বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

মঞ্চনাটকে প্রাণের সঞ্চার

বিনোদন রিপোর্ট
  ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০
মঞ্চনাটকে প্রাণের সঞ্চার

এখনো অভিনয়শিল্পের প্রাচীনতম প্রকাশ দেখা যায় মঞ্চে, যা আর অন্য কোনো মাধ্যমে দেখা যায় না। আধুনিক সময়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মঞ্চনাটক। সমালোচকরা বলেন, শিল্পীর জন্য মঞ্চ হচ্ছে অভিনয়ের প্রাণ, যেখানে একজন অভিনয়শিল্পী নিজের অভিনয়সত্তা খুঁজে পান। বিশ্বময় শক্তিশালী প্রায় সব অভিনয়শিল্পীর হাতেখড়ি হয়েছে মঞ্চনাটকের মধ্য দিয়ে।

কিন্তু কালের স্রোতে নানা আধুনিক মাধ্যমের হাতছানিতে তরুণদের কাছে মঞ্চ আবেদন হারিয়েছে অনেকটাই। এ পরিস্থিতি অনুমান করা কঠিন নয়। তবে প্রযুক্তি ও মিডিয়ার নিত্যনতুন স্রোতের মধ্যেও দেশের মঞ্চনাটক পিছিয়ে যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে থিয়েটার গ্রম্নপগুলোয় তরুণ কর্মীদের কিছু সংকট থাকলেও সেটা আশঙ্কাজনক কোনো পরিস্থিতি তৈরি করেনি। সিনিয়র নাট্যজনরা শুনিয়েছেন আশার কথা। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর বরং নাটকপাড়ায় দর্শকের আনাগোনা বেড়েছে।

প্রযুক্তির উন্নতির কারণে নিজের অভিনয় এখন খুব সহজে দর্শকের কাছে পৌঁছানো যায়। তাই চর্চার পেছনে দীর্ঘ সময় না দিয়ে, থিয়েটার দলে অনুশীলন না করে অনেক তরুণ ছুটে বেড়াচ্ছেন ডিজিটাল ক্যামেরার সামনে। যেখানে অতিদ্রম্নত দর্শকদের কাছে যাওয়া যায়, আবার অর্থাগমও ঘটে নানাভাবে।

কয়েকটা রেপার্টরি দল থাকলেও গ্রম্নপ থিয়েটার চর্চার ক্ষেত্রে 'নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো' প্রবাদটি যেন একেবারে জুঁতসই। তবে যে দলগুলো নিয়মিত নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি নতুন নাটক নিয়ে আসছে, সেসব নাটকে ঘুরেফিরে প্রায় একই অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছেন। তরুণরা শেখার আগ্রহ নিয়ে প্রথমসারির দলগুলোয় যুক্ত হতে চান। এতে অনেকে মঞ্চে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার অনেক দল নাট্যকর্মীর অভাবে নতুন প্রযোজনা মঞ্চে আনতে পারছে না। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে মঞ্চনাটক। মঞ্চনাটকের জন্য নতুন দর্শককে আকর্ষণ করতে না পারার সংকটও দেখা যাচ্ছে।

বিশিষ্ট নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, 'উঠতি বয়সের তরুণরা মঞ্চের চেয়ে মিডিয়ায় কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, মঞ্চ থেকে মডেলিংয়ের প্রতি বেশি আগ্রহ তাদের। এখনো অনেক তরুণ অভিনয়ের শুরুটা মঞ্চ থেকেই করছেন। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কম। বর্তমানে মিডিয়া ও মডেলিংয়ের পেছনে ছুটলেও এখনো অনেক তরুণ শিল্পী মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন।'

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বর্তমানে বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মে সহজে অভিনয় করার সুযোগ থাকলেও যারা অভিনয়কে ভালোবাসেন এবং যারা সত্যিকারের অভিনয় শিখতে চান, তারা অবশ্যই মঞ্চকে প্রাধান্য দেন। মঞ্চের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি।'

পাশাপাশি নাট্যজন মাসুম রেজা বলেন, '?এখন নাট্যকলায় প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে অনেক তরুণ মঞ্চনাটক দেখছেন।' নতুন প্রযুক্তির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, এখন টেকনোলজির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ফলে মঞ্চনাটকে ব্যবহৃত টেকনোলজি কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে ব্যাপারে তরুণরা কাজ করছে। দীর্ঘ সময় ধরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মঞ্চনাটকই তারুণ্যনির্ভর। এখানে তারুণ্যের সমাহার ঘটেছে। কিছু সংকট থাকলেও সেগুলো থেকে উত্তরণের চেষ্টা তরুণরাই করছে। মঞ্চনাটকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে যেমন তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি দর্শক হিসেবেও তাদের মঞ্চনাটকের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে মেট্রোরেলের কারণে ঢাকার মঞ্চগুলোয় আগের তুলনায় দর্শক বাড়ছে। আর এদের অধিকাংশই হচ্ছে তরুণ-তরুণী।'

যে তরুণরা ক্যামেরা ও সোশ্যাল মিডিয়ার এ রমরমা যুগে এখন থিয়েটারে কাজ করছেন, তারা অনেকেই আন্তরিকভাবে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করছেন। তবে দেখা যায়, অনেক তরুণ একটা সময় থিয়েটার চর্চা শুরু করলেও কিছু সময় পর ছিটকে যায়। বিশেষ করে করোনার ধাক্কা সামলে এখনো অনেক দল নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে নতুন নাটক মঞ্চায়ন করতে পারছে না। যদিও কেউ কেউ পুরনো নাটক মঞ্চস্থ করে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নাট্যকর্মীর অভাবে নতুন নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ হয়ে উঠছে না অনেক দলের। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও শিল্পী-সমালোচকদের উদ্যোগে শক্তিশালী এ শিল্পমাধ্যম তারুণ্যের অভিনয়চর্চার এক সৃষ্টিশীল ক্যানভাস হিসেবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য এটাও ঠিক যে, প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগ হয়ে আধুনিক যুগ পর্যন্ত থিয়েটার নিজের শক্তি বলেই এগিয়েছে। কিন্তু এখন পারছে না। এখন তাকে চলমান থাকতে হলে রাষ্ট্রীয় সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে