নতুন রূপে ফিরছেন পূর্ণিমা
প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ রাকিব
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। চলচ্চিত্রজগতে পথচলা শুরু হয়েছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত 'এ জীবন তোমার আমার' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে, তখন তিনি ক্লাস নাইনে পড়েন। এরপর অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে নায়ক রিয়াজের বিপরীতেই ২৫টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
পূর্ণিমার উলেস্নখযোগ্য সিনেমার মধ্যে-মনের মাঝে তুমি, মেঘের পরে মেঘ, সুভা, ধোঁকা, হৃদয়ের কথা, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না, মনের সাথে যুদ্ধ, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, মাস্তানের উপর মাস্তান, লাল দরিয়া, শিকারী, মেঘলা আকাশ, জামাই শ্বশুর, শাস্তি, তোমাকেই খুঁজছি, বিয়ের প্রস্তাব, পিতা মাতার আমানত, কে আমি, শুভ বিবাহ, চিরদিন আমি তোমার, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, টাকা ইত্যাদি।
এটা সময় শাবনূর, পপি, মৌসুমী, পূর্ণিমা প্রতিযোগিতা করে সিনেমায় কাজ করতেন। সবাই যার যার মতো সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। একের পর এক সিনেমায় কাজ করতেন। তাদের সময়টাতে চলচ্চিত্রের ছিল স্বর্ণযুগ। সিনেমা মুক্তি পেলেই হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত। এখন আর দেখা যায় না। আগের মতো এই গুণী শিল্পীরা অভিনয় নিয়ে ব্যস্তও নন। অনেকেই অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন। এখন আর আগের মতো গল্পনির্ভর সিনেমা তৈরি হয় না। সিনেমা হল সংখ্যাও কমে গেছে অনেক।
পূর্ণিমাকে দীর্ঘদিন সিনেমায় অভিনয়ে দেখা না গেলেও এবার নায়িকার ভক্তদের জন্য সুখবর হলো নতুন সিনেমা নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি। এবার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে পূর্ণিমার সিনেমা 'আহারে জীবন'। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ছটকু আহমেদ।
ঈদে সিনেমা মুক্তি নিয়ে পূর্ণিমা বলেন, 'অনেক দিন পর আমার সিনেমা ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। অবশ্যই ভালো লাগার খবর এটি। একসময় বছরে অনেকগুলো ছবি মুক্তি পেত। এখন সেটি আর নেই। অনেক দিন ধরেই নিয়মিত অভিনয় করছি না। এ কারণে সিনেমাও ছিল না। এবার ঈদে আমার একটা সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এটি আমার জন্য খুশির খবর। একজন শিল্পীর ছবি যখন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়, অবশ্যই সেটি শিল্পীর জন্য আনন্দের। আর সেটি যদি ঈদ উৎসবে হয়, তাহলে সে আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তেমনটিই লাগছে আমার। 'এই সিনেমাটি নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। কারণ ছবিটি গুণী নির্মাতা ছটকু আহমেদ নির্মাণ করেছেন। করোনাকালের কাহিনি নিয়ে ছবির গল্প। করোনাকালের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ছবিতে। ছবিতে আমার সহশিল্পী ফেরদৌস। সব মিলে ভালো একটি কাজ হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে বসে দর্শকরা একটা ভিন্ন, পরিচ্ছন্ন গল্পের সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন। তা ছাড়া ছটকু আহমেদের পরিচালনায় এটি আমার প্রথম কাজ। এ কারণে বাড়তি আগ্রহও কাজ করেছে।' 'আহারে জীবন' সিনেমায় পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। আরো দেখা যাবে সুচরিতা, জয় চৌধুরী, মৌমিতা মৌকে।
এছাড়া পূর্ণিমার হাতে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি সিনেমা। এর মধ্যে 'গাঙচিল' ছবির কাজ শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষে দিকে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে আসতে পারে। এছাড়া 'জ্যাম' ছবির শুটিংই শেষ হয়নি এখনো। ২০১৯ সাল থেকে প্রায় ৩০ ভাগ কাজ আটকে আছে ছবিটির।
উপস্থাপনায় নিয়মিত হলেও, চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ণিমা বলেন, উপস্থাপনা আর সিনেমা তো এক নয়। সিনেমা একটা বড় পরিসরের কাজ। দর্শকের পছন্দের একটা ব্যাপার থাকতে হয়। আমি তো নিয়মিত কাজ করতে চাই। কিন্তু সে ধরনের কাজ তো হাতে আসতে হবে। যেসব গল্প আসে, সেগুলোর অধিকাংশই আমার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চরিত্রের সঙ্গে আমাকে যাবে, সেটিও ভাবতে হবে- তেমন কাজ আসছে না। এলেও অনেক সময় পরিচালক পছন্দ হয় না। দেখা গেল, সিনেমা এসেছে, বাছবিচার না করেই দৌড়ে গিয়ে চুক্তি করে ফেললাম- ব্যাপার তা নয়। সিনেমা করতে হলে গল্প, চরিত্র সব দিক ঠিক রেখেই সিনেমা করতে হয়। নামেমাত্র সিনেমা করে কোনো লাভ নেই।
পূর্ণিমা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকেও কাজ করেছেন। ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তার ছোটগল্প 'ল্যাবরেটরি' অবলম্বনে মাহবুবা ইসলাম সুমির পরিচালনায় 'ল্যাবরেটরি' নাটকে সেজুতি চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া এখনো ভালোবাসি, নীলিমার প্রান্তে দাঁড়িয়ে, অমানিশা, প্রেম অথবা দুঃস্বপ্নের রাত দিন, লাভ অ্যান্ড কোং ইত্যাদি নাটকে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে এ নায়িকা ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আহমেদ ফাহাদ জামালকে ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলেন। ২০১৪ সালে কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই ফাহাদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় এ নায়িকার। বিচ্ছেদের পর থেকে তাদের একমাত্র সন্তান আরশিয়া উমাইজা উভয়ের কাছেই থাকেন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে পূর্ণিমার বিচ্ছেদের খবর গণমাধ্যমে আসেনি। তার আগেই দ্বিতীয় বিয়ের খবর প্রকাশ করেন 'মনের মাঝে তুমি'খ্যাত চিত্রনায়িকা। পূর্ণিমার স্বামীর নাম আশফাকুর রহমান রবিন। তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিপণন বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। লেখাপড়া করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।