কোটা আন্দোলন পরবর্তী পরিস্থিতি

তারকা শিল্পীরা কে কী ভাবছেন

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে এ আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মৃতু্য ও পঙ্গুত্বের ঘটনাও ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন শোবিজ তারকারও। দেশের বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, কদিন থেকে ঘুমাতে পারছি না। নানা এলোমেলো স্মৃতি, চিন্তা মস্তিষ্ককে ক্রিয়াশীল করে রাখছে। একসময় আমার বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করার শখ ছিল। একদিন আমি ও কাদেরি কিবরিয়া ভোলার এক দুর্গম জায়গায় রাজহাঁস শিকার করতে গেলাম। দুটি রাজহাঁস দেখতে পেলাম। গুলি করলাম। একটি পড়ে গেল, অপরটি দাঁড়িয়ে রইল। পাখিটাকে আনতে এগিয়ে গেলাম কিন্তু তার সঙ্গী পাখিটি ডানা বিস্তার করে আগলে রাখল। কিবরিয়া বন্দুক তাক করল মারার জন্য। তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিবৃত্ত করলাম। এমন ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সাহস মনুষ্য সমাজেও বিরল। এ দৃশ্য আমি আজও ভুলিনি। সেদিন থেকে আমিও শিকার করা ছেড়ে দিয়েছি। কদিন থেকে সেই দৃশ্য এবং সেই সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অকুতোভয় তরুণ শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটি এসে ভিড় করে। হৃদয় কেঁদে ওঠে, ঘুম চলে যায়। মাথার ভেতর প্রশ্ন এসে পীড়া দেয়, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও এই দৃশ্য দেখতে হলো? কী কী অপরাধে এতগুলো তরুণ প্রাণকে পিতা-মাতার বুক শূন্য করে, অকালে ঝরে যেতে হলো? আমার দীর্ঘ জীবনে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া এমন মৃতু্যর মিছিল তো দেখেনি। এটা তো আমেরিকার গৃহযুদ্ধ নয় বা ফরাসি বিপস্নব নয়। একটি হিন্দি গানের কয়টি চরণ মনে পড়ল, এটা কী হলো, কী করে হলো, কেন হলো, যা হওয়ার হয়েছে, যেতে দাও... যা হওয়ার হয়েছে, যেতে দাও বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। নিজেদের কাঠগড়ায় দাঁড় করতে হবে। সন্দেহ নেই দেশের প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সন্তান হারানো প্রত্যেক পিতা-মাতার প্রতিটি অশ্রম্নফোঁটার হিসাব দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ সমাজের সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূলবোধের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাসের প্রতিফলই পরে মূল্য পরিশোধ করতে। জনপ্রিয় অভিনেতা ও সঙ্গীতশিল্পী ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত সব কিছুই তো স্থবির হয়ে আছে। যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে তা কারও কাম্য ছিল না। আশা করিনি, পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে। এটা সত্যি দুঃখজনক। সরকার তো প্রথম থেকেই দাবি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু যে পরিস্থিতে তৈরি হয়েছে সেটা কিন্তু ছাত্রদের কাজ না। একটা শ্রেণি পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো তো আমরাই ব্যবহার করি। সেগুলোর ক্ষতি মেধাবীরা করতে পারে না। কারণ তারা তো মেধা নিয়েই আন্দোলন করছিল। বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলব, কারফিউয়ের কারণে অনেকদিন পর কাজহীন ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে কারও সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগও রক্ষা করতে পারছি না। মনের ভেতর একটা শঙ্কা কাজ করছে। তাছাড়া আমার একটা সিনেমার শুটিংও ছিল। গত পরশু সেখানে যাওয়ার কথা চিল। