শুভ জন্মদিন
ডলি জহুর, শামীম আরা নিপা ও প্রিন্স মাহমুদ
প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
সাবলীল অভিনয়ে জয় করেছেন তিনি কয়েক প্রজন্ম। চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে, বিশেষ করে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের ভাসিয়েছেন আবেগের জোয়ারে। তিনি ডলি জহুর, বাংলাদেশের অভিনয়ে বরেণ্য অভিনেত্রী। আজ ১৭ জুলাই ডলি জহুরের জন্মদিন।
১৯৫৩ সালের এই দিনে ঢাকার গ্রিনরোড এলাকায় তার জন্ম। পড়াশোনা করেছেন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময়েই গড়ে উঠতে দেখেছেন উদীচীসহ অনেক নাট্যসংগঠন। সেসব সংগঠন ও স্কুলের আয়োজনে বিচিত্রা অনুষ্ঠান হতো। থাকত নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটিকাসহ নানা আয়োজন। নাটিকাতে অভিনয় করতেন ডলি জহুর। সেসব স্বাধীনতার আগে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দেশাত্মবোধক গল্প নিয়ে অনেক নাটক হতো। চেষ্টা করতেন সেগুলোতে নিয়মিত অভিনয় করার।
ডলি জহুরের মা চাইতেন না মেয়ে অভিনয় করুক। মা বলতেন, 'এত বড় মেয়ে পড়াশোনা নেই, অভিনয় করতে যায়। এগুলো ঠিক না। পড়াশোনায় মনোযোগী হও।' কিন্তু মা রাগ করতেন, অন্যদিকে বাবা ইশারা দিয়ে সাহস দিতেন। ইশারায় বাবা বোঝানোর চেষ্টা করতেন, 'কথা বলো না, চুপ থাকো।' একসময় অভিনয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেন। অভিনয়ে তার ডাক পড়তে থাকে।
১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি যোগ দেন 'নাট্যচক্র' দলে। সেখানে তিনি কিছুদিন কাজ করার পর যুক্ত হন 'কথক' নাট্যগোষ্ঠীতে।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নাটক 'এইসব দিনরাত্রি' দিয়ে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন ডলি জহুর। ডলি জহুর অভিনীত ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে- 'এইসব দিনরাত্রি', 'একদিন হঠাৎ', 'শেষ পত্র', 'চুপি চুপি', 'বাঘা শের', 'নোয়াশাল', 'ক্ষণিকালয়', 'দহন' ইত্যাদি। এছাড়া তিনি কয়েক শতাধিক একক নাটকে অভিনয় করেছেন।
সিনেমায় ডলি জহুরের অভিষেক হয় 'অসাধারণ' দিয়ে। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের 'শঙ্খনীল কারাগার', 'আগুনের পরশমণি' সিনেমাগুলোতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। এছাড়া তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- 'দেশপ্রেমিক', 'বিক্ষোভ', 'স্বপ্নের ঠিকানা', 'চাওয়া থেকে পাওয়া', 'দীপু নাম্বার টু', 'বিচার হবে', 'অন্ধ ভালোবাসা', 'আনন্দ অশ্রম্ন' 'বাবা কেন চাকর', 'স্বপ্নের নায়ক', 'অনন্ত ভালোবাসা', 'মিলন হবে কতদিনে', 'শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ', 'ঘানি', 'হৃদয়ের কথা', 'দারুচিনি দ্বীপ', 'কি যাদু করিলা', 'মন বসে না পড়ার টেবিলে' ইত্যাদি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সিনেমা ও নাটকে সমান তালে অভিনয় করেছেন ডলি জহুর। এখনো চরিত্রের নাম ধরে ডাকেন দর্শক। কখনো তিনি 'শঙ্খনীল কারাগার'-এর রাবেয়া, কখনো তিনি 'এই সব দিনরাত্রি'র নিলু ভাবি, কখনো ঝগড়াওয়ালি। চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে মায়ের চরিত্রে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি ভাবি, বোনের চরিত্রেও দেখা গেছে। ইলিয়াস কাঞ্চন, সালমান শাহ, মান্না, ওমর সানী থেকে শুরু করে রিয়াজ, শাকিল খান, শাকিব খান পর্যন্ত মায়ের ভূমিকায় তাকে দেখা গেছে। সালমান শাহর প্রায় ছবিতেই মায়ের চরিত্রে ছিলেন। স্ত্রীর ভূমিকায় রাজ্জাক, রাজিব, হুমায়ুন ফরীদি তাদের বিপরীতে তিনি অনবদ্য।
ক্যারিয়ারে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৯২ সালে 'শঙ্খনীল কারাগার' সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরে ২০০৬ সালে কাজী মোরশেদ পরিচালিত 'ঘানি' সিনেমায় অভিনয় করে পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার জয় করেন। এ ছাড়া একুশে পদক অর্জন করেছেন। ২০২১ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর অভিনেতা জহুরুল ইসলামকে বিয়ে করেন ডলি জহুর। বিয়ের ৯ বছর পর জন্ম হয় এই দম্পতির একমাত্র সন্তান রিয়াসাতের। কিন্তু ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর মারা যান ডলি জহুরের স্বামী জহুরুল ইসলাম।
শামীম আরা নিপা
বাংলাদেশে নৃত্যশিল্পের প্রসারে যে কজন শিল্পী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন শামীম আরা নিপা। একুশে পদকে ভূষিত গুণী এই নৃত্যশিল্পী দীর্ঘদিন ধরেই নৃত্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন। কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। আজ ১৭ জুলাই খ্যাতিমান এই নৃত্যশিল্পীর জন্মদিন। শুভ জন্মদিন শামীম আরা নিপা।
ছোটবেলায় পারিবারিকভাবেই নাচের চর্চা শুরু করেন শামীম আরা নিপা। এরপর নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে একটি অনুষ্ঠান করেন এবং অনেক উৎসাহ পান সবার কাছ থেকে। আর এর পর থেকেই তার মূল নাচের চর্চা শুরু। পরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিক্ষকের কাছ থেকে নাচের তালিম নিয়েছেন।
আশির দশকে তিনি যখন নাচের জগতে ব্যস্ত, তখন তিনি নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আসেন এই শিল্পে। এর জন্য অবশ্য দেশের উচ্চাঙ্গ এবং লোকজ ধাঁচের নৃত্যে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে অনেকে বলে থাকেন। তবে একই সঙ্গে নৃত্যশিল্পের আধুনিকায়ন হয়েছে।
কেবল নিজে নৃত্য করেই থেমে যাননি শামীম আরা নিপা। 'নৃত্যাঞ্চল'-এর মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নৃত্যের ঝংকার ছড়িয়ে দিয়েছেন চারদিকে।
প্রিন্স মাহমুদ
'আজ জন্মদিন তোমার' গানটি জন্মদিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গান। আর কাকতালীয়ভাবে সত্য যে, গানটির কথা ও সুর করছেন প্রিন্স মাহমুদ। সেই দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা গানের জগৎকে সমৃদ্ধ করা প্রিন্স মাহমুদের জন্মদিন আজ।
বাংলাদেশের খুলনায় জন্ম নেন তিনি। বাংলা গানের এই কিংবদন্তি গীতিকার নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশে ব্যান্ডশিল্পীদের একক এবং যৌথ অ্যালবামের গান লেখা, সুর করা এবং কম্পোজিশনের কাজ করেছেন। এর বাইরে ১৯৯৫ সালে 'শক্তি' অ্যালবামের মাধ্যমে মিশ্র শিল্পীর গানের অ্যালবাম প্রকাশ শুরু করেন তিনি।
'দ্য বস্নজ' ব্যান্ডের ভোকাল ও গিটারিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রিন্স মাহমুদ। গানের ভুবনে প্রিন্সের পথ চলা শুরু হয় আশির দশকের একেবারে শেষ প্রান্তে 'দ্য বস্নজ' ব্যান্ডের ভোকাল ও গিটারিস্ট হিসেবে। এরপর ৯০ দশকের শুরুতে প্রিন্স গঠন করেন 'ফ্রম ওয়েস্ট' নামক একটি ব্যান্ড। সে সময় ব্যান্ড দলটির লিডার এবং মূল ভোকাল ছিলেন প্রিন্স মাহমুদ।
দুই দশক ধরে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন প্রিন্স মাহমুদ। সেই তালিকায় আছে বাংলাদেশ, আজ জন্মদিন তোমার, মা (দশ মাস দশ দিন), বাবা, বেলা শেষে ফিরে এসে পাইনি তোমায়, পালাতে চাই, এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়, বন্ধু ভেঙ্গে ফেল এই কারাগার, কিছু ভুল ছিল তোমার, কিছু আমার, মাটি হবো মাটি, মনরে মনরে তুই বড় বোকা, তুমি বরুণা হলে, জেলখানার চিঠি, ভুবন ডাঙার হাসি, নিমন্ত্রণ, আঙুল, তুই চাইলে হবো নদী ইত্যাদি।