বাংলাদেশের ছোটপর্দার জগতে একজন সফল অভিনেতা আজিজুল হাকিম। মঞ্চে অভিনয় দিয়ে শুরু করলেও টিভি নাটকে বেশ জনপ্রিয়তা পান আজিজুল হাকিম। আশি ও নব্বই দশকে যেসব এক ঝাঁক টিভি তারকা গোটা বাংলাদেশজুড়ে প্রত্যেকের নিজস্ব প্রতিভাই উজ্জ্বল ছিলেন সেটা পরবর্তীতে আর দেখা যায়। তাদের মধ্যে আজিজুল হাকিম ছিলেন আবার বহুমুখী চরিত্রে অভিনয় করা এক সব্যসাচী অভিনেতা। আর তাই তো নিজের সময়ের প্রায় সকলেই ঝরে গেলেও তিনি এখন রয়ে গেছে এ মাধ্যমটিতে। বহু বছর ধরে টিভি পর্দায় কাজ করছেন। পাশাপাশি অভিনয় করছেন বড় পর্দায়ও। তা ছাড়া, তিনি একজন নাট্য নির্মাতা এবং গল্পকারও। দেশের টেলিভিশন ভুবনের নন্দিত মুখ নিরহংকারী স্বভাবের অভিনেতা আজিজুল হাকিম। সবার সঙ্গেই একেবারে সদালাপী সজ্জন চরিত্রের মানুষ তিনি। শোবিজ অঙ্গনের অন্যতম ক্লিন ইমেজের মানুষ তিনি।
১৯৭৭ সালে 'আরণ্যক' নাট্যদলের হয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন। সেখানে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন গুণী এই অভিনেতা। এ ছাড়া ঢাকা পদাতিক, ঢাকা থিয়েটার, পদাতিক নাট্যদলেও কাজ করেছেন এভারগ্রীন এই অভিনেতা।
১৯৮১ সালে বিটিভির 'এখানে নোঙর' নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন আজিজুল হাকিম। এরপর বহু দর্শকনন্দিত নাটক উপহার দিয়েছেন। তিনি একজন নাট্যনির্মাতা হিসেবেও সফল। তার নির্মিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে 'সে আমায় ভালোবাসে না', 'তবুও রংধনু', 'সকাল সন্ধ্যা রাত', 'নিজ গৃহে পরবাসী' ইত্যাদি।
নাটক ছাড়াও বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম। মুস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত 'শঙ্খনীল কারাগার' সিনেমার মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় পা রাখেন আজিজুল হাকিম।
সম্প্রতি পুনর্গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। আগামী এক বছরের জন্য কার্যক্রম চালাবে ১৫ সদস্যের এই কমিটি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরকৃত তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠনের এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চেয়ারম্যান এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি যাত্রা করল। অভিনয় অঙ্গন থেকে দুজন নন্দিত শিল্পী এবার নতুন করে সেন্সর বোর্ডে জায়গা করে নিয়েছেন। তারা হলেন অভিনেতা আজিজুল হাকিম ও অভিনেত্রী দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে আজিজুল হাকিম বলেন, সেন্সর বোর্ডের সদস্য হওয়ার চিঠি পেয়েছি। এত বছরের ক্যারিয়ারে বড় প্রাপ্তি ও গর্বের। এখন সেই সেন্সরের বোর্ডের সদস্য হয়ে আমি বিভিন্ন ধরনের সিনেমা উপভোগ করতে পারব। এতে সম্মানিতবোধ করছি।
অভিনয়ের পাশাপাশি আজিজুল হাকিম ওয়ালটন গ্রম্নপে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে ওয়ালটন গ্রম্নপ এ কর্তৃপক্ষই সম্মানজনকভাবে ডেকে দায়িত্বটি অর্পন করেন। আজিজুল হাকিম 'ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে তার স্ত্রী জনপ্রিয় নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক জিনাত হাকিমও নির্বাহী পরিচালকের পদের আসীন। তিনি ২০২১ সালে ১ এপ্রিল এই গ্রম্নপের সিস্টার কনসার্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান 'ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড'র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। আজিজুল হাকিম বলেন, 'ওয়ালট বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিতে ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করে আসছে, কমপিস্নট প্রোডাক্ট তৈরি করছে। এই দেশীয় পণ্য দেশের মানুষের ঘরে ঘরে চাহিদা তৈরি করার পাশাপাশি আস্থাও অর্জন করেছে। খুব সৎভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা করছে এবং মানুষের মধ্যে আস্থা অর্জন করেছে। অবশ্য, তাদের পক্ষ থেকেও আমাকে তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকার জন্য আহ্বান ছিল। এর আগেও অনেক প্রতিষ্ঠানেই কাজ করার প্রস্তাব ছিল। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভেবেছে, তাই তাদের সাথেই কাজ শুরু করেছি।' আজিজুল হাকিম জানান, সকাল ৯টা বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে রেগুলার তাকে অফিস করতেই হবে। চাকরিকে গুরুত্ব দিয়ে তারপর যে সময়টুকু পাবেন তা অভিনয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। চাকরির পাশাপাশি সময় পেলে এবং শরীর ভালো থাকলে অভিনয় করবেন।
ব্যক্তিগত জীবনে নাট্যকার জিনাত হাকিমের সঙ্গে ১৯৯৩ সালে ঘর বেঁধেছেন আজিজুল হাকিম। তাদের সংসারে এক মেয়ে ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। শোবিজের অন্যতম সুখী দম্পতি হিসেবে সুনাম রয়েছে আজিজুল হাকিম ও জিনাত হাকিম দম্পতির।