শুভ জন্মদিন নন্দিত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ
প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
যার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতে হয় প্রতিবার, তিনি আর কেউ নন স্বনামধন্য অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। কেবল সুঅভিনেতাই নয়, তার আরও বড় একটি পরিচয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার অভিনয় দেখে বোঝা যায় শিল্প কাকে বলে, অভিনয় কাকে বলে। সিনেমা বা নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবারই দর্শকদের মুগ্ধ করেন এ অভিনেতা। মনোমুগ্ধকর অভিনয় দেখে বোঝার উপাই নেই যে
\হতিনি একজন অভিনেতা।
আজ এই অসম্ভব প্রতিভাধর ও জনপ্রিয় অভিনেতার ৭১তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার পুরানা পল্টনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম আসাদুজ্জামান মোহাম্মাদ রাইসুল ইসলাম। শিশুকাল কাটিয়েছেন ঢাকাতেই, বড় হয়েছেন ঢাকার অলিগলিতে। পল্টনে বড় হয়ে ওঠার কারণে এ এলাকার রাজনৈতিক হাওয়াটা উপেক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি তার পক্ষে। সে সময়ে তাদের পাড়ায় উঠতি বয়সিদের একটা ক্লাব ছিল, নাম- একতা বিতান। সেই ক্লাবে খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কেও মেতে থাকতে পছন্দ করতেন।
ছোটবেলা থেকেই মূলত তার মাথায় ঢুকে যায় যে, পাকিস্তানি আর আমরা এক জাতি নই। তাদের ভাষা আলাদা, পোশাক আলাদা, খাবার আলাদা। তারা সংখ্যায় কম হলেও সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ওরাই পাচ্ছিল। সেনাবাহিনীতে বাঙালি অফিসার কম, সরকারি সিভিল সার্ভিসে বাঙালি অফিসার কম। মেধা ও দক্ষতা থাকলেও সরকারি চাকরিতে একটা পর্যায়ের পরে বাঙালিদের প্রমোশন দেওয়া হয় না। আমাদের দেশের সোনালি আঁশ রপ্তানির টাকায় পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হচ্ছে বড় বড় ভবন আর কারখানা-ইন্ড্রাস্ট্রি। এই বৈষম্য আর শোষণ তার তরুণ মনে তীব্র রেখাপাত করে। এর মাঝে চলে আসে ২৫ মার্চ। সেই কালরাতের গণহত্যার পর তার পাকিস্তান বিদ্বেষ পরিণত হয় প্রচন্ড ঘৃণায়। তাই স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হলে তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার। সে সময়ে ঢাকায় তরুণদের খুঁজে বের করে মেরে ফেলা হচ্ছিল, তাই পালিয়ে যান তিনি। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পালিয়ে প্রথমে জিঞ্জিরায়, তারপর বিক্রমপুরে গিয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ঢাকায় ফিরে এসে চলে যান যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে আগরতলায়। ট্রেনিং নিয়ে এসে কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী এই ছাত্র ঢাকার উত্তর সেকশনের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পাকিস্তানি মিলিটারিদের ভ্যান উড়িয়ে দেওয়ার অপারেশনটি মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়েই থাকবে তার কাছে আজীবন। যুদ্ধ শেষে এই গুণী অভিনেতা যুক্ত হয়ে পড়েন মঞ্চনাটকের সঙ্গে। ১৯৭২ সালে রাইসুল ইসলাম আসাদ প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। 'আমি রাজা হব না' এবং 'সর্পবিষয়ক গল্প' নামের ২টি নাটক করেন তিনি, যার মাঝে কোনো বিরতি ছিল না। এরপর একে একে অভিনয় করেন আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে 'পশ্চিমের সিঁড়ি' নাটকে। ১৯৭৩ সালে তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন ঢাকা থিয়েটার। এরপর অভিনয় করেন সংবাদ কার্টন, সম্রাট ও প্রতিদ্বন্দ্বীগণ নাটকে। এর পর থেকে ঢাকা থিয়েটারে একের পর এক সাড়া-জাগানো
নাটকে অভিনয় করেন তিনি।
ঢাকা থিয়েটার গঠনের বছরেই মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র 'আবার তোরা মানুষ হ' এরপরে একে একে অভিনয় করেছেন বহুসংখ্যক সিনেমাতে। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- পদ্মা নদীর মাঝি, লাল দরজা, লালন, পতঙ্গ (হিন্দি), মনের মানুষ, হঠাৎ বৃষ্টি, ঘুড্ডি, একই বৃত্তে, উত্তরা, আমার বন্ধু রাশেদ, দুখাই, লালসালু, মনের মানুষ ইত্যাদির মতো দর্শকপ্রিয় সব সিনেমা। শুধু চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নয়, গুণী এই অভিনেতা বেতার, টেলিভিশনেও সমান জনপ্রিয়। নিজের নানা কাজের জন্য একাধিকবার জাতীয় পদকও জয় করেছেন তিনি।
এখনো বিরামহীনভাবে নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন গুণী এই অভিনেতা। শুধু অভিনয় করছেন তাই নয়, জনপ্রিয়তা ও তারকাদের অবস্থানের কাতারে তিনি রয়েছেন শীর্ষে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার অভিনয় ও তার অভিনীত চলচ্চিত্র ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষ এবং তানভীর মোকাম্মেলের মতো পরিচালকের সঙ্গে, তাদের সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে। 'লালন' সিনেমায় তিনি 'লালন' চরিত্রে এবং 'মনের মানুষ' সিনেমাতে লালনের গুরু 'সিরাজ সাঁই' চরিত্রে
অভিনয় করেছেন তিনি।
এছাড়া পদ্মা নদীর মাঝিতে তিনি কুবের চরিত্রেও অভিনয় করে নিজের অভিনয়জীবন সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি অভিনয় করেছেন বহু নাটকে। তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকগুলোর মাঝে আছে- সংশপ্তক, হৃদয়ের ছবি, পৌষ ফাগুনের পালা, চিঠি আসে না ইত্যাদি। কাজ করেছেন টেলিফিল্মেও। শুধু অভিনয় নয়, গুণী এই ব্যক্তি করেছেন পরিচালনার কাজও। ২০১০ সালে পরিচালনা করেন ধারাবাহিক নাটক 'আলো ছায়া' যার রচয়িতা ছিলেন আজাদ আবুল কালাম। গুণী একজন মানুষের কর্মপরিধি শুধু এক স্থানেই আটকে পড়ে থাকে না। শিল্পের সব শিখরই ছুঁয়ে যান তিনি। এর জ্বলন্ত উদাহরণ গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। শুধু অভিনয়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি এই গুণী মানুষটি। গানও গেয়েছেন তিনি। ঘুড্ডি সিনেমাতে গান
\হগেয়েছিলেন এই অভিনেতা।
২০০৬ সালে 'ঘানি' ও ২০১৩ সালে 'মৃত্তিকা মায়া' সিনেমার জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ৪৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। আর ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
রাইসুল ইসলাম আসাদ ১৯৭৯ সালের ৯ নভেম্বর তাহিরা দিল আফরোজের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার একমাত্র কন্যার নাম রুবায়না জামান।