অসময়েই ঝরে যাওয়া নায়িকারা
প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ্ রাকিব
আকাশে উজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল কত তারা ওঠে, কত তারা ঝরে যায়। এর মধ্যে আবার হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিয়ে হারিয়ে যায় ধ্রম্নবতারাও। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতের আকাশেও এমন কিছু তারা দেখা গিয়েছে, যারা দর্শক হৃদয়ে সহসা জেগে উঠেই আবার নিমেষেই হারিয়ে গেছেন। যাদের অনেকেই এখন বসবাস করছেন একেবারে লোকচক্ষুর অন্তরালে। নায়ক হলে হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো কর্মসূত্রে বাইরে দেখতে পাওয়া যায় নায়িকারা তো একেবারেই জনস্রোতের অন্তরালে হারিয়ে যান। অথচ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা তাদের জন্য ইতিবাচক হলে হয়তো এ সময়ে এসেও তারা নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করতে পারতেন। অন্তত পার্শ্বচরিত্র হলেও টিঁকে থাকতে পারতেন ইন্ডাস্ট্রিতে। অভিনয়ে নিয়মিত থাকতে পারার সুযোগ থাকলে ঢাকাই সিনেমাও থাকত হয়তো আরও উজ্জ্বল।
তাদের মধ্যেই একজন নায়িকা বিন্দিয়া। জি সরকারে 'জান' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম ছবিতেই তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। অল্প সময়ের ব্যবধানেই গুণী পরিচালকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। একের পর এক সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হচ্ছিলেনও এ নায়িকা। রীতিমতো ব্যস্ত নায়িকা হয়ে পড়েন। কিন্তু এই ব্যস্ততা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। হঠাৎই অনিয়মিত হয়ে পড়েন। মাঝে কিছু নাটকে দেখা মিললেও এখন পুরোদমে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বিন্দিয়া।
এ প্রজন্মের আরেক আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি। তার শেষ ছবি বদরুল আমিন পরিচালিত 'সত্যিকারের মানুষ- রিয়্যালম্যান'। ছবিতে হ্যাপির সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন নবাগত অভিনেতা কংকন। 'কিছু আশা কিছু ভালোবাসা' ছবির নায়িকা হ্যাপি দীর্ঘদিন ধরেই মিডিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছেন। একপর্যায়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই মামলা থেকে খুব একটা সুফল না পাওয়াতে মিডিয়া থেকে সরেই যান হ্যাপি। মাঝে ফিরেছিলেন একটি মিউজিক ভিডিও ও বিজ্ঞাপনে।
বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক সম্ভাবনাময় নায়িকা ছিলেন শিমলা। শিমলার পরিচয় এখনো 'ম্যাডাম ফুলি'। যিনি অভিষেক ছবিতেই 'ফুলি' এবং 'শিমলা' নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার'। পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের 'ফুলি' সিনেমায় শিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি এ নায়িকা। মাঝখানে আবারও চলচ্চিত্রে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন শিমলা। শোনা গিয়েছিল শাপলা মিডিয়ার দুইটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এ নায়িকা। কিন্তু সেই সিনেমাগুলো আজও শুটিংয়ের মুখ দেখেনি।
সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি জনপ্রিয় নায়িকা রত্না কবির। ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ফেরদৌসের বিপরীতে 'কেন ভালোবাসলাম' ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। একই বছর কাজী হায়াৎ পরিচালিত 'ইতিহাস' ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলেন। তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ৫০টির মতো। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই ধস নামে রত্নার ক্যারিয়ারে। সেই ধসেই হারিয়ে যান চলচ্চিত্রের সম্ভাবনাময় এ নায়িকা। এরই মধ্যে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নায়িকা রত্না কিন্তু সেভাবে সাড়া পাননি।
