রুনা লায়লার নতুন গান
প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০
বিনোদন রিপোর্ট
কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা। বাংলা গানে একসময় ছিলেন তুমুল দর্শক মাতোয়ারা করা গায়িকা। অডিও, স্টেজ এবং পেস্ন-ব্যাক সব মাধ্যমেই তার গান ছড়াতো সুরের জাদু। তার গান বাংলাদেশের কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়েও বিপুল জনপ্রিয় তিনি। এখন পর্যন্ত ১৮ ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান করেছেন। গান করেছেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে।
এইভাবে জীবন্ত এই কিংবদন্তি গানের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন দেশে-বিদেশে। বেশ কয়েকবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। একইসঙ্গে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। আবার পাকিস্তানের নিগার পুরস্কার, জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদকও পেয়েছেন। ভারত থেকে সায়গল, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন।
কিন্তু এখন আর সেই বয়স নেই এবং সেই বয়সোচিত গানও নেই। তারপরও এমন গানও আছে যে গান চিরকালের মানুষ শোনে। সেই গানও কম গাননি রুনা লায়লা। সেই গানেও সুরের মুর্চ্ছনা ছড়িয়েছেন। যেমন, কবি শামসুর রাহমানের লিখিত 'স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে/পানি টলমল মেঘনা নদীর কাছে/আমার অনেক ঋণ আছে...' গানটি। আবার আছে, 'যখন থামবে কোলাহল ঘুমে নিঝুম চারদিকে'- এরকম চিরকালীন সুরের গানও আছে। এরকম সুরের গান তো সব বয়সেই গাওয়া যায়। আবার সব বয়সেই শোনা যায়। তেমনি একটি 'বিশ্ব মা দিবস' এ গান।
আগামী ১২ মে 'বিশ্ব মা দিবস' উপলক্ষে আসছে তার নতুন গান। 'এই না বৃদ্ধাশ্রম' শিরোনামের গানটিতে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন খায়রুল ওয়াসী। আল আমিন জমাদ্দার সবুজের কথায় এটির সুরও করেছেন তিনি। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন রিপন খান।
গানটি নিয়ে গণমাধ্যমকে রুনা লায়লা বলেন, 'এই না বৃদ্ধাশ্রম' গানটির কথাগুলো বেশ টাচি। মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়েই এই গান। এখন যারা সন্তান, একদিন তারাও বাবা-মা হবে। তাই বাবা-মাকে তাদের স্রষ্টার আশীর্বাদ মনে করা উচিত। গানেও এই বার্তা থাকবে।
সুরকার ও শিল্পী খায়রুল ওয়াসী বলেন, ছোটবেলা থেকেই প্রিয় স্বপ্নের কণ্ঠশিল্পী ও ব্যক্তিত্ব রুনা লায়লা ম্যামের গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। গান চর্চায় এত দ্রম্নত ম্যামের সঙ্গে দ্বৈত গান গাইতে পারব ভাবতে পারিনি। আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান তিনি আমার সুরে আমার সঙ্গেই গান গেয়েছেন। একইসঙ্গে মাথায় হাত রেখে দোয়া করে বলেছেন, ভালো ভালো কাজ যেন অব্যাহত রাখি।
গীতিকার আল আমিন জমাদ্দার সবুজ বলেন, কত স্বপ্ন, কত কষ্ট ও কত আশা নিয়ে বাবা-মা তার সন্তানদের বড় করেন। অথচ কিছু সন্তান নামের কুলাঙ্গার বাবা-মাকে শেষ জীবনে বোঝা মনে করে। নিজেদের কাছে রাখতে চায় না। ফলে তাদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। কিন্তু এ সময় তারা ভুলেই যায় ক'দিন পর তারাও বাবা-মা হবে, বৃদ্ধ হবে। তাদের সন্তানরাও তাদের সঙ্গে একই আচরণ করতে পারে। বাস্তবতার এমন নিরিখেই 'এই না বৃদ্ধাশ্রম' গানটি লেখা।
লেখার পাশাপাশি গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন গীতিকার আল আমিন জমাদ্দার সবুজ নিজেই। এটি এজেএস ওয়ার্ল্ডের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ হবে।
সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা এখনও যুগোপযোগী চাহিদায় করা গানে সুর দেন এবং গান করেন। তার দীর্ঘদিনের সঙ্গীত জীবনের পথচলায় এবারই প্রথম বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'আনন্দ মেলা'য় গান গাইলেন। পুরনো নয়, একেবারে নতুন একটি মৌলিক গান গেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটনের লেখা ও আশরাফ বাবুর সুর সঙ্গীতে 'নতুন পৃথিবী' শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন রুনা লায়লা। আর এতে তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন এ প্রজন্মের কণা, সাব্বির, ইমরান ও ঝিলিক।
তখন আনন্দ মেলায় গান গাওয়া প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেছিলেন, 'এর আগে আমাকে আনন্দ মেলায় গান গাওয়ার কথা বিশেষভাবে বলা হয়নি। বললে হয়তো গাওয়া হয়ে যেত। যাই হোক, দীর্ঘদিন পর হলেও এ অনুষ্ঠানের জন্য গান গাইতে পেরে ভালো লাগছে। আনজীর লিটনও এ গান খুব চমৎকার লিখেছে, সুর সঙ্গীতও আশরাফ বাবু ভালো করেছে। আমার সঙ্গে এ প্রজন্মের শিল্পীরাও বেশ আন্তরিকতা নিয়ে গানটি গেয়েছে।'
ডাক আসলেই শিল্পীও নতুন নতুন গান উপহার দিতে পারেন। রুনা লায়লাই না, সাবিনা ইয়াসমিনও এখনো নতুন নতুন গান উপহার দিতে পারেন। ডাক আসে না বলেই তো তারা শুধু ঘরে একা বসে বসে রেওয়াজ করে যান। কিন্তু নতুন গান মানেই যদি আয়োজকরা বোঝেন শুধু সে গানে শুধু শিল্পীর গলার পাশাপাশি তার বয়সটাও থাকতে হবে তাহলে সে গান তো আর চির নতুন হলো না।