বিটিভির পোড়া ভবন দেখে আবেগতাড়িত তারা

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
এ দেশের হাজার বছরের ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন হৃদয়বিদারক আন্দোলন হয়ে গেল। এমন আন্দোলন না মোগল আমলে হয়েছে, না ব্রিটিশ আমলে, এমনকি পাকিস্তান আমলেও। আর এই আন্দোলন ছিল কোটা সংস্কার বা কোটাবিরোধী আন্দোলন। এ আন্দোলনে জাতি দেখেছে যেরকম শত শত মানুষ নিহত হতে, হাজার হাজার মানুষ আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করতে, তেমনি তার পাশাপাশি দেখেছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সম্পদের ধ্বংসলীলা সাধন হতে। ছাত্রদের পাশাপাশি নিহত হয়েছে অসংখ্য শিশু-কিশোর, খেটে খাওয়া মানুষও। এ দেশে কয়েকটি বড় বড় ঐতিহাসিক গণ-অভ্যত্থান হয়েছে, কিন্তু তাতে দুই অঙ্কের মানুষও মারা যায়নি। যদিও সেই সময়েও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল। যে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন সম্পদের ধ্বংসলীলা সময়ের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসেও হয়নি। এই ক্ষয়ক্ষতি বলা যায় একেবারে অকল্পনীয়। তার ওপর এটা মানুষ কী করে বেমালুম সহ্য করছে এটাও আরও বেশি অকল্পনীয়। এবার কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নিজেদের প্রিয় কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এক নজর পরিদর্শনে এসেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। এসেই সবাই আবেগে ভেঙে পড়েছেন। হতভম্ব হয়ে পড়েছেন পোড়ামাটি রূপ বিটিভি ভবন দেখে। কোনো ভাষাই খুঁজে পাননি এমন ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শনে। ২৯ জুলাই সোমবার বিকালে বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ম. হামিদ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের, লাকী ইনাম, হারুন অর রশিদ, ঝুনা চৌধুরী, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজানুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক আহকাম উলস্নাহসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিরা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিটিভি ভবন পরিদর্শনকালে এবং পরিশেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রামেন্দু মজুমদার বলেন, 'বিটিভির সঙ্গে আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আজকে যে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আমরা দেখলাম, তা আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে এভাবে ধ্বংস করা সম্ভব!' নাসির উদ্দিন ইউসুফ তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, 'অসম্ভব খারাপ লাগার দৃশ্য অবলোকন করতে হলো। যেটি হয়তো আমাদের আমৃতু্য বহন করতে হবে। শুধু তদন্তের নামে তদন্ত চাই না, আমরা একটা শ্বেতপত্র চাই।' বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি চাই যে, এই ধরনের মনোবৃত্তি থেকে এই দুর্বৃত্তরা মুক্ত হোক। মানসিকতার যেন পরিবর্তন ঘটে সবার মধ্যে।' গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, 'বিটিভিতে অনেক অনেক স্মৃতি। সেটা যে এইভাবে আগুনে জ্বলে-পুড়ে যাবে, কল্পনা করাও কঠিন।' শাইখ সিরাজ বলেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি, শিল্প-সংস্কৃতির কী রকম রূপ হবে সেটার দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ টেলিভিশন দিয়েছে। সেই টেলিভিশন এভাবে ধ্বংস হয়ে গেল!' সারা যাকের বলেন, 'বিটিভির এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক হয়েছি, ব্যথিত হয়েছি।' লাকী ইনাম জানান, 'বিটিভির আর্কাইভে কত রকমের কত মূল্যবান কতকিছু ছিল। সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা ভাবা যায়!' বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, 'হাজার কোটি টাকা খরচ করে হয়তো এটার ধ্বংসচিত্র পুনর্র্নির্মাণ সম্ভব কিন্তু মিউজিয়ামে যে ঐতিহ্য এবং একটা দেশকে, দেশের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা ছিল, এটা আমরা কোথায় পাব? এটা তো আর পাওয়া যাবে না।' ঝুনা চৌধুরী বলেন, 'এখানে যদি না আসতাম তাহলে কোনোভাবেই কল্পনা করতে পারতাম না, এত ম্যাসিভ অ্যাটাক হয়েছে, এভাবে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এর কোনো কিছুই রিপেয়ার সম্ভব না।' গোলাম কুদ্দুস তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, 'শত শত বছরের সংস্কৃতির যে নানান উপাদান সংরক্ষিত ছিল বিটিভিতে, তার সবগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা আমরা অবলোকন করলাম।' আহকাম উলস্নাহ বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের তরুণ প্রজন্ম এটি করতে পারে না। এটির পেছনে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং তাদের প্রজন্মরাই এরকম কাজ করতে পারে।' বিটিভি পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটা আন্দোলন সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান ও তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।