বাংলাদেশের প্রশংসায় নাসিরুদ্দিন শাহ

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০

বিনোদন ডেস্ক
উৎসবের সৌরভে মুখরিত আসর। সারাবিশ্বের সিনে প্রতিনিধিরা এসেছেন আসরের সৌরভটুকু প্রাণভরে উপভোগ করতে। যেমন পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দোতলায় থাকে রোজ কফি পরিবেশনা। এর কফি হাতে প্রেস রুমের দিকে এগোতেই সহসা দৃষ্টি আটকে গেল বলিউড অভিনেতা প্রতীক বাব্বরের দিকে। প্রয়াত বলিউড অভিনেত্রী স্মিতা পাতিলের পুত্র। পাশে দাঁড়ানো বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রত্না পাঠক শাহ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দন শাহও আছেন। তবে এই প্রতিবেদকের পরিচয়ের সঙ্গে 'বাংলাদেশ স্টিকার' থাকাতেই যেন আগ্রহী হলেন কথা বলতে। নয়তো কথা বলতেন কিনা কে জানে। কীভাবে শুরু করা যায় তার সঙ্গে আলাপ ভাবছিলাম। তখন অগত্যা শুরুটা হয় এমনভাবেই- এবারই কি প্রথম কানে এলেন? উত্তর এলো, 'হঁ্যা'। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। চলচ্চিত্র উৎসবকে কি অভিনেতা কিংবা পরিচালকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি? নাসিরুদ্দিন শাহ এবার বললেন, 'ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান করতে উৎসবগুলোর ভূমিকা আছে। এ ছাড়া যেসব পরিচালক চলচ্চিত্র মূলধারার জনপ্রিয়তা পায় না তারা উৎসাহ পান উৎসবে।' শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত 'মন্থন' (১৯৭৬) চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীতে অংশ নিতে দক্ষিণ ফ্রান্সে সাগরপাড়ের শহরে এসেছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের বুনুয়েল থিয়েটারে শুক্রবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে কান ক্ল্যাসিকস বিভাগে দেখানো হয়েছে এটি। এর প্রদর্শনীতে নাসিরুদ্দিন শাহ ছাড়াও ছিলেন অভিনেত্রী স্মিতা পাতিলের পরিবার, প্রযোজক এবং ভারতের ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর। সংক্ষিপ্ত আলাপকালে 'মন্থন' নিয়ে গর্ব করলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। তার কথায়, 'আমার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবি এটি। এর সঙ্গে আমি নিজের নিবিড় সম্পর্ক খুঁজে পাই। ছবিটি নিয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।' বাংলাদেশে দুবার মঞ্চে পারফর্ম করতে এসেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, 'ঢাকার দর্শকরা চমৎকার। আমার সবচেয়ে আনন্দ লেগেছে রুনা লায়লাজির সঙ্গে দেখা করে।' সব শেষে বাংলা ভাষা জানেন কিনা বলতেই নাসিরুদ্দিন শাহ বলেন, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' ভারতের বৃহত্তম দুগ্ধ উন্নয়ন আন্দোলন তথা শ্বেত বিপস্নবের পটভূমিতে তৈরি হয় 'মন্থন'। এটি ছিল ভারতের প্রথম গণঅর্থায়নে নির্মিত চলচ্চিত্র। দেশটির গুজরাট রাজ্যের পাঁচ লাখ কৃষক ছবিটি নির্মাণে ২ রুপি করে দান করেন। ভার্গিস কুরিয়েনের দুগ্ধ সমবায় আন্দোলনে অনুপ্রাণিত 'মন্থন'। ছবিটির অন্যতম গল্পকার তিনি। ভার্গিস কুরিয়েনের বিলিয়ন লিটার আইডিয়া তথা অপারেশন ফ্লাড ভারত দুধের ঘাটতির দেশ থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ও শীর্ষ উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়েছে। তার শ্বেত বিপস্নবের কর্মপন্থা বিশ্বের বৃহত্তম কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি হিসেবে পরিচিত। ভারতের ডেইরি অ্যাসোসিয়েশন ২০১৪ সাল থেকে এই কীর্তিমানের জন্মদিনকে জাতীয় দুগ্ধ দিবস হিসেবে পালন করছে। ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, কৃষিরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে অনেক সম্মাননায় ভূষিত করা হয় তাকে। ২০১২ সালে ৯০ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন তিনি। হিন্দি ভাষায় নির্মিত ২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটের 'মন্থন' দেখিয়েছে গ্রামীণ ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে কাল্পনিক আখ্যানের মাধ্যমে শ্বেত বিপস্নবের উৎপত্তি। এতে আরও অভিনয় করেছেন গিরিশ কারনাড, অমরিশ পুরি, কুলভূষণ খারবান্দা, মোহন আগাসে, অনন্ত নাগ, রাজেন্দ্র যশপাল, আভা ঢুলিয়া, সাধু মেহের ও অঞ্জলি পায়গানকার। ৪৮ বছরের পুরনো 'মন্থন' ছবির প্রিন্ট পুনরুদ্ধার করেছে ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এর ৩৫ মিলিমিটার মূল নেগেটিভ সংরক্ষিত ছিল এনএফডিসিতে (ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র সংগ্রহশালা)। পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কাজ করেছেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, চিত্রগ্রাহক গোবিন্দ নিহালানি, চেন্নাইয়ের প্রসাদ করপোরেশনের প্রাইভেট লিমিটেডের পোস্ট, ডিওস এবং ইতালির লি'মাজিন রিত্রোভাতা ল্যাবরেটরি। অর্থায়নে সহযোগিতা করেছে ভার্গিস কুরিয়েনের গড়া প্রতিষ্ঠান গুজরাট কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেড। ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে সংরক্ষিত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত ৩৫ মিলিমিটার প্রিন্ট থেকে শব্দ ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র এবং সেরা চিত্রনাট্যকার (বিজয় টেন্ডুলকার) স্বীকৃতি জিতেছে 'মন্থন'। ভারত থেকে অস্কারে পাঠানো হয় এই ছবি। এতে 'মেরো গাম কথা পারে' গানের জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা গায়িকা বিভাগে পুরস্কার জয় করেন প্রীতি সাগর। শুক্রবার বুনুয়েল থিয়েটারে ক্লাসিক বিভাগের আরও তিনটি প্রদর্শনী ছিল। স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কান ক্ল্যাসিকস বিভাগে দেখানো হয়েছে সুই হার্ক পরিচালিত 'সাংহাই বস্নুজ' (১৯৮৪)। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ছিল প্রয়াত জঁ্য-লুক গদারের 'সিনারিও' চলচ্চিত্রের ঘোষণা উপস্থাপনা। সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে হাঙ্গেরির শার ভিদোর পরিচালিত 'গিল্ডা' (১৯৪৬)। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের আকর্ষণ ছিল গ্রিসের ইয়োর্গোস লানতিমোসের 'কাইন্ডস অব কাইন্ডনেস'। এতে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী এমা স্টোন। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে বিকাল ৩টায় রোমানিয়ার এমানুয়েল পারবু পরিচালিত 'থ্রি কিলোমিটারস টু দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড' এবং রাত ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের পল শ্রেডার পরিচালিত 'ও কানাডা'র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে। পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের আনিয়েস ভারদা থিয়েটারে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে স্পেশাল স্ক্রিনিংসে ছিল ফ্রান্সের ইওলঁন্দ জাউবারম্যান পরিচালিত 'দ্য বিউটি অব গাজা'। কান প্রিমিয়ার বিভাগে শুক্রবার রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দু্যবুসি থিয়েটারে দেখানো হয় মরক্কোর নাবিল আয়ুশ পরিচালিত 'এভরিবডি লাভস তুদা'। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে মিডনাইট স্ক্রিনিংস বিভাগে ছিল আয়ারল্যান্ডের লোরক্যান ফিনেগ্যান পরিচালিত 'দ্য সারফার'। এতে অভিনয় করেছেন হলিউড তারকা নিকোলাস কেজ। অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে সাগরপাড়ে শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটে সিনেমা দু্য লা পস্নাজ বিভাগে দেখানো হয়েছে মার্টিন স্করসেসির 'আফটার আওয়ার্স' (১৯৮৫)। ৬৩তম ক্রিটিকস' উইক বিভাগে নির্বাচিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হচ্ছে এসপেস মিরামারে। শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিট, বিকাল ৫টা ও রাত ১০টা ৩০ মিনিটে প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিল মিসরের নাদা রিয়াদ ও ইয়েমেনের আয়মান এল আমির পরিচালিত 'দ্য ব্রিঙ্ক অব ড্রিমস'। দুপুর ২টা ১৫ মিনিট ও সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে স্পেশাল স্ক্রিনিংসে দেখানো হয়েছে মরক্কোর সাইদ হামিচ বেনলার্বি 'অ্যাক্রস দ্য সি'। এসিআইডি বিভাগে স্টুডিও থার্টিন থিয়েটারে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে, আর্কেডস ওয়ান থিয়েটারে রাত ৮টায় ও আর্কেডস টু থিয়েটারে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ছিল কলম্বিয়ার ক্যামিলা বেলত্রান পরিচালিত 'মি বেন্তিয়া'। আলেকসঁন্দ থ্রি থিয়েটারে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে ছিল গ্রিসের কস্তিস কারামুদান্নিস পরিচালিত 'কিউকুবিফোর সামারস অ্যান্ড'। শুক্রবার মূল প্রতিযোগিতায় থাকা 'বার্ড' ছবির কলাকুশলীরা সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং 'মেগালোপলিস' টিম দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাজির হন।