শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

কী হচ্ছে শিল্পী সমিতি নিয়ে

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০
কী হচ্ছে শিল্পী সমিতি নিয়ে

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে ফের উত্তেজনার পারদ লাফাচ্ছে। গত মেয়াদে নিপুণ লড়াই করেছিল একা- জায়েদ খানের বিরুদ্ধে। এবার লড়ছেন দুই জায়ান্ট মিশা এবং ডিপজলের বিরুদ্ধে। বলা যায়, বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজলের সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিপুণের দ্বন্দ্ব এখন চরমে ও দৃশ্যমান। সেই সঙ্গে পুরনো শত্রম্নতাও চলে আসছে। জায়ের খানকেও কথার মিশাইলে পুড়ছেন নিপুণ। এরই মধ্যে নিপুণ বর্তমান কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন।

এর আগে ডিপজল চিত্রনায়িকা নিপুণের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'কেস খেলবা আসো,' বলে যেভাবে ব্যঙ্গোক্তি করেছিলেন তাতেই মনোয়ার হোসেন ডিপজল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তারা এফডিসি'কে কতটা দাপটের সঙ্গে শাসন করেন। শুধু তাই নয়, 'কেস খেলবা' বলে দেশের আইন-আদালতকেও তুচ্ছাতাচ্ছিল্য করেন তিনি। নিপুণের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'কেস খেলবা, আসো। যেটা খেলার মন চায় সেটাই খেলো। আমরা চাই, ভদ্রতা ও নম্রতা। আমরা চাই, চলচ্চিত্র কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেদিকেই কাজ করার। আমরা ঝামেলা চাই না।'

কি রকম দুমুখো কথা। এক দিকে বলছেন, 'কেস খেলবা আসো' আবার বলছেন, 'যেটা খেলার মন চায় সেটাই খেলো।' অর্থাৎ সব খেলাই খেলতে চান তিনি। নয়তো, এরপর তিনি কোন খেলার ইঙ্গিত করলেন? তারপর আবার বলেন, 'আমরা চাই ভদ্রতা ও নম্রতা।' কিন্তু বাস্তবে তিনি যে ব্যঙ্গসূচক ভাষা প্রয়োগ করলেন তা কি ভদ্রতা ও নম্রতার!

এইভাবে যারা দেশের আইন-আদালদকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাষায় অবজ্ঞা করতে পারেন- তাতেই বোঝা যায় তাদের হাত অনেক দূর পর্যন্ত লম্বা। কিন্তু নিপুণও তাতে দমে যাওয়ার পাত্র নন। পরে এক সাক্ষাৎকারে ডিপজলকে 'অশিক্ষিত' বলেছেন নিপুণ। তার এমন কথার জবাবে ডিপজল বলেন, 'সে তো বাপকেই অস্বীকার করে। রক্তের সমস্যা না হলে এমন বলতে পারে না। কারণ, ও (নিপুণ) যাকে দিয়ে চলচ্চিত্র চিনেছে তাকেই ভুলে গেছে, অস্বীকার করছে।'

কিন্তু ডিপজলের এমন কথাকে পাত্তা না দিয়ে নিপুণ তার ডিপজল আর মিশাকে মূর্খ ও মিথু্যক বলেছিলেন। নিপুণ বলেন, 'মিশা-ডিপজল দুজনেই মূর্খ। দুজনেই কম লেখাপড়া করা মানুষ। তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো ধরনের রুচিই আমার হয় না। তা ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির কে না জানে যে মিশা ভাই তো প্রচন্ড মিথু্যক একজন মানুষ। কথায় কথায় বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলাই তার স্বভাব। তাদের সঙ্গে এখন এ বিষয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে কথা হবে। এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।' এ ছাড়া জায়েদ খানকে তিনি বেয়াদপ বলেছেন।

এরপর থেকেই একের পর এক কথার ছোবলের মাধ্যমে বেপরোয়া হয়ে ওঠা অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারকে বয়কট করা হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিপুণকে নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলেছে চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠন। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে সেখান থেকে সরে আসেন সংগঠনের নেতারা। অর্থাৎ শিল্পীরা এখন নিপুণের বিরুদ্ধে কোনো হার্ড লাইনে না গিয়ে আইনি অপেক্ষায় থাকবে। মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিপুণের বিরুদ্ধে কিছু বলবে না। গত বুধবার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ১৯ সংগঠনের মুখপাত্র মোহাম্মাদ ইকবাল ও শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির মুখপাত্র ডি এ তায়েব।

ডি এ তায়েব বলেন, 'শিল্পী সমিতির সঙ্গে ১৯ সংগঠনের পরিচিত ও মতবিনিময় সভা ছিল গত বুধবার। আপনারা জানেন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটি এখন বিজ্ঞ আদালতের বিষয়। আদালতের ওপর আমরা শ্রদ্ধাশীল। সেটা আমরা আইনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করব।'

তিনি আরো বলেন, 'যেহেতু চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই অশালীন কথাবার্তা বলছে। ফলে শিল্পী সমাজের মানক্ষুণ্ন হচ্ছে। সে বিষয়টি আমরা ১৯ সংগঠনের কাছে উত্থাপন করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। পরবর্তী সময়ে যেন এসব বিষয় আর না হয়।'

এদিকে ইকবাল বলেন, ১৯ সংগঠনের মতবিনিময় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে শিল্পী সমিতির চলমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশৃঙ্খল কথাবার্তা বলায় দুই পক্ষকে ১৯ সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। যেন ভবিষ্যতে কথা বলার ক্ষেত্রে তারা যেন সতর্ক থাকে। আমার এফডিসিতে কোনোরকম ঝামেলা চাই না, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই।'

এদিকে বৈঠকের আগে নিপুণের শাস্তির দাবিতে এফডিসিতে কয়েক দফা মিছিল হয়। সেখানে মূল কথা ছিল, 'শিল্প ও শিল্পীর সম্মান নষ্টকারী নির্লজ্জ বেহায়া নিপুণের শাস্তির দাবি'। বেশ কয়েকজন সিনিয়র ও জুনিয়র শিল্পী এতে অংশ নেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ফলাফল বাতিল চেয়ে গত ১৫ মে রিট আবেদন করেন নিপুণ। রিটে মিশা-ডিপজলের নেতৃত্বাধীন কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

আবেদনে রিটের শুনানিতে সম্পাদক পদে জয়ী মনোয়ার হোসেন ডিপজলের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, আইনের প্রতি আমি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছেন এখানে কিছু বলার নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চেম্বার জজ আদালতে যাব।

ডিপজল আরও বলেন, এটার পেছনে অবশ্যই কোনো বড় শক্তি আছে। যেহেতু সে (নিপুণ) দেশের বাইরে থেকে এসব করছে, সেহেতু বুঝতে হবে তার পেছনের হাত লম্বা।

গেল ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২৬৫ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ কলি পেয়েছেন ১৭০ ভোট।

২২৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাসরিন আক্তার নিপুণ অল্প ভোটে হেরেছেন; তিনি পেয়েছেন ২০৯ ভোট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে