আজকের যায়যায়দিন

'কলঙ্ক' দিয়ে যাত্রা হলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির! মঙ্গলবার বিকালে এফডিসিতে সংগঠনটির নবনির্বাচিত কমিটির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এর পরই ঘটেছে এক অপ্রত্যাশিত, ন্যক্কারজনক ঘটনা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথপ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল এদিন। বিকালে এফডিসিতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয় সেটা। এর পরই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা।

অভিযোগ, সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন কয়েকজন চলচ্চিত্র শিল্পী। জানা গেছে, একজন ইউটিউবারের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল অভিনেতা শিবা শানুর। শপথগ্রহণ শেষ হলে ইউটিউবারকে ডেকে নেন তিনি। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা হাজির হলে তাদের সঙ্গেও বাগবিতন্ডা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিকজনের মতে, এতে নেতৃত্ব দেন শিবা শানু, জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডার বো। এর ওপর উপস্থিত সাংবাদিকদের হাতে হাতে থাকা হান্ডস্যাটে ভিডিও ফুটেজও ছড়িয়ে পড়েছে।

এ সময় সমিতির আরেক নেতা জয় চৌধুরী 'মার মার' বলে তেড়ে যান সাংবাদিকদের দিকে। এ ঘটনায় আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন জয় চৌধুরী। এর মধ্যে সেটি থামাতে এগিয়ে আসেন উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা। জয় চৌধুরী জানান, একসময়ের নায়িকা ময়ূরীর মেয়ের সাক্ষাৎকার চাওয়াতেই মারামারির সূত্রপাত ঘটেছে।

শুরু হয় সাংবাদিক ও শিল্পীদের মধ্যে তুমুল মারামারি। এর পরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুরো এফডিসি পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। মারামারিতে রীতিমতো রক্তাক্ত হন কয়েকজন সংবাদকর্মী।

জয় বললেন, শপথ শেষে কার্যকরী পরিষদের মিটিং ছিল। আমরা সবাই তখন মিটিং করছি। এ মুহূর্তে ময়ূরী আপু তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না বাইরে লোকজনের জন্য। এমন সময় দুই-তিনজন ইউটিউবার, তারা ময়ূরী আপুর মেয়ের হাত ধরে টান দিয়ে বলছেন, 'তুমি একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাও'। বারবার তারা এই আবদার করছিলেন। এতে ময়ূরী আপু রেগে যান। বলেন, 'ও তো সেলিব্রিটি না, ওর ইন্টারভিউ দিয়ে কী করবেন?'

পরে এটা দেখে শিবা শানু ভাই ইউটিউবারদের বলেছেন, 'এই বের হন। স্টাডি রুম থেকে বের হন।' এই কথার এক পর্যায়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। হাতাহাতি হয়। তারা শিবা শানু ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছেন। এবং তারা বাইরে দৌড়ে গিয়ে বলছেন, টিভি চ্যানেলের সবার গায়ে হাত দিয়েছে। পরে গন্ডগোলটা সৃষ্টি হয়েছে।'

মারামারি কারা করেছে, জানতে চাইলে জয় নিজের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, 'দেখি যে, শানু ভাইকে মারার জন্য দেয়াল টপকে দুই-তিনজন ভেতরে ঢুকছেন। তার পর আমরা চিলস্নাপালস্না শুরু করছি। এফডিসিতে প্রোডাকশনের ছেলেরা ছিল, তারা এটা দেখতে পেয়েছে যে, মারামারি লাগছে। এর পরই সংঘর্ষ বাধে।'

জানা যায়, মারামারির ঘটনায় মিঠুন আল মামুনসহ ১০ জনের মতো সংবাদকর্মী ও ইউটিউবার আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা দেখছি। এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি যেভাবে দেখা দরকার দেখব।

এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ এক সাংবাদিক জানান, এতে তিনিসহ প্রায় ১০/১২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তার নিজের মুঠোফোন হারিয়েছেন এবং অনেক ক্যামেরাও ভেঙেছে। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে বিকাল ৫টার দিকে অনুষ্ঠিত হয় সমিতির শপথগ্রহণ। শুরুতে নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগরকে শপথবাক্য পাঠ করান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ। এর পর অন্যদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন মিশা। এ সময় নির্বাচিত সদস্যরা ছাড়াও সিনেমা অঙ্গনের আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।