শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

মা হারানো তারকাদের অনুভূতি

বিনোদন রিপোর্ট
  ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০
মা হারানো তারকাদের অনুভূতি

মায়ের জন্য ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণের দরকার হয় না। মা থাকলেও যা এবং না থাকলেও তা। তাইতো মা চলে গেলেও পৃথিবীর প্রতিটি ছেলে বা মেয়ের কাছে কখনো কখনো ভুলক্রমে মা আছেন বলে মনে হয়। হঠাৎ অজান্তে কানে শোনা কারও কোনো কণ্ঠকে মায়ের কণ্ঠ বলে মনে হয়। তাইতো প্রতিটি মায়েরই সন্তানের ভালোবাসা প্রাপ্য প্রতিদিনই।

দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে মা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান, নিজের সব সাধ-আহ্লাদ সন্তানের নামে করে দেন যে মা, তার সম্মানে আলাদা করে একটু ভালোবাসা জানাতেই এই দিনটি পালন করা হয়। আব্রাহাম লিংকনের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- 'যার মা আছে সে কখনোই গরিব নয়।' অর্থাৎ কেবল মায়ের আশ্রয় থাকলেই বন্ধুর পথের নানা বিপদ পাড়ি দেওয়া যায় সহজেই। মা থাকা মানে সবচেয়ে বড় ভরসা ও ভালোবাসার জায়গাটি অক্ষুণ্ন থাকা। আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কাছেই। সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে হলেও মা দেখতে চান সন্তানের হাসিমাখা মুখ। গতকাল সাড়া বিশ্বে পালিত হয়েছে মা দিবস। সে উপলক্ষেই মাকে ঘিরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন তারকারা।

মাকে ঘিরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। চার বছর আগে মাকে হারিয়েছেন তিনি। তবে এখনো যেন বিশ্বাস করতে পারেন না তার মা আর নেই। অপু সব সময়ই বলেন, তার আজকের এই অবস্থান ও সফলতা মায়ের জন্যই।

অভিনেত্রী বলেন, চার বছর হয়ে গেল মাকে হারিয়েছি। এখনো বিশ্বাস করতে পারি না মা নেই। আমি অপু বিশ্বাস হতে পেরেছি মায়ের জন্যই। যখনই সফলতা পেয়েছি, মায়ের সঙ্গে শেয়ার করেছি, কষ্ট পেলেও তাকে

\হজড়িয়ে ধরে কেঁদেছি।

অপু আরও বলেন, আমার জীবনে যত ঝড় এসেছে সব মাই সামলেছেন। মৃতু্যর আগে পর্যন্ত আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়েছেন, সাপোর্ট দিয়েছেন তিনি। দুনিয়ার সবাই আমাকে ভুল বুঝলেও মা আমাকে ঠিক বুঝতেন। আমার শেষ

\হআশ্রয় ছিল মা।

তিনি বলেন, এখন প্রতি মুহূর্তে মা না থাকার কষ্টটা টের পাই। কখনো কখনো মনের অজান্তে মায়ের কাছে নালিশ করে বসি। ভাবি যে, মা আমার ছায়াসঙ্গী হয়েই আছেন। তাই এই বিশেষ দিবসে চাই সব সন্তানই তাদের বাবা-মাকে জীবিত অবস্থায় ভালোবাসুক, সময় দিক। কারণ একবার জীবন থেকে এই অমূল্য সম্পদ হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের সব মাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা।

মায়ের জন্য নিউইয়র্কে মাহফিল আয়োজন করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। যদিও কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের কাছে এবারের মা দিবসটি বিষণ্নতায় ঢাকা। দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এই কোকিলকণ্ঠী। এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল ঢাকায় বসবাসরত মা আবিদা মনসুরকে হারালেন তিনি।

মায়ের এই প্রস্থানে দূর পরবাসে মুষড়ে পড়েন বেবী। এর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের পূর্বনির্ধারিত কনসার্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। গানের এই ব্যস্ততা থেকে এবার খানিক ছুটি নিলেন। নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে আয়োজন করছেন মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মাহফিলের। মা দিবসে নিউইয়র্ক থেকে এই শিল্পী জানান, আজ মাগরিবের নামাজের পর তার মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বসবাসরত তার বন্ধু, স্বজন ও ভক্তদের এই মাহফিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

