শাবনূর হয়ে উঠতে ত্রিশ বছর লেগেছে
প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ্ রাকিব
ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবনূর। নব্বইয়ের দশকের এ চিত্রনায়িকা 'স্বপ্নের ঠিকানা', 'স্বপ্নের পৃথিবী', 'তোমাকে চাই', 'আনন্দ অশ্রম্ন', 'নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি', 'দুই নয়নের আলো' স্বপ্নের বাসর, স্বপ্নের পুরুষ, আমি তোমারি, মিলন হবে কত দিনে, নারীর মন, বিয়ের ফুল, মাটির ফুল, মন, স্বপ্নের ভালোবাসা, কাজের মেয়ে, প্রেমের তাজমহলসহ বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তিন যুগের বর্ণিল ক্যারিয়ার তার। অভিনয় করেছেন প্রায় আড়াই শতাধিক চলচ্চিত্রে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে বড় পর্দায় অনুপস্থিত তিনি। সম্প্রতি একটি সিনেমা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন এই নায়িকা। এদিকে 'রঙ্গনা' নামের সিনেমাটির মহরতের পর নীরবে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন শাবনূর। এতে ছবিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন অনেকে। নিন্দুকেরা হয়েছিলেন সরব। তবে সব আলোচনা-সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ছবিটির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন সুপারস্টার।
তবুও একাংশের ভয়, ছবিটির শেষ না করেই উড়াল দেবেন না তো শাবনূর! এতে বিরক্ত নায়িকা। ঠিক করেছেন এর পর থেকে কবে দেশে এলেন আর কবে গেলেন কাউকে বলবেন না তিনি। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন শাবনূর।
শাবনূর বলেন, বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়া নিয়ে এত টানাটানি কেন বলেন তো! আমি বাংলাদেশে থাকলেই বা কী আর অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেই কী! আপনি জানেন, গত বছর আমি পাঁচবার দেশে ফিরেছিলাম। কেউ সেটার খোঁজ রেখেছিল? এবারও চার মাসের মধ্যে দুইবার এলাম দেশে। এখানে আমার বাড়ি আছে, ব্যবসা আছে, সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিই। তাহলে দেশে ফেরা নিয়ে এত কথা হবে কেন? ঠিক করেছি, এখন থেকে কবে দেশে এলাম, কবে গেলাম, কাউকে জানাব না।
গত বছরের শেষদিকে দেশে এসেছিলেন শাবনূর। নিজের জন্মদিনে মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে জুটি বেঁধে 'মাতাল হাওয়া' সিনেমায় অভিনয়ের কথা বলেছিলেন। এ বছরের মাঝামাঝি 'মাতাল হাওয়া'র শুটিংয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয়েছিল।
এ নিয়ে নায়িকা বলেন, তড়িঘড়ি করে কোনো কাজ করতে চাই না। আগে পান্ডুলিপিটা মনের মতো হোক, সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে সব গুছিয়ে নিয়ে তারপর শুটিং করা যাবে। আমাকে দর্শক আগে যেমন দেখেছিলেন এখনো তেমন শাবনূর হয়েই ফিরতে চাই। বছরে দরকার হলে একটি বা দুটি ছবি করব, না হলে একটিও করব না। তবে নামের প্রতি অবিচার করব না। শাবনূর হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে তিন দশক। এক ঝটকায় সেটা ধূলিসাৎ হতে দেওয়া যাবে না।
চলচ্চিত্রের সোনালি যুগে সালমান-শাবনূর জুটির সিনেমা মানেই প্রেক্ষাগৃহে দর্শক কানায় কানায় পূর্ণ। তাই নির্মাতাদেরও তাদের নিয়ে কাজ করার ঝোঁক ছিল বেশি। রোমান্টিক গল্প, গান, স্বভাবসুলভ অভিনয় এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার কারণে এই জুটি জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল বলে অনেকের ধারণা।
