ্রতার। এ প্রসঙ্গে দীপ্তি বলেন, 'ধৈর্য ধরা মানে কিন্তু আমি বোল্ড বা শক্তিশালী নই, তা কিন্তু প্রমাণ করে না। বরং আমি বিশ্বাস করি, শক্তিশালী কথা নিচু কণ্ঠে বললেও সেটা অনেক শক্তিশালী। আর দুর্বল কথা চিৎকার করে বললেও সেটা দুর্বলই থাকে। এটুকু ভরসা আমার আছে।'
দীপ্তি চৌধুরী চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত আয়োজন 'টু দ্য পয়েন্ট' ছাড়াও 'গান দিয়ে শুরু' ও 'তারকা কথন' অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের আসনে বসেন।