চিরসবুজ কুমার বিশ্বজিৎ

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন রিপোর্ট
বাংলা গানের চিরসবুজ গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ। আশির দশক থেকে এখন অব্দি তিনি গান করছেন। তার বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবন সমৃদ্ধ করেছে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে। কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া বহু গান হয়ে আছে বাঙালির প্রাণের অনুষঙ্গ। কালের সীমানা জয় করে সেগুলো হয়ে আছে গৌরবময় ইতিহাস। এখনো পর্যন্ত শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে কুমার বিশ্বজিতের 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে' এই গানটি। শুধু তাই নয় তার গাওয়া 'তুমি রোজ বিকেলে' ও 'যেখানে সীমান্ত তোমার' এর মতো গানগুলো এখনো দর্শকদের মুখে শোনা যায়। আজ ১ জুন সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন। ১৯৬৩ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা গানের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই শিল্পী। তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রাম জেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। কুমার বিশ্বজিৎ বাংলাদেশের সংগীতজগতের জনপ্রিয় এবং সম্মানিত ব্যক্তিদের একজন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন এ শিল্পী। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার, জিয়া স্মৃতি পুরস্কার, চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার, চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস বিনোদন বিচিত্রাসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি শুধু আধুনিক নয় চলচ্চিত্রের গানে অনেক অবদান রেখেছেন গুণী শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। গানের প্রতি রয়েছে তার অগাধ টান। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবারে বেড়ে ওঠায় কীর্তন ও শ্যামা সংগীত শোনার সুযোগ ছিল। তার বিশ্ব সঙ্গীতের উৎস ছিল রেডিও। এভাবে গান শুনতে শুনতে এক সময় শেখার প্রতিও আগ্রহ জন্ম নেয় কুমার বিশ্বজিতের। তার জনপ্রিয় গানগুলো মধ্যে আরও রয়েছে 'শিকারি', 'ও ডাক্তার', 'আমি নির্বাসনে যাবো না', 'সুখ ছাড়া দুঃখ দুঃখ ছাড়া সুখ', 'তারা ভরা রাত', 'আমার হাজার চাওয়া নেই', 'ইতিহাস', 'জ্বালাইয়া প্রেমের বাত্তি', 'বাজাও রাম লাল', 'প্রেম এক লটারি', 'অন্তর জ্বলে', 'একটা চাঁদ ছাড়া রাত'সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে শিল্পী কুমার বিশ্বজিতের। ছেলের অসুস্থতার কারণে গত কয়েকমাস ধরে গান বিষয়ক সব ধরনের কার্যক্রম থেকে দূরে আছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। গত বছরের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি কানাডার টরন্টোতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার। তখন থেকেই হাসপাতালে ভর্তি নিবিড়। ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কানাডায় ছুটে যান এ শিল্পী। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন। একমাত্র সন্তানের সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অপেক্ষায় কাটছে তার প্রতিটি মুহূর্ত। সংগীতের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই যেন নেই তার। দীর্ঘ দিন ধরে কানাডার টরন্টোর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে নিবিড়ের। এ প্রসঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ গণমাধ্যমকে বলেন, আমার সবকিছু এই সন্তানকে ঘিরে, আমার পুরো দুনিয়াটা থেমে আছে। এমন অবস্থায় একজন পিতা কেমন থাকতে পারে। আমার আশা, ভালোবাসা ভবিষ্যৎ, সবকিছু নিবিড়কে নিয়ে। একজন পিতা হিসেবে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিবিড়ের শারীরিক অবস্থা এখন অনেক উন্নতির দিকে। কেউ কিছু বললে সেটা বুঝতে পারে। তার দিকে তাকিয়ে থেকে সাড়া দেয়। বুঝতে পারে তাকে কিছু বলা হচ্ছে। দেরি আছে পুরোপুরি সুস্থ হতে। রিহ্যাবে নেওয়ার পর ফিজিওথেরাপি, স্পিচথেরাপি, স্টিমিউলেটেড থেরাপি এসব দিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী কাজ এসব। তিনি আরও বলেন, আমি ও নিবিড়ের মা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওর মা সন্তানের জন্য খুব কষ্ট করছেন। আমাদের জন্য খুব কঠিন একটা সময়। আমাদের পরিচিত স্বজন অনেকেই আছেন। তারাও দেখাশোনা করেন। ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবে আশা করছি। দীর্ঘদিন হাসপাতালে শুয়ে থাকার কারণে শরীর অসাড় হয়ে আছে। একটু একটু করে ঠিক হবে। গত দুই মাস থেকে তাকে চেয়ারে বসানো হচ্ছে। চেয়ে থেকে আমাদের চিনতে চেষ্টা করে। ডাকলে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। উলেস্নখ্য, দুর্ঘটনায় নিবিড়ের সঙ্গী ছিলেন তার বন্ধু আরিয়ান আলম দীপ্ত, শাহরিয়ার খান ও অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈ। তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।