কান চলচ্চিত্র উৎসব

ইতিহাসের পাতায় পায়েল সেরা অভিনেত্রী অনসূয়া

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন ডেস্ক
পায়েল কাপাডিয়া
শেষ হলো কান চলচ্চিত্র উৎসব। ফ্রান্সের কান শহরে অনুষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নেমেছে গতকাল। মঙ্গলবার (১৪ মে) ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের কান শহরের পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে শুরু হয় ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। গতকাল শনিবার ১২তম দিনে শেষ হয় উৎসবটি। পালে পদ ফেস্টিভ্যাল ভবনের দু্যবুসি থিয়েটারে বৃহস্পতিবার আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের দুটি প্রদর্শনী হয়েছে। এদিন সকাল ১১টায় ছিল সৌদি আরবের তৌফিক আল জায়দি পরিচালিত 'নোরা'। 'নোরা' পেয়েছে স্পেশাল মেনশন। কান উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে এটাই দেশটির প্রথম ছবি। একই বিভাগে দুপুর ২টায় দেখানো হয়েছে ফ্রান্সের সেলিন স্যালে পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র 'নিকি'। কান চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার আঁ সাঁর্তে রিগা। এতে এবার সেরা চলচ্চিত্র হয়েছে চীনের গুয়ান হু পরিচালিত 'বস্ন্যাক ডগ'। 'দ্য শেমলেস' ছবির সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন ভারতের অনসূয়া সেনগুপ্ত। শুক্রবার (২৪ মে) স্থানীয় সময় রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) দক্ষিণ ফ্রান্সে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দু্যবুসি থিয়েটারে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের 'বস্ন্যাক ডগ' ছবির গল্পে দেখা যায়, জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ল্যাং উত্তর-পশ্চিম চীনের গোবি মরুভূমির প্রান্তে নিজের শহরে ফিরে আসে। অলিম্পিক গেমসের আগে শহর পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত হয়ে একটি কালো কুকুরের সঙ্গে অন্য রকম সংযোগ গড়ে ওঠে তার। উভয়ে একাকী। তারা একসঙ্গে নতুন যাত্রা শুরু করে। শুক্রবার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন এবারের আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের প্রধান বিচারক কানাডিয়ান পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক জেভি দোলান। তার নেতৃত্বে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন মরক্কোর পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক আজমেই এল মুদির, ফরাসি-সেনেগালিজ চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক মাইমুনা দুকুরে, জার্মান-লুক্সেমবার্গ অভিনেত্রী ভিকি ক্রিপস, আমেরিকান চলচ্চিত্র সমালোচক, পরিচালক ও লেখক টড ম্যাকার্থি। ফরাসি চলচ্চিত্র 'দ্য স্টোরি অব সুলেমান' পেয়েছে দুটি পুরস্কার। আফ্রিকান দেশ গিনি থেকে প্যারিসে আসা একজন অভিবাসীর টিকে থাকার সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে এতে। এর পরিচালক বরিস লোজকাইন পেয়েছেন জুরি প্রাইজ। এতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হয়েছেন আবু সনগারে। যৌথভাবে সেরা পরিচালক হয়েছেন ইতালির রবার্তো মিনারভিনি (দ্য ড্যামড) এবং জাম্বিয়া/ওয়েলশের রুঙ্গানো নিয়োনি (অন বিকামিং অ্যা গিনি ফাউল)। এবারের আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে নির্বাচিত হয় ১৮টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে ৮টি ছবির পরিচালক নতুন। ফলে এগুলো ক্যামেরা দ'র পুরস্কারের মনোনয়নে রয়েছে। ক্যামেরা দ'র পুরস্কারের প্রধান বিচারক ফরাসি অভিনেত্রী এমানুয়েল বেয়াঁ ও বেলজিয়ান-কঙ্গোলিজ সঙ্গীতশিল্পী-নির্মাতা বালোজি। আগামী ২৯ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত প্যারিসের আরলু্যকাঁ প্রেক্ষাগৃহে আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগে নির্বাচিত ১৮টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হবে। আঁ সাঁর্তে রিগা বিভাগের বিজয়ী তালিকা সেরা চলচ্চিত্র: বস্ন্যাক ডগ (গুয়ান হু, চীন) জুরি প্রাইজ: দ্য স্টোরি অব সুলেমান (বরিস লোজকাইন, ফ্রান্স) সেরা অভিনেতা: আবু সনগারে (দ্য স্টোরি অব সুলেমান, ফ্রান্স) সেরা অভিনেত্রী: অনসূয়া সেনগুপ্ত (দ্য শেমলেস) সেরা পরিচালক: রবার্তো মিনারভিনি (ছবি: দ্য ড্যামড, ইতালি), রুঙ্গানো নিয়োনি (ছবি: অন বিকামিং অ্যা গিনি ফাউল, জাম্বিয়া/ওয়েলশ) ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড: হলি কাউ (লুইস কুরভয়জিয়ের, ফ্রান্স; প্রথম চলচ্চিত্র) স্পেশাল মেনশন: নোরা ( তৌফিক আল জায়দি, সৌদি আরব; প্রথম চলচ্চিত্র) শাজি এন করুণের 'সোয়াহাম' (১৯৯৪)-এর ৩০ বছর পর ভারতীয় কোনো সিনেমা জায়গা করে নিয়েছে কানের মূল প্রতিযোগিতায়। সিনেমাটি হলো, পায়েল কাপাডিয়ার 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট'। প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণ করেই প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হলেন পায়েল। গত ২৩ মে কানে প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। ৩৮ বছর বয়সি এই নির্মাতার 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট' ছবির মাধ্যমে ভারতের নাম দীর্ঘ ৩০ বছর পর মূল প্রতিযোগিতায় ফিরল। পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো মুম্বাইয়ের মেয়ে পায়েল কাপাডিয়া লালগালিচায় 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট' ছবির কলা-কুশলীদের নিয়ে হাজির হন। প্রদর্শনীতে পরিচালকসহ হাজির হয়েছিলেন তিন অভিনেত্রী কানি কুশ্রম্নতি, দিব্যা প্রভা ও ছায়া কদম এবং অভিনেতা ঋধু হারুন। এর আগে কানের ইতিহাসে আটটি ভারতীয় সিনেমা লড়েছিল প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে আছে বাঙালি দুই পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের 'পরশ পাথর' (১৯৫৮) এবং মৃণাল সেনের 'খারিজ' (১৯৮৩)। তবে ৭৮ বছর আগে চেতন আনন্দের 'নীচা নগর' সিনেমার মাধ্যমে একবারই স্বর্ণপাম জেতে ভারত।