দীর্ঘদিন ধরেই শাকিব খান ঈদে তার দর্শকের বাজার একচেটিয়া করে নিয়েছেন। কখনো একচেটিয়া, কখনো প্রায় একচেটিয়া। এবার 'তুফান' সিনেমা তো একেবারে একচেটিয়া ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দিয়েছে। পরিচালক মো. ইকবালের 'রিভেঞ্জ' একটা ফাইট দেবে ধারণা করা হয়েছিল কিন্তু সিনেমাটি তার কমার্শিয়ালের ধারে-কাছেও আসতে পারেনি। ঈদে কোনো এমন বিগ বাজেটের ফুল কমার্শিয়াল সিনেমা মার খায় এমন নজির ঢাকাই ফিল্মে খুব কমই দেখা গেছে। পরিশেষে অবস্থা এমন হয়েছে ছবিটির নায়িকা বুবলী ও নায়ক রোশানকে পরিচালক তার পরবর্তী ছবির শুটিংয়ের মাঝ দরিয়া থেকেই নামিয়ে দেন। সিনেমার এই অবস্থা এখন ঢাকাই ফিল্মের বাজারে একটা অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠিত নায়ক-নায়িকা কোনো সিনেমায় কাস্ট হয়ে, বেশির ভাগ শুটিং করেও বাদ পরে যান এ তো একটা অত্যন্ত বাজে নজির। পরিচালক যে ছবি থেকে তাদের বাদ দিচ্ছেন সেই ছবিতে তাদের করা শুটিংয়ের জন্যও তো কম টাকা লগ্নি করেননি। অর্থাৎ লোকসানের ওপর আরও দ্বিগুণ বেশি লোকসান স্বীকার করেও এই নায়ক-নায়িকা বাদ দেওয়াও কিন্তু কম দুঃখ ও ক্ষোভের কথা নয়। এর সবই তো এই একচেটিয়া নায়ক শাকিব খানের জন্যই।
'প্রিয়তমা', 'রাজকুমার', 'তুফান'- পর পর তিন ঈদে ধারাবাহিক হিট। হিট এর হ্যাটট্রিকও বলা যায়। একমাত্র 'প্রিয়তমা' ছবিটিই রায়হান রাফীর 'সুড়ঙ্গ' সিনেমার সঙ্গে কিছুটা দ্বৈরথ হয়। ঈদের মাঝেও এই ছবি দুটো ঘিরে যেন দেশজুড়ে আলাদা উৎসবের আমেজ নেমেছিল। আড়াই মাস বিরতিতে এই সেপ্টেম্বরে ফের মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খানের সিনেমা। যেন ছবি মুক্তির রোলার কোস্টারে চেপে বসেছেন শাকিব খান।
তবে ব্যতিক্রম এই, টানা চার বছর পর ঈদ বা উৎসবের বাইরে মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খানের ছবি 'দরদ'। এই ছবিটি আরও আগেই মুক্তি দেওয়ার কথা। কথা ছিল ভালোবাসা দিবসে মুক্তি দেওয়া হবে। ভালোবাসা দিবসে মুক্তি দেওয়া হলেও দর্শক মিলত। কিন্তু এবার এমন মৌসুমে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে দর্শক কেমন মেলে সেটাই দেখার বিষয়। এই সুবাদে ফের দেখার পালা, ঈদের বাইরে শাকিব খান কতটা উৎসবের আমেজ আনতে পারেন প্রেক্ষাগৃহে।
কারণ শাকিবের ছবির চাপে পড়ে চিরেচ্যাপ্টা হয়ে পড়ছে অন্যান্য নায়কদের সিনেমা। কোনো ছবিই চলছে না তাদের। ছবি প্রশংসিত হলেও ব্যবসায়িকভাবে নায়কও মার খাচ্ছেন, নায়িকাও মার খাচ্ছেন। ব্যবসা তো দূরের কথা, ছবিগুলো হলই পাচ্ছে না। পেলেও প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে ফেলছে দুদিন যেতে না যেতেই। ফলে ছবিতে লগ্নীকৃত টাকা তুলে আনতেই পারছে না ছবিগুলো। এসব থেকে এসব সিনেমার নায়কদের কেউ কেউ বলছেন, শাকিবের ছবি ঈদ মৌসুম বলে ব্যবসা করছে। ঈদের বাইরে অন্য মৌসুমে মুক্তি দেওয়া হোক তখন দেখা যাবে তার সেই ছবিও ব্যবসায় মার খাচ্ছে। এখন তাদের কথা সত্য হয় কিনা সেটা বোঝা যাবে এবার শাকিবের ছবি কী রকম ব্যবসা করে। আর ঈদ এলেই যেসব বন্ধ হওয়া হল খোলে সেগুলোও খুলে কিনা।
বলা দরকার, ঈদ উৎসবের বাইরে শাকিব খানের সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি 'নবাব এলএলবি'। নির্মাতা একই, অনন্য মামুন। ছবিটি মুক্তি পায় ২০২০ সালে, যা শাকিব খানের দর্শকপ্রিয়তার বিচারে বেশ অসফল।
এদিকে গত ঈদে মুক্তি পাওয়া সুপারহিট 'তুফান' প্রচারণার অংশ হিসেবে এখন ভারতে অবস্থান করছেন শাকিব খান। সেই ফাঁকে রোববার (৭ জুলাই) সকালে কলকাতার হোটেলে নায়কের সঙ্গে দেখা করেন অনন্য মামুন। এরপরই শাকিবের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে জানান, 'দরদ' মুক্তি পাচ্ছে এই সেপ্টেম্বরে। ১৫ জুলাই থেকে প্রচারণা শুরু করবেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ভালো কিছু করাই 'দরদ' সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনা। মধ্যপ্রাচ্যের বড় অংশজুড়ে বাঙালিরা থাকেন। সেই দর্শক ধরা 'দরদ' টিমের অন্যতম লক্ষ্য।
অনন্য মামুন বলেন, 'মুক্তির আগে দুই মাস আমাদের প্রচারণায় চমক থাকবে। শাকিবিয়ানদের নিয়ে প্রথম কোনো বড় আয়োজন হবে। সেখানে জানানো হবে সেপ্টেম্বর মাসের কোন তারিখ 'দরদ' প্যান ইন্ডিয়ান ছবি হিসেবে একযোগে মুক্তি পাবে।'
এর আগে ঈদের দিন প্রকাশ পেয়েছিল 'দরদ'-এর টিজার। যেখানে বহুরূপী শাকিব খানকেই দেখা গেছে! কখনো তিনি একেবারে ছাপোষা মানুষ, আবার কখনো ভয়ংকর! টিজার বলছে, সাইকো থ্রিলার ঘরানার ছবি হচ্ছে 'দরদ'। শাকিবের সঙ্গে এই ছবিতে থাকছেন বলিউড নায়িকা সোনাল চৌহান।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় 'দরদ'কে বলা হচ্ছে প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা। যার ফলে বাংলার পাশাপাশি ছবিটি মুক্তি পাবে হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালায়লাম ও কন্নড় ভাষায়। এই ছবিতে আরও আছেন পায়েল সরকার, রাজেশ শর্মা, রাহুল দেব, অলোক জৈন, সাফা মারুয়া, এলিনা শাম্মী।