রুচিশীল অভিনয় আর মিষ্টি হাসিতে কয়েক প্রজন্মের ভালোবাসা অর্জন করা অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। এবার তরুণ অভিনয়শিল্পীদের জন্য পরামর্শ দিলেন এই অভিনেত্রী। একটি ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্ম দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুবর্ণা মুস্তাফা জানান, অভিনয়ে ভালো করতে চাইলে অবশ্যই পড়াশোনা করতে হবে। পড়াশোনাটা তরুণ অভিনয়শিল্পীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, কাজকে সম্মান করা দরকার। শুটিংয়ের কল টাইম ১০টায়। সিনিয়ররা বসে আছেন, অথচ তুমি এসেছ চারটায়। কারণ তুমি ফ্লেভার অব দ্য মান্থ। এটা করা যাবে না। ভালো কাজ ছাড়া শিল্পীদের টিকে থাকা খুবই কঠিন বলে মনে করেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। উদাহরণ হিসেবে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের কথা বলেন তিনি।
সুবর্ণা মুস্তাফার কথায়, বাঁধনের জীবনের কথাই যদি বলি, সে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। অথচ পড়াশোনাসহ সে সব কিছুতেই ভালো করে গেছে। তাকে নিয়ে কোনো অভিযোগও কারও নেই।
সময়ের মূল্য দিতে শিখতে হবে। তা না হলে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হবে বলে মনে করেন এই গুণী অভিনেত্রী। তবে অভিনয় ভালো না লাগলে অভিনয়ে আসার কোনো অর্থ দেখেন না সুবর্ণা মুস্তাফা। গুণী এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, যে কাজই করো, সেটাকে ভালোবেসে করো। যেটা ভালো লাগে, সেটাকে প্যাশন হিসেবে নিতে হবে।
মঞ্চ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। মূলত ছোটবেলা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। এরপর আশির দশকে টিভিতে অভিষিক্ত হন। ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে বরকত উলস্নাহর পরিচালনায় 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হন এই তারকা। এছাড়া 'আজ রবিবার' নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত 'ঘুড্ডি' সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় সুবর্ণার অভিষেক ঘটে। তার প্রথম বাণিজ্যিক সিনেমা কাজী জহির পরিচালিত 'নতুন বউ'। এই সিনেমায় নাম-ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এ সিনেমায় লাকী আখান্দের গাওয়া 'চলো না ঘুরে আসি অজানাতে' গানটি এখনো দর্শকের মুখে মুখে ফেরে।
সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত উলেস্নখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে 'লাল সবুজের পালা', 'নয়নের আলো', 'শঙ্খনীল কারাগার', 'রাক্ষস', 'কমান্ডার', 'অপহরণ', 'স্ত্রী', 'দূরত্ব' ইত্যাদি।
অভিনয়জগতে বিশেষ অবদান রাখায় একুশে পদক পেয়েছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। এ পদক তিনি তার দীর্ঘজীবনের সহকর্মীদের উৎসর্গ করেছেন। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, এই পুরস্কার আমি আমার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনের যারা সাথি তাদেরকেই উৎসর্গ করেছি। আমার সহকর্মী, সহ-অভিনেতা, নির্দেশক, রচয়িতা, কলাকৌশলী প্রত্যেকেই এই পুরস্কারের সঙ্গে জড়িত। পুরুস্কার পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে এ অভিনেত্রী বলেন, এটা আমাদের দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একটা পুরস্কার। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাওয়ার্ড। আমি বিশ্বাস করি এটা আমার দীর্ঘ কর্মজীবনেরই একটা প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, যে কাজটা আমি করছি, যেভাবেই করছি, সেই পথটি আমি ঠিকই বেছেছি। আমি যতদিন বেঁচে আছি, যতদিন কাজ করি সেই একাগ্রতা নিয়েই করব।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, বাংলা গান হবে, বাংলা কবিতা পড়বে শিশুরা, যারা এই সংস্কৃতি থেকে দূরে আছে তারা এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখাবে, যদিও এ দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তাদের উৎসাহী করতে আমাদেরই ভূমিকা পালন করতে হবে।
দীর্ঘদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণার পর
সুবর্ণা মুস্তাফা ২০১৯ সালে নাম লেখান রাজনীতিতে। ওই বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসন ঢাকা-২২ থেকে তিনি মনোনয়ন পান এবং পরে তাকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সুবর্ণা। অভিনেতার সঙ্গে দীর্ঘ ২২ বছর সংসার করার পর ২০০৮ সালে বিয়েবিচ্ছেদ হয় এই তারকা দম্পতির। পরবর্তী সময়ে নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে
করেন তিনি।