রাজনীতিতেও সফল তারা
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন ডেস্ক
এখন অভিনয়ের মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানো তারকারাও রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে চান। এ ক্ষেত্রে রাজনীতির মাঠে নেমেই সফল হয়েছেন ভারতের বেশ কিছু তারকা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক তারকারা লড়াই করেছেন। ভারতের হিমাচল প্রদেশের মান্ডি থেকে বিজেপি প্রার্থী হয়ে লড়াই করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। প্রথমবার রাজনীতির মাঠে নেমেই চমক দিলেন তিনি।
আবার ভারতের উত্তর প্রদেশের মথুরাতে জয়ের হাসি হাসলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হেমা মালিনী। তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অরুণ গোভিল। তিনি ভোট গণনায় প্রথমে পিছিয়ে থাকলেও পরে বেশ লিড নেন। বিজেপির আরেক প্রার্থী রবি কিষানও জয়ী হয়েছেন এবারের ভোটে। তবে বিহারের কারাকাট কেন্দ্র থেকে জিততে পারেননি ললিপপ লাগেনু গানের গায়ক পবন সিং।
অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় বিজেপির দুই প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় দুজনেই পরাজিত হয়েছেন। দেব বিপুল ভোটে হিরণকে হারিয়ে আবারও ঘাটাল কেন্দ্রে জয়ী হলেন। অন্যদিকে হুগলি কেন্দ্রে প্রথমবার লড়াইয়ে নেমেই জয়ী হলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরাজিত করলেন লকেটকে।
দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থেকে জয়ী হয়েছেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। জুন মালিয়াও বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালকে হারিয়ে মেদিনীপুরে জয়ী হয়েছেন। শতাব্দী রায় বীরভূমে আবারও জয়ী হয়েছেন। চমক দিয়ে এবার বহরমপুরে জয়ী হয়েছেন ইউসুফ পাঠান। আসানসোল কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলেন শত্রম্নঘ্ন সিনহা।
তবে এবারের নির্বাচনে বড় চমক ছিল কঙ্গনা রানাউত। হঠাৎ রাজনীতিতে নেমে চমকে দিয়েছিলেন এই বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা। রাজনীতির মাঠে নেমেই প্রথম বলেই যেন ছক্কা হাকালেন এই অভিনেত্রী। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারই বিপুল ভোটে জয় ছিনিয়ে নিলেন ৩৭ বছর বয়সি এই অভিনেত্রী।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই সকলের চোখে হিমাচল প্রদেশের মান্ডির দিকে। ভোট গণনার সাথে সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ভরাডুবি হবে কঙ্গনার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন এই তারকা অভিনেত্রী।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজ আসনে বিজেপির প্রার্থী কঙ্গনা নিকটতম প্রার্থী কংগ্রেসের বিক্রমাদিত্য সিংকে ৭৪ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন। বিক্রমাদিত্য পেয়েছেন চার লাখ ৬২ হাজার ২৬৭ ভোট।
এদিন বিকেলে কঙ্গনা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের জয়ের বিষয়ে জানান। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে অভিনেত্রী লিখলেন, 'সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমার প্রতি এই আস্থা ও বিশ্বাস দেখানোর জন্য। এই জয় আপনাদের সবার। এই জয় প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপির প্রতি আস্থার।'
অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে অগ্নিমিত্রা পালকে প্রার্থী করেছিল বিজেপির। কিন্তু এ আসনে হেরে গেলেন তিনি। তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়ার কাছে হারলেন অগ্নিমিত্রা পাল।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোটের গণনা শুরু হতেই দেখা যায় অগ্নিমিত্রা পাল কিছুটা এগিয়ে। অনেকে মনে করেছিল, হয়ত এ যাত্রায় মেদিনীপুর থেকে গেল বিজেপির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জুন মালিয়ার কাছে হারতে হয় অগ্নিমিত্রাকে। বিজেপি হারতে হয় তৃণমূলের কাছে। ৩২ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হলেন তৃণমূলের জুন মালিয়া।
অন্যদিকে দিলীপ ঘোষকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। সেখানে হেরে যান দিলীপ। কীর্তি আজাদের কাছে হারতে হয় তাকে। ফলে একদিকে সংসদ সদস্য পদ খুইয়ে দিলীপ এই মুহূর্তে একজন সাধারণ বিজেপি কর্মী।
টলিউডে একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন দীপক অধিকারী দেব। রাজনীতিতে নেমে প্রথমবারেই লোকসভার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। সেই জয়রথ থামল না, টানা তৃতীয়বারের মতো এমপি হলেন তিনি। ঘাটাল লোকসভা বিশাল ব্যবধানে জিতেছেন দেব।
এর আগে ২০১৪ সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রানাকে বড়সড় ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হন তৃণমূল সাংসদ দেব। সেবার বিজেপি খুবই কম ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ এবং ২০১৯ পরপর দুবার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন দেব। আর এবার সেই দেবের বিপরীতেই এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তার টলিপাড়ার বহুদিনের সহকর্মী হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
অভিনয় থেকে রাজনীতি, দুই ক্ষেত্রেই দেব-হিরণের 'মসৃণ সম্পর্ক' কারও অজানা নয়। সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে পদ্ম শিবির। কিন্তু সেই চেষ্টা যে বিফলে গেল, তা মোটামুটি পরিষ্কার। আপাতত পার্শ্বচরিত্র হয়েই থেকে গেলেন হিরণ।
আবার ওদিকে এ বারের ভোটে প্রার্থী হতেই 'নারাজ' ছিলেন দেব। নিজেই প্রকাশ্যে সে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তিনি মত বদলান। শুধু তা-ই নয়, ভোটপ্রচারের শুরু থেকেই স্বভাবসিদ্ধ গন্ডির বাইরে গিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলেন দেব। কোনো সময় অভিজ্ঞ নেতার মতো দলীয় কর্মী, নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে, কখনো আবার কোন্দল থামিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে পথ চলার বার্তাও দিয়েছেন।
এই বছর তৃণমূল কংগ্রেস যখন তার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল তখন সেই তালিকার অন্যতম চমক ছিলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির ময়দানে নতুন হলেও প্রচারে এতটুকু ফাঁক ছাড়েননি তিনি। অবশেষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ হাসি হাসলেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
এবার রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপক্ষে বিজেপির তরফে হুগলি কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছিল লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। এদিন ৬৪ হাজার ৯৭২ ভোটে তিনি তার সহকর্মী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করলেন।
৪ জুন ভোট গণনার সময় প্রথমে অনেকটা পিছিয়ে পড়লেও পরে সেই গ্যাপ যে কেবল রচনা মেকআপ করেন সেটাই নয়, একই সঙ্গে তিনি বিপুল ভোটে এগিয়ে যান। এদিন সকালে গণনা কেন্দ্রে ঢোকার আগে রচনা জানিয়েছিলেন তিনি জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। একই সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তিনি শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেন না।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক তারকারা কর্মীরাই এদিন জয়ী হয়েছেন। ইউসুফ পাঠান (বহরমপুর), শত্রম্নঘ্ন সিনহা (আসানসোল) সায়নী ঘোষও (যাদবপুর) বিজয়ের হাসি হেসেছেন।