ঢাকাই চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে গেছেন নায়িকা একা। একসময় বাংলা চলচ্চিত্রে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন চিত্রনায়িকা একা। কাজী হায়াতের 'তেজী' এবং 'ধর'সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে প্রয়াত মান্নার বিপরীতে তাকে দেখা গেছে। সে সময় এ জুটি ছিল সুপারহিট। মান্নার মৃতু্যর পর একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু সেভাবে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। গত কয়েক বছর তিনি অভিনয় থেকে দূরে। তার দেখা মেলে না কোনো অনুষ্ঠানেও। তবে গত কয়েক বছর আগে ভিন্ন কারণে মিডিয়ায় আলোচনায় এসেছিলেন একা। গৃহকর্মী নির্যাতনের কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এ নায়িকাকে।
'ভন্ড' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল নায়িকা তামান্নার। চিত্রনায়ক রুবেলের বিপরীতে প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন তামান্না। এরপর তুমি আমার ভালোবাসা, হৃদয়ে লেখা নাম, চাই শুধু ভালোবাসা, কঠিন শাস্তি, আমার প্রতিজ্ঞা, সন্ত্রাসী বন্ধুসহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই নায়িকা। ২০১৩ সালে অভিনীত মঈন বিশ্বাস পরিচালিত পাগল তোর জন্য রে চলচ্চিত্রের পর তাকে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি। চলচ্চিত্রে বিদায় জানিয়ে প্রবাসে থাকেন এ নায়িকা। সেখানেই বিয়ে করে সংসার করছেন।
'রুখে দাঁড়াও' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ সুন্দরী নায়িকা সাহারার। একসময় অশ্লীলতার তকমা গায়ে জড়িয়েছিলেন। মাঝে ভালো কিছু ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিছুটা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে নিয়েছিলেন। শাকিব খানের বিপরীতে 'প্রিয়া আমার প্রিয়া' চলচ্চিত্র বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। ঢালিউডে শিল্পী সংকট উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে এগোচ্ছিলেন এই নায়িকা। কিন্তু এক চিত্রপ্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যান তিনি। বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারী। জানা যায় এ নায়িকা সংসারের পাশাপাশি নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। আসেন না চলচ্চিত্রের কোনো অনুষ্ঠানেও।
চলচ্চিত্রের আরেকজন গস্ন্যামারগার্ল কেয়া। সিনেমায় এসে বেশ আলোচনা তৈরি করেছিলেন। কালেভদ্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। গত ঈদে টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে সেটাও আলোচিত কিছু নয়। কেয়াও পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি। মায়ের মতো নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারেননি এ নায়িকা। 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'হাছন রাজা' ও 'চাঁদের আলো'-সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু একটা সময়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন। এরপর পার্শ্বচরিত্রে কিছু সিনেমায় অভিনয় করলেও নিজের খ্যাতিটা আর তুঙ্গে তুলতে পারেননি এই অভিনেত্রী।
মনে আছে নায়িকা শিল্পীর কথা, যার অভিনীত গান মানুষের মুখে মুখে ছিল। ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছেন এ নায়িকা। তার পুরো নাম আঞ্জুমান আরা শিল্পী। মোহাম্মদ হোসেন প্রযোজিত রানা নাসের পরিচালিত 'প্রিয়জন' চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিলেই খুব সহজেই দর্শক শিল্পীকে মনে করতে পারেন। কারণ তিনি প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের 'প্রেমের নাম বেদনা' এবং দেওয়ান নজরুলের 'সুজন বন্ধু'। বহু নাটকেও অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। বর্তমানে অভিনয় ছেড়ে সংসার এবং দুই সন্তান ছেলে সানাদ ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলিনাকে নিয়েই ব্যস্ত তিনি।
এছাড়া আরও অনেকেই নাম লিখিয়েছিলেন রুপালি পর্দায়। কিন্তু থিতু না হওয়ার আগেই ঝরা বকুলের মতো ঝরে গেছেন সবার অগোচরেই। ইরিন জামান, তামান্না, চাঁদনী, আয়না, সুমনা জনাসহ আরও অনেকে।