চলতি বছরের ২৪ মার্চ মাকে হারান ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পুজা চেরী; যার ডানায় নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ ভাবতেন তিনি। 'বিশ্ব মা দিবস' উপলক্ষে দেশের একটি গণমাধ্যমে মাকে নিয়ে কথা বলেন এই নায়িকা। পাশাপাশি মাকে স্মরণ করে অনেক স্মৃতিও শেয়ার করেন পুজা।

তিনি বলেন, মায়ের ডানায় নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ ভাবতাম আমি। আমাদের বয়সের পার্থক্য অনেক। তবুও ছিলাম বন্ধু আমরা। আমি যেমন মাকে বিশ্বাস করতাম, মাও বিশ্বাস করতেন আমাকে। সারাক্ষণ আমার আশপাশেই থাকতেন। প্রায়ই বলতেন, 'পুজা আমার হাতের লাঠি, আমার শক্তি।'

পুজা আরও বলেন, আমার মন এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে চায় না যে, আমার মা আর নেই। মনে হয় আমার সঙ্গেই আছেন মা। বাসায় মায়ের ঘরটা এখন খালি। কিন্তু আমি সব সময় ভাবি, মা ঘরেই আছেন। আসলে ভুলে যাই মা আর নেই। আগে যেমন বাসা থেকে কাজে বের হলে, রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলতাম, মা আমি বের হলাম। এখনো ভুল করে সেটা বলে ফেলি।

চিত্রনায়িকা বলেন, মা আমাকে শক্ত মনের মানুষ মনে করতেন। বলতেন, 'সামনে যতই বাধা আসুক তুমি সেটা ডিঙাতে পারবে।' মায়ের ধারণা, পেশাগত জায়গায় আমি অনেক বড় হব। আর মায়ের সেই স্বপ্নটা আমাকে পূরণ করতেই হবে। মা যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।

বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছেন দেশীয় চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়ক জায়েদ খান। মা-বাবার ভীষণ ভক্ত ছিলেন এ নায়ক। এ কথা তার অনুসারীরা প্রায় সবাই জানেন। তার মা-বাবা বেঁচে থাকতে কিছুদিন পর পর তিনি ঢাকা থেকে ছুটে যেতেন তাদের কাছে। এ নিয়ে তিনি আবেগঘন লেখা লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিতেন। জায়েদ খানের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এখনো প্রায়ই ছুটে যান তাদের কবর জিয়ারত করার জন্য। সে কথাও তিনি জানান দেন তার সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ ছাড়া মাকে এবং বাবাকে স্মরণ করে বিভিন্ন সময়ে লেখেন মনের কথা। গতকাল ছিল মা দিবস। এমন মহান দিবসে মা ভক্ত জায়েদ খান চুপ থাকবেন- তা হয় কী করে! জায়েদ খান মা দিবসকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তার এই দিবসটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ফুটে ?উঠেছে। মায়ের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে জায়েদ খান ফেসবুকে লিখেছেন, 'আমি সব সময় বলি মায়ের কোনো দিবস নাই। মা শাশ্বত।'

নায়ক বাপ্পী চৌধুরী বলেন, জীবদ্দশায় এই দিবসগুলো অতটা বুঝতেন না মা। আমি প্রতি ঘণ্টায় তাকে বলতাম, হ্যাপি মাদারস ডে। আর মা আমাকে বকা দিতেন। এই দিনটা খুব স্পেশাল ছিল আমার কাছে। কাজ রাখতাম না। কেক কাটতাম, মাকে গিফট দেওয়ার চেষ্টা করতাম। খুব অল্পতে খুশি হয়ে যেতেন মা। এবার প্রথম দিবসটিতে আমার পাশে মা নেই। ভাবতেই পারছি না মা ছাড়া দিনটি কিভাবে কাটাব। মা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, তাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম আমরা, পারলাম না। এই কষ্ট সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আজ সারাদিন মায়ের সঙ্গে আমার সুখের স্মৃতিগুলো মনে করার চেষ্টা করব, আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব। মা যেখানেই থাকুন যেন আমার ভালোবাসা অনুভব করতে পারেন, ঈশ্বরের কাছে সেই কামনা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে