১৯৮৫ সালে থিয়েটার নাট্যদলের হয়ে মঞ্চে যাত্রা শুরু করেন তৌকীর আহমেদ। পরবর্তী সময়ে টেলিভিশন, সিনেমায় কাজ করলেও মঞ্চের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি এই অভিনেতা ও নির্দেশক। চার দশক মঞ্চে যুক্ত থাকা তৌকীর আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে মঞ্চনাটক আরও ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করা উচিত ছিল। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার চর্চাটা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ৩ ও ৪ জুলাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে প্রদর্শিত হয় তৌকীর আহমেদের নির্দেশিত নাটক 'তীর্থযাত্রী'। নাটক প্রদর্শনী শেষে মঞ্চনাটক নিয়ে আফসোসের কথা জানান তৌকীর আহমেদ।
তৌকীর আহমেদ বলেন, 'আমাদের দেশে মঞ্চ আরও ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করা উচিত ছিল। তাহলে আমাদের মানস গঠনে সুবিধা হতো। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে থিয়েটার চর্চা হতে পারত। সব জেলায় যদি নাট্যচর্চা অব্যাহত থাকত, তাহলে হয়তো সমাজের শিক্ষার একটি ক্ষেত্র হতে পারত থিয়েটার। অবক্ষয় ও অস্থিরতা দূর হতে পারত। সেই জায়গাটি হয়নি। দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মনে এই ভাবনাটা আসা উচিত। আমি মনে করি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার চর্চা বাড়ানো প্রয়োজন।'
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আমাদের দেশে নাট্যচর্চা হচ্ছে। তবে এখনো এই মাধ্যমে আসেনি পেশাদারির ছোঁয়া। এ নিয়ে আফসোস আছে তৌকীর আহমেদের। তিনি বলেন, 'মঞ্চে অবশ্যই পেশাদারি আসা উচিত। এটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, এটা আমাদের এখানে হয়নি। এর চেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের কয়টি মঞ্চে বা কয়টি জেলায় ঠিকমতো থিয়েটার চর্চা হচ্ছে? সংখ্যায় আগের চেয়ে কমে গেছে। কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। সমাজ বদলেছে, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের অর্থচিন্তা পাল্টেছে। সুতরাং থিয়েটারের জন্য মেধা ও শ্রম আমরা বেশি পাচ্ছি না। প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকার জন্য যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়, বিপণনের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেখানে আমাদের দেশের থিয়েটার সেই অবস্থানে নেই। এরপরও দর্শক নাটক দেখতে আসছেন। বিষয়টি আমাকে অনেক আশাবাদী করে।' বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও শিল্পমানের বিচারে মঞ্চকে এগিয়ে রাখলেন তৌকীর। তিনি বলেন, 'আমি তিনটি ক্ষেত্রেই ঘুরে ঘুরে কাজ করেছি। কোনোটির চেয়ে কোনোটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাজের এই বৈচিত্র্য আমাকে নতুন উদ্যম দেয়। কিন্তু মঞ্চে আমরা শিল্পমান ধরে রেখে কাজ করার সুযোগটা বেশি পাই। এটি যেহেতু বাণিজ্যিক কাজ নয়, তাই এখানে মূল লক্ষ্য থাকে গুণগত মান ও শিল্পমানটা ঠিক রাখা। তাই মঞ্চে তৃপ্তিটা বেশি থাকে এবং এখানে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। সেই জায়গাটা অনেক আনন্দের।' মঞ্চে চার দশক নিয়ে তৌকীর আহমেদের ভাষ্য 'আমার যা কিছু শেখা তা মঞ্চ থেকে। মঞ্চই আমার স্কুল হিসেবে কাজ করেছে। মঞ্চে আসা মানে নিজেকে রিফ্রেশ করা, আবার একটু ঝালাই করা। মঞ্চ প্রতিনিয়ত আমাকে ঋদ্ধ করে এবং নতুন করে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়।'