দুই বাংলার সমান দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াথ রাশিদ মিথিলা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপক পাঠকপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজারের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কথা বললেন তাহসানের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সৃজিতের স্ত্রী আর মেয়ে আয়রাকে নিয়ে পাশাপাশি বাংলাদেশের সিনেমা আর নিজের অভিনয় নিয়ে।
বাংলাদেশের সিনেমাকে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, এখানকার নিম্নমানের সিনেমার কথা। আর এই সিনেমার দর্শকও সব নিম্ন শ্রেণির। এভাবে তিনি বাংলাদেশের মানুষকে নিচে নামিয়ে এনেছেন। এ দেশের কিছু লোক আছে যারা ওপারে গিয়ে কদর পাওয়া বাসনায় দেশের মানুষকে যতদূর পারেন নিচে নামান। আবার এখনকার সিনেমার কথা বলতে গিয়ে বলেন, 'এখন আবার লোকে ছবি দেখতে যেতে চাইছেন। কারণ মৌলিক গল্পের উপর প্রচুর কাজ হচ্ছে।' কোন সিনেমা দর্শক দেখতে চাইছে? কোন সিনেমা মৌলিক গল্পে হচ্ছে যা দেখতে লোকেরা আগ্রহী? এ দেশে এখনকার চেয়ে মৌলিক গল্পে সিনেমা আগেও তৈরি হয়নি? 'সূর্যদীঘল বাড়ি', 'ঘুড্ডি', 'মেঘের অনেক রং', 'দহন' প্রভৃতি হয়নি? বাইরে থেকে পুরস্কার বয়ে আনেনি? আর যে সিনেমাগুলো সম্প্রতি প্রচুর দর্শক হয়েছে সেগুলো কি মৌলিক গল্পে নির্মিত? 'হাওয়া' সিনেমার গল্পটি কি মৌলিক? এরকমই আলটপকা উত্তর আছে এই গোটা সাক্ষাৎকারটিতে।
প্রসঙ্গ আসে আবার বিচ্ছেদের পরও নতুন করে সম্পর্ক হওয়াটিও। সম্প্রতি ঈদে তাহসানের ওয়েব সিরিজ মুক্তি পাওয়া নিয়ে মিথিলা বলেন, ২০১৬ সালের পর আমরা আর কাজ করিনি। ২০১৭ সালে আমাদের বিচ্ছেদ হয়। এত বছর পর কাজ করলাম। এ নিয়ে চারদিকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলো। লোকে বলে, টাকা-পয়সার জন্য এক হয়েছে অথচ শিশু সন্তান এক রাখতে পারল না তাদের! লোকে তো জানেই না আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা। আমরা খুব ভালো আছি। আমাদের যখন বিচ্ছেদ হয় আয়রার বয়স মাত্র এক বছর। ওকে নিয়ে সব জায়গায় ঘুরেছি। বাড়ির সাহায্য পেয়েছি। তাহসানের কাছে বাচ্চাকে রেখে বাইরে গেছি। কর্মসূত্রে যখন বাইরে যাচ্ছি, তখনো আমি আয়রাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে কাজের জায়গা থেকে ওরা আপত্তি করেনি।
তিনি আরও বলেন, আফ্রিকায় একটা কথা আছে, 'একটা বাচ্চাকে বড় করতে পুরো গ্রামের প্রয়োজন'। এটাই সত্যি। আমি বলতে চাচ্ছি, বাচ্চা মানুষ করার ক্ষেত্রে দাদা-দাদি, শাশুড়ি ও বন্ধু সবার প্রয়োজন হয়।
মিথিলা বলেন, দর্শকরা ভাবছেন, ২০১৬-এর পর ২০২৪-এ মিথিলা আর তাহসানের দেখা হলো। এটা তো না, আমাদের তো প্রতিদিনই কথা হয়। ব্যাপারটা ও রকম নয় যে বহু বছর পর দুজনের দেখা হলো, আর পেছনে মিউজিক বাজছে, তা তো নয়।
বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক রাখা স্বাভাবিক কিনা, এমন প্রশ্নে মিথিলা বলেন, সব সম্পর্কে বন্ধুত্ব না-ও থাকতে পারে।
কিন্তু সন্তান থাকলে তার স্বার্থ আগে দেখতে হবে। সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য আমার কাছে সবার আগে। এটাই উচিত। আমি আয়রাকে দেখতে পেলাম না। আমি আর তাহসান লড়াই করলাম, এই ইগোর যুদ্ধে তো বাচ্চার ক্ষতি হবে। আর এই সন্তানটি যদি কন্যা সন্তান না হয়ে ছেলে সন্তান হতো তাহলে তার এই চিন্তাটি কীভাবে সাজানো হতো?
