ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। আজ তার জন্মদিন। ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পূর্ণিমা। সৌন্দর্য ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে এগিয়ে রেখেছেন নিজেকে। তার রূপ অনেক আগেই ভক্তদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। নেটিজেনদের ধারণা, দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণিমার রূপও বেড়ে চলেছে। কেউ কেউ মনে করেন, পূর্ণিমার বয়স একটি ঘরেই আটকে আছে। এ জন্যই তিনি চিরসবুজ।
'পূর্ণিমা' নামে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে ১৯৯৮ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত 'এই জীবন তোমার আমার' ছবিতে নায়িকা হিসেবে। প্রথম ছবিতেই নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সেই সময়ের অভিনেতা রিয়াজকে। সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রে দুই কিংবদন্তী ফারুক ও ববিতাকে। যদিও প্রথম ছবি বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখেনি, কিন্তু নায়িকা হিসেবে সবার মনে স্থান করে নিলেন। এই সিনেমায় রিয়াজ ও পূর্ণিমার লিপে কুমার শানু ও মিতালী মুখার্জির গাওয়া 'শতবার পৃথিবীতে আসব আমি তোমাকেই শুধু ভালোবাসব আমি' গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
'পূর্ণিমা' নায়িকা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন ২০০৩ সালে মতিউর রহমান পানুর যৌথ প্রযোজনায় 'মনের মাঝে তুমি' ছবিতে। এরপর ২০০৬ সালে নির্মাতা এস এ হক অলিকের 'হৃদয়ের কথা' দিয়ে সৃষ্টি হলো বাংলা ছবির ইতিহাস। দু'টি ছবিরই শ্রম্নতিমধুর গানে তার অভিনয় মন জয় করল সিনেমাপ্রেমীদের। রিয়াজের সঙ্গে তার জুটি পরিণত হলো বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি।
বাংলা চলচ্চিত্রে দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন একের পর এক নন্দিত ও প্রশংসিত ছবি। ২০১০ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না' ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার'। এছাড়াও তার পুরস্কারের ঝুলিতে রয়েছে বাচসাস পুরস্কার, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারসহ অজস্র সম্মাননা।
এ বছরের রোজার ঈদে পূর্ণিমার সর্বশেষ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে 'আহারে জীবন'। সরকারি অনুদানের সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন গুণী নির্মাতা ছটকু আহমেদ। তবে মুক্তির পর সিনেমাটি তেমন আলোচনায় আসতে পারেনি। চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ না করলেও উপস্থাপনায় নিয়মিত কাজ করেন পূর্ণিমা। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, উপস্থাপনা আর সিনেমা তো এক নয়। সিনেমা একটা বড় পরিসরের কাজ। দর্শকের পছন্দের একটা ব্যাপার থাকতে হয়। আমি তো নিয়মিত কাজ করতে চাই। কিন্তু সে ধরনের কাজ তো হাতে আসতে হবে। যেসব গল্প আসে, সেগুলোর অধিকাংশই আমার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চরিত্রের সঙ্গে আমাকে যাবে, সেটিও ভাবতে হবে- তেমন কাজ আসছে না। এলেও অনেক সময় পরিচালক পছন্দ হয় না। দেখা গেল, সিনেমা এসেছে, বাছবিচার না করেই দৌড়ে গিয়ে চুক্তি করে ফেললাম, ব্যাপারটা তা নয়। আসলে সিনেমার সংখ্যা বাড়িয়ে আমি দর্শকের গালি শুনতে রাজি নই।
সম্প্রতি সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন অভিনেত্রী পূর্ণিমা। সেন্সর বোর্ডের সদস্য হওয়াতে খুব উচ্ছ্বসিত এ নায়িকা। তিনি বলেন, এটা তার ক্যারিয়ারের বড় অর্জন। এ ব্যাপারে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে পূর্ণিমা বললেন, যখন সেন্সর সদস্য হওয়ার চিঠি পেয়েছি আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। এত বছরের ক্যারিয়ারে বড় প্রাপ্তি ও গর্বের। কারণ আগে যখন সিনেমা সেন্সরে জমা হতো, তখন কিছুটা নার্ভাস লাগত। জানার আগ্রহ থাকত আমার সিনেমাটি আনকাট পাস হয়েছে কিনা। এখন সেই সেন্সরের বোর্ডের সদস্য হয়ে আমি বিভিন্ন ধরনের সিনেমা উপভোগ করতে পারব। এতে সম্মানিতবোধ করছি।
সেন্সর বোর্ডের সদস্য হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পূর্ণিমা বলেন, কখনো সেন্সর বোর্ডের সদস্য হতে পারব এটা মনেই হয়নি। ওখানে যাওয়ার জন্য যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছি মনে করি না। তবুও আমাকে রাখা হয়েছে এবং সম্মান জানানো হয়েছে। আমি আমার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব। এই সম্মানজনক কমিটিতে আমাকে রাখার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ব্যক্তিজীবনে পূর্ণিমা ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি প্রথম কন্যাসন্তানের মা হন। এরপর প্রথম সংসারে বিচ্ছেদ হয় তার। ২০২২ সালে আবারও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তার স্বামীর নাম আশফাকুর রহমান রবিন। পেশায় তিনি দেশের বহুজাতিক একটি কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে অনেকটা অনিয়মিত হলেও ব্যক্তিজীবন ও চলচ্চিত্রজীবন দুই মাধ্যমেই নিজেকে বর্ণিল করে রেখেছেন তিনি।