১৯৯৪ সালের ২০ মে জহিরুল হক ও তমিজ উদ্দিন রিজভীর যৌথ পরিচালিত 'তুমি আমার' সিনেমার মধ্য দিয়ে সালমান-শাবনূর জুটির অভিষেক ঘটে। ১৯৯৪ সালের ২২ মে ঈদে মুক্তি পায় 'তুমি আমার'। প্রথম সিনেমাতেই এই জুটি দারুণ সাফল্য পায়। তখন থেকেই তারুণ্য প্রজন্মের কাছে 'রোমান্টিক আইকন'-এ পরিণত হন তারা।
সালমান-শাবনূরের মধ্যে প্রেম করার গুঞ্জন ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে বিষয়টি সব সময়ই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শাবনূর। বেশ কয়েক বছর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে শাবনূর বলেন, 'প্রেম নয়, সালমানের সঙ্গে আমার ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমানের নিজের ছোট বোন ছিল না, তাই আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। এটাও ঠিক, সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু এসবের কোনোটিই সত্য নয়।
সালমানের মৃতু্যর পর রিয়াজ-শাবনূরের জুটি গড়ে ওঠে। তখনকার সময়ে পেয়ে যায় তুমূল জনপ্রিয়তা। প্রথম সিনেমার সফলতার কাঁধে ভর করে গড়ে ওঠে এ জুটি। পছন্দের জুটির সিনেমা দেখার জন্য দর্শক দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন। দর্শকের সেই আগ্রহে ঢালিউড জন্ম দিয়েছে একাধিক জনপ্রিয় জুটির।
মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল জুটি হিসেবে রিয়াজ-শাবনূর সমাদৃত। নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত তারা ৪৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অনেক সিনেমা পেয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্য। তবে একটা সময় তাদের জুটি ভেঙে যায়। এজন্য রিয়াজ 'ফিল্ম পলিটিক্স'কে দায়ী করেন। বিয়াজের কথায়, 'একসময় রিয়াজ-শাবনূর জুটি অপ্রতিরোধ্য ছিল। এরপর এই জুটি ফিল্মে নানা পলিটিক্সের শিকার হয়। তারপর দুর্ভাগ্যজনকভাবে জুটিটা ভেঙে যায়।
তবে শাবনূরের মত ভিন্ন। তিনি মনে করেন, রিয়াজ-শাবনূর জুটি ভাঙার পেছনে কোনো 'ফিল্ম পলিটিক্স' জড়িত নয়। এটা রিয়াজের ভুল ধারণা।
শাবনূর বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, 'এখানে পলিটিক্সের কোনো প্রশ্নই আসে না। একটা জুটি সারাজীবন থাকে না। নতুন নতুন জুটি তৈরি হয়। আর এক জুটিকে মানুষ সব সময় পছন্দ করবেন, এটাও না। রিয়াজের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আমার সিনেমার প্রস্তাব আসেনি বলেই হয়তো ছবি করা হয়নি। এটা আসলে পরিচালকদের বিষয়। তারাই ভালো বলতে পারেন, কোন চরিত্রে কাকে মানাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'অনেকে আমাকে দোষারোপ করেন যে, আমার কারণে নাকি অনেকে অনেক ছবিতে অভিনয় করতে পারেননি। এটা আসলে একদম ভুল। আমি কারও ছবি করতে না পারার জন্য দায়ী নই।'
এছাড়া নায়ক আমিন খান, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, ওমর সানি, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খান তাদের সঙ্গে শাবনূরের ছবিগুলো রোমান্টিক ড্রামায় ভরপুর। এ সব নায়কের সঙ্গেও শাবনূরের অনেক ব্যবসায়িক সফল সিনেমা আছে। শাবনূর অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'পাগল মানুষ'। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাহের খান। ছবিটি পরিচালনা শুরু করেন এম এম সরকার। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ছবিটির শুটিংয়ের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এরপর এম এম সরকারের সহকারী পরিচালক বদিউল আলম খোকন ছবিটির বাকি অংশের শুটিং শেষ করেছিলেন।