নিপুণের হাতে হাত রাখলেন মাহমুদ কলি
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ্ রাকিব
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নিজ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী খুঁজে পেলেন নিপুণ আক্তার। এবার তিনি মাহমুদ কলিকে নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন মিশা-ডিপজলের বিপক্ষে।
গতকাল সন্ধ্যায় এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী নিজেই সভাপতির নাম ঘোষণা করেন। এ সময় নিপুণের পাশে ছিলেন অভিনেতা মাহমুদ কলি। এর আগে মাহমুদ কলি শিল্পী সমিতির দুই দফা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন পর আবারও সমিতির নির্বাচনে দেখা যাবে তাকে। বরেণ্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন নিপুণ। হন্যে হয়ে সভাপতি খুঁজে বেড়ান তিনি। কড়া নাড়েন দ্বাওে দ্বারে। সেই তালিকায় ছিল শাকিব খান, ফেরদৗস আহমেদ, অনন্ত জলিল ও আহমেদ শরীফ। তারা সবাই নানা অজুহাত দেখিয়ে নিপুণকে আশাহত করেন। এ অবস্থায় খুবই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যান নিপুণ। এ অবস্থায় শেষ ভরসা হিসেবে হাত বাড়ালেন একসময়ের পোশাকি সিনেমার সুপারস্টার মাহমুদ কলির দিকে। মাহমুদ কলিও নিপুণের সেই বাড়িয়ে দেওয়া হাত দেখে নিজের হাতও বাড়িয়ে দিলেন নিপুণের হাতের দিকে। করমর্দন করলেন। অর্থাৎ এহেন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে নিপুণের পাশে দাঁড়ালেন মাহমুদ কলি। এদিকে জনপ্রিয় দুই খল অভিনেতা মিশা সওদাগর-ডিপজল মিলে একটি প্যানেল থেকে নির্বাচন করবেন।
এ বিষয়ে গতবারের শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ বলেন, এবার তাদের পরিষদের পুরনো শিল্পীদের পাশাপাশি নতুন শিল্পীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং প্রকৃত শিল্পীদের নিয়েই শিল্পী পরিষদ গঠন করা হবে। আমি আগেই চেয়েছিলাম যে এমন কাউকে সভাপতি পদে আনব, যারা এই সংগঠনে আগে কাজ করেছে। যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে, তাদের নিয়ে এবার কাজ করব। সেই চিন্তা থেকেই মাহমুদ কলি সাহেবকে সভাপতি পদে আনা। তিনি আরও দুইবার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর সবাই বলাবলি করছিল যে আমি সভাপতি খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু আমি এবার সভাপতি পদে যার নাম ঘোষণা করেছি তাতে মনে হয় শিল্পী সমিতির জন্য নতুন চমক দেখাতে পেরেছি। কতটা যোগ্য সে কথায় আমি যেতে চাই না, তবে আমার পাশে যে একজন যোগ্য মানুষ দাঁড় করাতে পেরেছি তাতেই আমি তৃপ্ত। আমার বর্তমান বন্ধুর পথ চলাটাও মসৃণ ও সুন্দর হবে। কারণ তিনি (মাহমুদ কলি) আমাকে সঠিক গাইডলাইন দিতে পারবেন। মাহমুদ কলি সাহেবের সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে গতবারের চেয়ে এবার শিল্পী সমিতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ওনার কাছ থেকে আমি শতভাগ সাপোর্ট পাব।
গতবার আপনার প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিল্পীরা নানা অভিযোগ দিয়ে আপনার প্যানেল ছেড়ে অন্য প্যানেলে নির্বাচন করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নায়িকা নিপুণ বলেন, খল অভিনেতা নানা শাহ্ তো আমার প্যানেলের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন না। আমার প্যানেল থেকে নির্বাচন করে পাস করতে পারেননি। দুই বছর তো তিনি আমার প্যানেলে ছিলেন না, তাহলে কী করে বলেন যে তিনি আমার হাত ছেড়ে চলে গেছেন। এবার নায়িকা শাহনূরের কথা বলি। শাহনূর অভিযোগ তুলেছে তাকে কোনো প্রোগ্রামে দাওয়াত দিইনি। আমি কেন দাওয়াত দেব, দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব তো সাংগঠনিক সম্পাদিকার। সুতরাং শাহনূর তো নিজেই আমাকে দাওয়াত দেবে। এবার ছোট্ট একটি উদাহরণ দিই, কিছুদিন আগে সোহেল রানা ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। আমি কিন্তু জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এই যে সাংগঠনিক সম্পাদিকা তার কি দায়িত্ব ছিল না আমাকে ফোন করে বলা যে, আমি অনুষ্ঠানে যাব কিনা? কিন্তু শাহনূর ফোন করে আমাকে কিছুই বলেনি।
অভিনেত্রীর কাছে জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শিল্পী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়। এটা আমার একক সিদ্ধান্ত নয়।
আশির দশকের ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মাহমুদ কলির কাছে শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি সিনেমা করতে আসিনি। আমি এসেছি শিল্পী ও অন্যদের মাঝে সেতুবন্ধন করতে। আমি শিল্পী সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। আমি এসেছি শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করতে এবং সর্বোপরি চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে কাজ করতে।
বিগত দিনে শিল্পী সমিতির অনেক কিছু সমস্যা দেখেছি, শুনেছি কিন্তু আমি মনে করি এই সমস্যার মধ্যেও নিপুণ আক্তার বলিষ্ঠচিত্তে শিল্পীদের স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেছেন। তাই আমি মনে করলাম এই মুহূর্তে আমার প্রয়োজন আছে। সেটা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জন্য, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য। আমি আমার দক্ষতা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিপুণ আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে এবং পুরো কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাব। শিল্পীদের জন্য এবং শিল্পের জন্য কাজ করব এই বিশ্বাসে তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সম্মতি দিয়েছি।
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী দুইবার সমিতির নির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর তার সঙ্গে বিপক্ষে নির্বাচন করছেন এ বিষয়টা কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে মাহমুদ কলি বলেন, মিশা সওদাগর আমার ছোট ভাই। আমি যখন সভাপতি ছিলাম, সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, মিশা সব সময় আমার পাশে থেকে শিল্পের জন্য, শিল্পীদের জন্য কাজ করেছে। মিশা ভালো মানুষ কিন্তু নির্বাচন নির্বাচনের মতো হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, প্রত্যেক সদস্য যেন বিচার-বিবেচনা করে ভোট দেয় সেটিই হবে বড় কথা। মিশাকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি যদি নেতৃত্বের দায়িত্ব পাই, তাহলে সব শিল্পীকে নিয়ে সেতুবন্ধন করার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোকে একত্র করে প্রথমত শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্যই এগিয়ে যেতে হবে, এছাড়া শিল্পীদের আর কোনো বিকল্প নেই।
মাহমুদ কলি ছিলেন আশি ও নব্বইয়ের দশকের নায়ক। দীর্ঘদিন তিনি রুপালি পর্দায় দর্শক মাতিয়েছেন। তার পারিবারিক নাম মাহমুদুর রহমান উসমানী। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান বুলির ছোট ভাই। মূলত ভাইয়ের হাত ধরেই তিনি চলচ্চিত্রে পা রাখেন। এরপর দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়ের ফ্যান্টাসি বা পোশাকি সিনেমার যুবরাজ ওয়াসিমের। মূলত ফ্যান্টাসি বা পোশাকি সিনেমার বাজার হারানোর পর থেকেই চলচ্চিত্রে দু'জনের ক্যারিয়ারও অস্তনমিত হয়।
১৯৯৪ সালে নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলি অভিনীত সিনেমা 'মহা গ্যাঞ্জাম' সর্বশেষ মুক্তি পায়। তবে ২০০২ সালে তাকে আবারও দেখা গিয়েছিল 'আবার একটি যুদ্ধ' চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি উকিল চরিত্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।
মাহমুদ কলির প্রথম চলচ্চিত্র 'মাস্তান'। তিনি এই চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে অশোক ঘোষ নির্মিত 'তুফান' চলচ্চিত্রে মূল নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। মাহমুদ কলি ৬১টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ২টি সিনেমা মুক্তির মুখ দেখেনি। এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য 'লাভ ইন সিঙ্গাপুর', 'গোলমাল', 'নেপালি মেয়ে', 'শ্বশুরবাড়ি', 'সুপারস্টার', 'গ্রেফতার', 'খামোশ', 'মহান', 'দেশ বিদেশ', 'মা বাপ' ইত্যাদি।