একটা সময় ছিল টিভি পর্দা মানেই জাহিদ হাসান। দর্শক মুখিয়ে থাকতেন জাহিদ হাসানের জন্য। আর দেশের ঈদ উৎসবে তো নানা রকম নাটক নিয়ে জাহিদ হাসানের উপস্থিতির কথা বলাই বাহুল্য। এসব নাটকে নানারূপে দেখা মিলত তার। এমনকি অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেও নির্মাণ করতেন ঈদ নাটক।
৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের প্রথমসারির অভিনেতাদের একজন হিসেবে কাজ করছেন তিনি। টেলিভিশন ছাড়াও তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়েও আসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত 'শ্রাবণ মেঘের দিন' তার অভিনীত অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে মতি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে বিভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তবে দর্শকের কাছে তার অন্যান্য চরিত্রগুলোর পাশাপাশি কৌতুক চরিত্রগুলো বেশি আদরণীয়। তার বিখ্যাত কৌতুক চরিত্র ছিল হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত টেলিফিল্মে মফিজ নামক একটি পাগলের চরিত্র। যে চরিত্রটি প্রকাশের পর সারা দেশে 'মফিজ' নামটি মানুষের মুখে প্রচারিত হতো। কিছু কিছু অভিনেতা আছেন যাদের অভিনয়ের জন্য শুধু নামটিই যথেষ্ট। সে রকম অভিনেতাদের মধ্যে বাংলাদেশে জাহিদ হাসান বলতে গেলে একটিই। যাকে দিয়ে সব রকম অভিনয় করিয়ে নেওয়া যায়। সেই অভিনয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন নাটক, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে। তার স্ত্রী নব্বই দশকের নাম্বার ওয়ান মডেল সাদিয়া ইসলাম মৌ।
জাহিদ হাসান প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন যৌথ প্রযোজনায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত আব্দুল লতিফ বাচ্চু পরিচালিত 'বলবান' ছবিতে প্রথমবার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছোট পর্দায় অভিনয় করে দর্শককে তো আগেই মাতিয়েছেন। এরপর বড় পর্দায় দর্শক মাতালেন সিনেমার অভিনয় কী রকম হয়। ছবিটি সেসময় ব্যাপক আলোচিত ছিল।
এরপর তো আরও ছবিতে দেখা গেল জাহিদ হাসানকে। 'জীবনসঙ্গী', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'শঙ্খনাদ', 'মেড ইন বাংলাদেশ', 'ঝন্টু মন্টু দুই ভাই', 'আমার আছে জল', 'প্রজাপতি', 'হালদা', 'বিজলী', 'সাপলুডু' 'শনিবার বিকেল' ও 'সিতারা'।
'শ্রাবণ মেঘের দিন' নিঃসন্দেহে জাহিদ হাসানের ক্যারিয়ারের সেরা ছবি। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় একজন গায়েনের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। বিপরীতে শাওন। এ ছবিতে তার লিপে 'পূবালী বাতাসে, ওলো ভাবীজান নাও বাওয়া মদ্দ লোকের কাম' গানগুলো তুমুল জনপ্রিয় ছিল।
চলচ্চিত্রে জাহিদ হাসানের সম্ভাবনা অনেক এখনো। তাকে মূল চরিত্রে রেখে শক্তিশালী গল্পের ছবি করানো সম্ভব। জাহিদ হাসানের অভিনয় শক্তিকে ব্যবহার করে তাকে আরও অনেকটা সময় চলচ্চিত্রে দরকার। কিন্তু নির্মাতাদের মগজে সেরকম সিনেমা বানানোর মতো মালমসলা তো দিনকে দিকে কমতির দিকেই।
ফলে গত কয়েক বছরে তার যেন কাজ কমে গেছে। ঈদ এলে এখন আর আগের মতো দেখা যায় না তাকে। সর্বোচ্চ দু-একটি নাটকে কাজ করেন তিনি। তবে এবারের ঈদে তিনি হাজির হয়েছেন দুটি ৭ পর্বের ধারাবাহিক নাটক নিয়ে। এরমধ্যে একটি হলো হানিফ খান পরিচালিত নাটক 'ক্ষমা করে দিও'। এতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। জাহিদ হাসান বলেন, দুটি সাত পর্বের কাজ করেছি।
বৈশাখীতে চলছে 'ক্ষমা করে দিও'। বেশ সুন্দর একটি গল্পে কাজটি হয়েছে। নাটকে অভিনয় কমিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ করছি খুব কম। তবে করছি। একেবারেই যদি না করতাম তাহলে তো ঈদে কাজ আসত না। তবে আমি কাজ কমিয়ে দিয়েছি ব্যাপারটা এমন না। নাটকের বর্তমান অবস্থা যা তাতে কাজ করাটা খুবই কষ্টকর। নাটকের জন্য এখন আর আগের মতো মানসম্পন্ন গল্পই নেই। যা হচ্ছে তাতে আসলে আমাদের মতো অভিনেতার প্রয়োজন হয় না। কাজের যা প্রস্তাব আসছে তাতে অভিনয় করতে ইচ্ছা হয় না। তাই কাজ কম হচ্ছে। উলেস্নখ্য, বৈশাখী টিভির নাটক ছাড়াও এবারের ঈদে একুশে টেলিভিশনে প্রচার চলছে জাহিদ হাসান অভিনীত সাত পর্বের বিশেষ ধারাবাহিক 'মি. সুলতান'। এটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন সাখাওয়াৎ মানিক। জাহিদ হাসান ছাড়াও নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহানা মিলি, স্বাগতা, আ.খ.ম. হাসানসহ অনেকে।