তিনি বলেন, আমি আর তাহসান ১৪ বছর একসঙ্গে থেকেছি, ঘরসংসার করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করেছি। দুজন দুজনকে ভালো করে জানি। আয়রা আমাদের দুজনের কাছে সবার আগে।
আয়রা তোমাদের দুজনের কাছে সবচেয়ে আগে হলে সৃজিত, এমন প্রশ্নে মিথিলা বলেন ও সবটাই জানে। বাংলাদেশে গেছে। আমার পরিবারকে দেখেছে। তাহসানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দেখেছে। বিয়ের মতো সম্পর্ক হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কারণ থাকে, সৃজিত সব কিছু জেনেই আমাকে গ্রহণ করেছে।
তা ছাড়া আয়রার সঙ্গে সৃজিতের চট করে বন্ধুত্ব হয়, আর আয়রা সৃজিতকে 'আব্বু' বলেও ডাকে বলে জানান মিথিলা। সৃজিত আব্বু, তাহলে তাহসানকে, এমন প্রশ্নে মিথিলা বলেন, 'বাবা' আর এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আমি মিথিলা।
সমাজ আর সংবাদমাধ্যমে তিনি জর্জরিত সৃজিত মুখোপাধ্যায় আর তাহসান রহমান খানকে ঘিরে প্রশ্ন নিয়ে। কিন্তু এগুলো কোনো কথাই হয় না যেগুলো বললেন। কোনো লজিকই আসে না তাতে। আবার এর লজিক্যাল বাস্তবতাও নেই যে, কেন তাহসান আর মিথিলার ঘরসংসার ভাঙল। আবার যদি কোনো লজিক্যাল কারণে সংসার ভাঙেও তাহলেও আবার দুজনে প্রতিদিনই সহজ স্বাভাবিক কথা হবে, কাজ হবে, আলোচনা হবে কীভাবে। সেটা কি প্রাক্তন স্ত্রীর পক্ষে স্বাভাবিক নাকি প্রাক্তন হাজব্যান্ডের পক্ষে স্বাভাবিক। নিশ্চয় দু'জনের সমান স্বাভাবিক হবে না! আর যদি সংসার ভাঙার পেছনে এমন লজিক্যাল কারণ থাকেই সেই কারণ তো অন্য যেকোনো পুরুষের সঙ্গেও হতে পারে। কারণ এক ছাদের নিচে থাকলে পৃথিবীর সব পুরুষই লজিক্যালি একই। তাইতো আবার তাহসান আর মিথিলা বৈবাহিক এক না হলেও অন্য সবরকম এক হতে পারছেন। তাহলে সংসার ভাঙার বাস্তব কারণটি কোথায়?
নাকি কোনো কারণ লুকিয়ে আছে তাতে, যা কখনোওই প্রকাশ পাবে না মিথিলার জবানে? তাইতো আনন্দ বাজারের সাক্ষাৎকারে একটি প্রশ্নে প্রকাশ হয়ে পরে 'সৃজিতের ছবিতে আপনার অভিনয়, আপনার নাকি সৃজিতের, কার চাওয়া মিলছে না?'- এই প্রশ্নের উত্তরটি কিন্তু যথাযথাভাবে মিথিলার দেওয়া হলো না। না বুঝেই আলটপকা একটা উত্তর দিয়ে দিলেন আর কি।