ভারতের চন্ডিগড় বিমানবন্দরে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য কঙ্গনা রানাউতকে চড় মারার ঘটনায় গোটা ভারতে হইচই পড়ে গেছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ওই নারী কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিকে মেয়ের এমন কান্ডে মুখ খুললেন অভিযুক্ত কুলবিন্দর কৌরের মা। কঙ্গনাকে চড় মারার ঘটনায় যা বললেন সেই নারী কনস্টেবলের মা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বীর কৌর বলেন, 'আমার মেয়ে যেটা করেছে ঠিক করেছে।' প্রসঙ্গত, সিআইএসএফ কনস্টেবলের মা বীর কৌর নিজেই পাঞ্জাবে হওয়া কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তবে শুধু মা বীর কৌর নন, ঘটনায় মুখ খুলেছেন অভিযুক্ত কুলবিন্দর সিংয়ের দাদা শের সিং মাহিভাল। তিনি বলেন, 'আমি সংবাদমাধ্যমের সাহায্যেই চন্ডিগড় বিমানবন্দরের ওই ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। বুঝেছি যে কঙ্গনার মোবাইল এবং পার্স চেক করার সময় এ ঘটনাটি ঘটেছে। তর্কবিতর্কের পর আমার বোন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল, যে কারণে ঘটনাটা ঘটেছে। সেনা এবং কৃষক, দুপক্ষই তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। এই বিষয়ে আমরা আমার বোনকে পূর্ণ সমর্থন করছি।'
এদিকে কঙ্গনাকে চড় যিনি মেরেছেন, সেই নারী নিজে ঘটনার বিষয়ে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে লিখেছেন- 'আমার নিজের চাকরির চিন্তা নেই, মায়ের সম্মানের জন্য আমি এমন হাজারও চাকরি কোরবান করতে পারি।'
এদিকে ভারতের নবনির্বাচিত বিজেপিদলীয় এমপি ও অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের গালে থাপ্পড় মেরে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সিআইএসএফের নারী কনস্টেবল কুলবিন্দর কৌরের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তার জন্য ১ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন শিবরাজ সিং বাইনস নামে মোহালির এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, থাপ্পড়কান্ডে অভিযুক্তকে নারীকে ১ লাখ রুপি পুরস্কার দেবেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে নেটদুনিয়ায়।
শুধু তাই নয়, একটি ভিডিও শেয়ার করে কুলবিন্দরকে কুর্ণিশও জানান ওই ব্যবসায়ী। পাশাপাশি পাঞ্জাবের সংস্কৃতি এবং মানুষের ভাবাবেগকে বাঁচানোর জন্য ওই সিআইএসএফের কনস্টেবলের প্রশংসাও করেন তিনি।
শের সিং মাহিওয়াল কুলবিন্দরের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে তার ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, বোনকে পুরোপুরি সমর্থন করি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে ওই কনস্টেবলের ভাই হিসেবে বক্তব্যও রাখতে শোনা যায় তাকে।
বিমানবন্দরে কঙ্গনাকে থাপ্পড় মারার ঘটনার পর কুলবিন্দরের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। কোর্ট অব এনকোয়ারির নির্দেশ দেয় সিআইএসএফ। এরই মধ্যে শের সিং মাহিওয়াল জানান, ওকে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। এই ব্যক্তি কপুরথালায় কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির অর্গানাইজেশন সেক্রেটারি বলে জানা গেছে।
এক ভিডিও বার্তায় কঙ্গনা বলেন, তিনি সংবাদমাধ্যম ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেকের কাছ থেকে প্রচুর ফোন পাচ্ছেন। ওই নারী কনস্টেবল আমার দিকে এগিয়ে এসে মুখে আঘাত করেন এবং আমাকে নিপীড়ন করতে শুরু করেন। কারণ জিজ্ঞাসা করতে তিনি (নারী কনস্টেবল) বলেন, যে তিনি কৃষক আন্দোলন সমর্থন করেন।'
কঙ্গনা আরও বলেন, 'আমি নিরাপদ আছি। কিন্তু আমি উদ্বিগ্ন যে পাঞ্জাবে সন্ত্রাস বাড়ছে...কীভাবে আমরা এটা সামলাব?'
কঙ্গনাকে হেনস্তা করার বিষয়ে ওই নারী কনস্টেবল বলেন, 'কঙ্গনা বলেছিলেন যে কৃষকরা দিলিস্নতে বিক্ষোভ করছেন; কারণ তাদের ১০০ বা ২০০ রুপি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই বিক্ষোভকারীদের একজন ছিলেন আমার মা। এজন্য মায়ের সম্মান রক্ষায় সে এমন কাজ করেছে।'
এদিকে কঙ্গনাকে চড় কষানোর ঘটনায় গোটা বলিউড নীরব থাকলেও মুখ খুলেছেন সঙ্গীত পরিচালক বিশাল দাদলানি। তিনি কুলবিন্দরের সমর্থনে লেখেন, 'আমি কখনোই হিংসা সমর্থন করি না। তবে আমি ওই নারীর রাগের কারণ বুঝতে পারি। সিআইএসএফ যদি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তবে আমি ওর চাকরি নিশ্চিত করব, যদি তিনি সেই চাকরি গ্রহণ করতে চান। জয় হিন্দ। জয় জওয়ান। জয় কিষাণ।'