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। অপেক্ষায় আছি। টিমের সবাই সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছে। কিন্তু তারাও শুটিং শুরু করতে পারছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ আমাদেও সিনেমার বাজেট বরাবরই কম থাকে। টানাটানির মধ্যে কাজ করতে হয়। তাছাড়া সিনেমার বাজারও আমাদের খুব বড় না। বছরে দু-একটা সিনেমা হয়। ফলে অনেক হিসাব-নিকাশ করে এগোতে হয়। সেই জায়গায় এমন খরচ বৃদ্ধি হলে সবাইকে লসের মুখে পড়তে হয়। শুধু যে সিনেমা হল, শুটিং বন্ধ হয়েছে, আর এখানের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু তেমনও না। নাটক, মঞ্চের অবস্থাও কিন্তু একই। তবে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নাটক-সিনেমার। মঞ্চনাটকের শো বন্ধ আছে, কিন্তু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে না। যদিও নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। কারণ দর্শকরা মঞ্চে আসার চচ্র্া একবার কমিয়ে দিলে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আশা করছি শিগগিরই সব কিছুই আবার পুরনো ছন্দে ফিরবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন অভিনেতা মোশাররফ করিম। তিনি বলেন, আধুনিক সময়ে এসে দেশের এমন স্থবির অবস্থা একেবারেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব দ্রম্নত পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। দেশ আবার আগের মতো সুন্দর ও স্বাভাবিক হবে। দেশে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। চলমান পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট সেবা। ফলে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগেমাধ্যমসহ জনপ্রিয় ভিডিও পস্ন্যাটফর্ম ইউটিউবের সেবা নিতে পারছেন না মানুষ। এতে করে কারফিউতে ঘরে অবস্থান করা মানুষ উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন এই অভিনেতা? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্ভরশীলতার এই যুগে এমন পরিস্থিতি মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন তিনি। এ অভিনেতা আরও বলেন, কারফিউর এই সময়ে তো সব কাজ বন্ধ, বাসায় বসে বই পড়ে, টিভিতে খবর দেখে সময় কাটছে। মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে করে কিছুটা অন্ধকারজগতে বসবাসের মতো মনে হচ্ছে তাদের কাছে। ফলে তারা বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বসবাস করছে। আমার কাছের অনেক মানুষের মধ্যেও এটা লক্ষ করছি। ইন্টারনেটনির্ভর এই পৃথিবীতে দেশে ইন্টারনেট না থাকায় যাপিত জীবনেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেকেই বিদু্যৎ ও গ্যাস বিল দিতে পারছেন না। ফলে তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন। তবে আমি বলব এর একটা ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্ভরশীলতা কমে আসছে। জীবনে নতুনভাবে উপলদ্ধি করা হচ্ছে। অনেকেই বই পড়ায় ফিরে গিয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী আক্তার সালমা। তিনি বলেন, যেন সব কিছুই স্তব্ধ হয়ে গেছে। হয়তো আমি সব কিছুই করছি কিন্তু কোনো বোধ কাজ করছে না। যদি অনুভূতির কথা বলেন, তাহলে বলব অনুভূতি অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেছে। অদ্ভুত এক ফিলিংস। এমনটা কিন্তু করোনার সময় হয়েছিল, চারদিক কেমন যেন থেমে গেছে। তবে আমি চাই বোধটা কেটে যাক, সব কিছুর সমাধান হোক। আমার সোনার বাংলাদেশকে আমি এভাবে দেখতে চাই না। খুব কষ্ট লাগছে। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন, বাসায় টেলিভিশন থাকলেও কেবল সংযোগ নেই। ফলে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। সালমা বলেন, আমি তো কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না, ইন্টারনেট দিয়েই টেলিভিশন দেখা হতো। আমার বাসায় কেবল সংযোগ নেই। বাসা থেকে রাস্তায় যা দেখা যাচ্ছে তা থেকেই অনুমান করছি। কেউ কেউ ফোন করেও জানাচ্ছে। সময়টা এ জন্য কাটছেই না। নামাজ পড়ছি, দেশের এ পরিস্থিতি যেন দ্রম্নত ঠিক হয়ে যায় এ জন্য আলস্নাহর কাছে দোয়া করছি।